ঘরের ভিতরে জোড়া দেহ

ঘরের ভিতর থেকে মিলল বন দফতরের এক অস্থায়ী কর্মী এবং পড়শি মহিলার দেহ। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ বান্দোয়ানের শিরিষগোড়া গ্রামে রাস্তার ধারে একটি ঘর থেকে ফকির হাঁসদা (৫২) এবং চাঁদমণি মুর্মু (৪২) নামে ওই দু’জনের দেহ উদ্ধার করে। শিরিষগোড়া গ্রাম বান্দোয়ান-কুইলাপাল পিচ রাস্তার ধারে একতলা ছোট পাকা বাড়ি চাঁদমণির। স্থানীয় সূত্রের খবর, এই মহিলা চার বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। এক ছেলে নিয়ে থাকতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:১৭
Share:

ঘরের ভিতর থেকে মিলল বন দফতরের এক অস্থায়ী কর্মী এবং পড়শি মহিলার দেহ। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ বান্দোয়ানের শিরিষগোড়া গ্রামে রাস্তার ধারে একটি ঘর থেকে ফকির হাঁসদা (৫২) এবং চাঁদমণি মুর্মু (৪২) নামে ওই দু’জনের দেহ উদ্ধার করে।

Advertisement

শিরিষগোড়া গ্রাম বান্দোয়ান-কুইলাপাল পিচ রাস্তার ধারে একতলা ছোট পাকা বাড়ি চাঁদমণির। স্থানীয় সূত্রের খবর, এই মহিলা চার বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। এক ছেলে নিয়ে থাকতেন। লাগোয়া জমিতে সামান্য চাষবাস করতেন। হাটে সব্জি ও কাঠ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। ফকিরবাবু ছিলেন চাঁদমণির পড়শি। সোমবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি ফকিরবাবু। বুধবার থেকেই চাঁদমণির বাড়ির ভিতর থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। তাতেই সন্দেহ হয় গ্রামবাসীর। বুধবার গভীর রাতে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার পুলিশ এসে দেখে চাঁদমণির বাড়ির সদর দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। বাড়ির পিছনের খোলা দরজা দিয়ে পুলিশ ভিতরে ঢোকে। কড়িকাঠে ফ্যান লাগানোর আংটার সাথে ফকিরবাবুর ফাঁস লাগানো দেহ ঝুলছিল। চাঁদমণির দেহ ছিল খাটিয়ায়।

পুলিশ জানিয়েছে, চাঁদমণির হাত, মুখ ও বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মেঝেয় রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছিল। দেওয়ালেও রক্তের ছিটে। ফকিরবাবুর শরীরে আঘাতের চিহ্ন না মিললেও দুই হাতের কব্জিতে লাল দাগ রয়েছে। ঘরের ভিতরে পুলিশ রক্তমাখা একটি লাঠি উদ্ধার করেছে। দুপুরে পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, “পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে মহিলাকে খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পুরুষের দেহ ঝোলানো অবস্থায় মিলেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বোঝা সম্ভব নয়, কী ভাবে তার মৃত্যু হয়েছে।” প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে যুগলের মৃত্যু হয়েছে। তাই এত দুর্গন্ধ ছড়িয়েছিল এলাকায়। এই ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি।”

Advertisement

চাঁদমণির বাড়ি থেকে মেরেকেটে ৫০ মিটার দূরেই ফকিরবাবুর বাড়ি। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বাড়িটি তালাবন্ধ রয়েছে। বাইরে পুলিশ মোতায়েন। পুলিশ জানিয়েছে, চাঁদমণির ছেলে বাঁকুড়ায় কলেজে পড়েন। তাঁকে খবর দেওয়া হয়েছে। ফকিরবাবুর বাড়িতে গেলে তাঁর স্ত্রী সবিতা হাঁসদা বলেন, “আমার স্বামী বন দফতরে অস্থায়ী কর্মীর কাজ করতেন। মাঝেমধ্যেই রাতে ফিরতেন না। কখনও কখনও তিন-চার দিন পরেও বাড়ি ফিরতেন। জানতে চাইলে বলতেন, দফতরের কাজে দেরি হতেই পারে। বৃহস্পতিবার সকালে পড়শিরা এসে জানায়, চাঁদমণির ঘরে স্বামীর দেহ মিলেছে।” ফকিরবাবুর ছোট ছেলে, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মনোজ বলে, “সোমবার বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। তার পর কোথায় ছিল জানি না।” ফকিরবাবুর তিন ছেলে এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। সবিতাদেবীর দাবি, চাঁদমণির সঙ্গে তাঁর স্বামীর সম্পর্ক ছিল। তাঁর কথায়, “রোজগারের টাকাও আমার স্বামী বাড়িতে দিতেন না। এই নিয়ে অনেক বার অশান্তি হয়েছে।”

বান্দোয়ানে বন দফতরের যমুনা রেঞ্জের আধিকারিক চিন্তাহরণ সন্নিগ্রাহী বলেন, “ফকির মাঝেমধ্যে অস্থায়ী কর্মীর কাজ করতেন। কিন্তু, প্রায় একমাস তিনি আসেনি।” শিরিষগোড়া গ্রামেই চাঁদমণির বাপের বাড়ি। তাঁর বড়দা ক্ষীরোদ সরেন বলেন, “বুধবার চাঁদমণি হাটে যায়নি। বিকেলে হাট থেকে সবাই ফেরার পর ওর খোঁজ নিতে গিয়ে শুনলাম ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ রয়েছে। এ দিন সকালে শুনি এই কাণ্ড।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement