জলের জন্য লাইন। মিশনকম্পাউন্ডে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
পানীয় জলের সঙ্কটে নাজেহাল বোলপুর। শহরে পানীয় জলের একমাত্র উৎস ইন্দো-জার্মান প্রকল্প। কিন্তু বাড়তে থাকা জনসংখ্যার অনুপাতে পানীয় জলের জোগান নিয়মিত দিতে পারছে না প্রকল্পটি।
ঘন জনবসতি এবং এলাকা বৃদ্ধির কারণে ওয়ার্ডের সংখ্যা বাড়ানো হলেও পানীয় জলের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। সময়ে জল না আসা বা এলেও জলের গতি খুবই কম থাকার কারণে বাসিন্দাদের পুর-পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। ইন্দো- জার্মান জল প্রকল্প থেকে দিনে ৩ বার জল এলেও জলের গতি এতটাই খারাপ যে এক বালতি জল ভরতেই প্রায় ১০ মিনিট লেগে যায়। বাড়ির কলেও জলের গতি একই রকম। প্রায় ৮ হাজার বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে আরও শ’পাঁচেক আবেদন জমা পড়েছে।
অবস্থা সবচেয়ে খারাপ ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। স্কুলবাগান, জামবুনি, গুরুপল্লি (দক্ষিণ ও পশ্চিম), ইন্দিরাপল্লি, মুসলিমপাড়া, মিশন কম্পাউন্ড, রেললাইন ইত্যাদি এলাকায় জনসংখ্যার চাপ সব থেকে বেশি হওয়ায় জল সঙ্কট ভয়াবহ আকার নিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল দাস, মহম্মদ মহসিন, তপন কুণ্ডু, তুলসি ঘোষ, সমর দাসদের অভিযোগ, “তৃণমূল পরিচালিত বোলপুর পুরসভার পুরপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে পুরপ্রধান, সকলকে একাধিকবার সমস্যার কথা জানানো হলেও কোন সুরাহা হয়নি।” সমস্যাটি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেসের বোলপুর ব্লক সভাপতি মহম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “স্কুলবাগান, গুরুপল্লি দক্ষিণ ও পশ্চিম, ভুবনডাঙা, মুসলিমপাড়া, উত্তরপাড়া, মনসাতলা, মিশন কম্পাউন্ড-সহ পুরসভার বর্ধিত এলাকার বাসিন্দাদের জলকষ্টের কথা পুরপ্রধানকে অনেকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
জল সঙ্কট হওয়ার মূল কারণ জলের জোগান অনিয়মিত। তার সঙ্গে বেড়েছে জনসংখ্যাও। কংগ্রেসের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা মিশন কম্পাউন্ডের বাসিন্দা তপন সাহা বলেন, “প্রায় ৬৬ হাজার জনসংখ্যার জন্য ওই জার্মান জল প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ন’য়ের দশকে।” কিন্তু বর্তমানে পুরএলাকায় জনসংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ। যদিও জল সঙ্কটের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুরপ্রধান তৃণমূলের সুশান্ত ভকত। তাঁর দাবি, “পানীয় জলের সঙ্কট নেই। কিছু এলাকায় জল সরবারহের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম।” জনসংখ্যার বাড়তি চাপের কথা মাথাই রেখে ৩৮ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে অজয় ও কোপাই নদীতে দু’টি জল প্রকল্প এবং ৫টি রিজার্ভার তৈরির কাজ দ্রুত শুরু হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রকল্প দু’টি তৈরি এবং ইন্দো-জার্মান জল প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু করার জন্য জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে সুশান্তবাবু জানিয়েছেন।