গোলমালে বন্ধ বরাদ্দ, মজুরি চেয়ে পঞ্চায়েতে তালা রাইপুরে

তিন মাস আগে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে কাজ করেছেন শ্রমিকেরা। তারপর এতদিন পেরিয়ে গেলেও মজুরি মেলেনি। বারবার পঞ্চায়েতে এসেও খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ফের মজুরি চাইতে গিয়ে টাকা না পেয়ে ক্ষোভে পঞ্চায়েতের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিলেন শ্রমিকেরা। অফিসের মধ্যে কিছুক্ষণ তালাবন্দি হলে থাকলেন পঞ্চায়েতের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার রাইপুর ব্লকের ফুলকুসমা গ্রাম পঞ্চায়েতে ঘটনা। পরে বারিকুল থানার ওসি সলিল পাল পঞ্চায়েতে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে তালা খোলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাইপুর শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০০:২৯
Share:

তিন মাস আগে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে কাজ করেছেন শ্রমিকেরা। তারপর এতদিন পেরিয়ে গেলেও মজুরি মেলেনি। বারবার পঞ্চায়েতে এসেও খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ফের মজুরি চাইতে গিয়ে টাকা না পেয়ে ক্ষোভে পঞ্চায়েতের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিলেন শ্রমিকেরা। অফিসের মধ্যে কিছুক্ষণ তালাবন্দি হলে থাকলেন পঞ্চায়েতের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার রাইপুর ব্লকের ফুলকুসমা গ্রাম পঞ্চায়েতে ঘটনা। পরে বারিকুল থানার ওসি সলিল পাল পঞ্চায়েতে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে তালা খোলেন।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, রাইপুর ব্লকের ফুলকুসমা পঞ্চায়েতে ১০০ দিন প্রকল্পে রাজারবাঁধের আহারপুকুর সংস্কারের কাজ হয়েছিল। ওই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬ লক্ষ ২০ হাজার ৫০৪ টাকা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই পুকুর সংস্কারের জন্য মাটি কাটার কাজ শুরু হয়। দু’টি ধাপে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেছেন। কাজ শেষ হয় গত ২০ মার্চ। শ্রমিকদের মজুরি বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ৫ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫৯৮ টাকা। কিন্তু কাজ করার পরে কোনও শ্রমিকই তাঁদের প্রাপ্য মজুরি পাননি বলে অভিযোগ।

ওই প্রকল্পের শ্রমিকদের অধিকাংশই স্থানীয় নামোশোল মণ্ডলডিহা গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে মজুরি না পেয়ে এলাকায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। এ দিন পঞ্চায়েতে মজুরি চাইতে গিয়ে তা না পেয়ে শ্রমিকেরা কর্মীদের অফিসের মধ্যেই আটকের রেখে প্রথমে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পঞ্চায়েতের দরজায় তারা তালা ঝুলিয়ে দেন। ওই প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করা নামোশোল মণ্ডলডিহা গ্রামের বাসিন্দা রবি লোহার, ভীম লোহার, অনিল আহির, শুকদেব বাগালদের মতো অনেক শ্রমিক বলেন, “কতদিন আগে ওই কাজ হয়েছে। এতদিনেও আমরা কেউ মজুরি পেলাম না। মজুরি না পেলে আমরা খাব কী?” তাঁদের অভিযোগ, প্রাপ্য মজুরির দাবিতে গত কয়েকমাস ধরে বারবার পঞ্চায়েতে তাঁরা আসছেন। কিন্তু মজুরি আর পাচ্ছেন না। বিডিও-ও তাঁদের অবস্থা বুঝে কিছুই করছেন না বলে অভিযোগ।

Advertisement

১০০ দিনের প্রকল্পে স্থানীয় একটি ক্লাবের মাঠ সমতলীকরণের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে ফুলকুসমা পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান গোবিন্দচন্দ্র মুর্মুর বিরুদ্ধে মাস দুয়েক আগেই এফআইআর করেছেন রাইপুরের বিডিও। ওই ঘটনায় পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক, গ্রাম রোজগার সেবক ও সুপারভাইজরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। প্রধানকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তারপর থেকেই ফুলকুসমা পঞ্চায়েতে ডামাডোল চলছে। ১০০ দিনের প্রকল্পে সব টাকাই আটকে দিয়েছে প্রশাসন। ফুলকুসমা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তছা স্থানীয় তৃণমূল নেতা চন্দন চট্টোপাধ্যায় সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। এ জন্য তিনি দুষেছেন স্থানীয় ব্লক প্রশাসনকেই। চন্দনবাবুর অভিযোগ, “পঞ্চায়েতে ১০০ দিন কাজের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। তারপরেও বরাদ্দ টাকা আসেনি। ফলে শ্রমিকদের মজুরিও আটকে গিয়েছে। মজুরি না পেয়ে এলাকায় শ্রমিকদের মধ্যে তাই অসন্তোষ বাড়ছে। কিন্তু বিডিও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।” তাঁর অভিযোগ, বিডিও শুধু প্রশাসনিক বৈঠকে ব্যস্ত বলে সব কিছু এড়িয়ে যাচ্ছেন। মাঝখান থেকে কেন টাকা আসছে না তার কৈফিয়ত দিতে দিতে জেরবার হয়ে যাচ্ছে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ।

তাঁর দাবি, ফুলকুসমা পঞ্চায়েতে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা আটকে রয়েছে। যার অধিকাংশটাই গরীব শ্রমিকদের মজুরির টাকা। রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস অবশ্য দাবি করেন, “ফুলকুসমা পঞ্চায়েতে প্রধান নেই, উপপ্রধানকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। তিনি এখনও সেই দায়িত্ব নেননি। এই অবস্থায় জেলা থেকেই তাই টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্লক প্রশাসনের কোনও ত্রুটি নেই।” বিডিও জানান, উপপ্রধান প্রধানের দায়িত্ব নিলেই সব বকেয়া টাকা চলে আসবে। সমস্যাও মিটে যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement