কর্মী-সমর্থকদের পাশে পেলেন স্বপনকান্তি

তৃণমূল পরিচালিত সিউড়ি পুরসভার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চেয়ে স্বপনকান্তি ঘোষ দলের রোষানলে পড়েছেন ঠিকই। কিন্তু বিরোধী দলগুলি স্বপনবাবুর পদক্ষেপকে হাতিয়ার করে আসন্ন পুরভোটে লড়তে চলেছে সেটা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। তাঁদেরও নৈতিক সমর্থন রয়েছে সিউড়ি শহরজুড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৮
Share:

তৃণমূল পরিচালিত সিউড়ি পুরসভার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চেয়ে স্বপনকান্তি ঘোষ দলের রোষানলে পড়েছেন ঠিকই। কিন্তু বিরোধী দলগুলি স্বপনবাবুর পদক্ষেপকে হাতিয়ার করে আসন্ন পুরভোটে লড়তে চলেছে সেটা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে। তাঁদেরও নৈতিক সমর্থন রয়েছে সিউড়ি শহরজুড়ে। বেশ কিছু পোস্টার সে কথা জানান দিয়েছেন শহরবাসীও। যদিও তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, পোস্টারগুলি এই বিধায়কের লোকেরই দিয়েছে। রবিবার স্বপনবাবু পোস্টার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, “পোস্টার কে বা করা দিয়েছে এই নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাতে রাজি নই। বর্তমানে আমার কাছে একটাই লক্ষ্য, পুরসভার টাকা নয়-ছয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করানো। তা না হলে মানুষের কাছে আমি ছোট হয়ে যাব।’

Advertisement

পুরসভার বিরুদ্ধে স্বপনবাবুর অবস্থান যে উদ্যেশ্য নিয়েই হোক আড়ালে বা প্রকাশ্যে অনেকের সমর্থন পাচ্ছে সেটা নিয়ে দ্বিমত নেই। রবিবার সিউড়িতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে নিজের কিছু দাবি জানাতে চাওয়ার সময়ও সেই সমর্থনের কিছুটা আঁচ পাওয়া গেল। জনা পঞ্চাশেক কর্মী-সমর্থক এ দিনও স্বপনবাবুর সঙ্গে ছিলেন। তাঁকে মালা পরিয়ে বরণ করে নেওয়াই হোক বা আলুন্দার দুই মহিলা সমর্থক মাথায় হাত দিয়ে বিধয়ককে আশীর্বাদ করার মধ্যেই কোথাও ‘তুমি এগিয়ে যাও আমরা তোমার সঙ্গে আছি-র বার্তা।’

আসন্ন পুরভোটের আগে স্বপন ঘোষের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় তৃণমূল অস্বস্তিতে সেটা নতুন কথা নয় এবং তাঁর অভিযোগের মোকাবিলা কী ভাবে করতে হবে তার নকশা তৈরি চলছে। তৃণমূলের শহর সভাপতি অভিজিৎ মজুমদার জানিয়েছিলেন, দিন কয়েকের মধ্যে বিধায়কের দুর্নীতি নিয়ে পুস্তিকা ছাপিয়ে পাল্টা প্রচারে নামবেন তাঁরা। ঠিক কবে থেকে সেই প্রচার চলবে সেটা সময় বলবে। তবে স্বপনকান্তির অস্বস্তি ঝেড়ে কী ভাবে পুরভোটে নামা যায় তা নিয়ে এ দিন বিকেলেও একটি ম্যারাথন বৈঠক হয়েছে সিউড়ি তৃণমূল ভবনে।

Advertisement

এমনিতেই প্রথম থেকেই জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কাছের লোক বলে পরিচিত ছিলেন না স্বপনবাবু। একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বা আড়ালে একাধিকবার মুখ খুলেছেন। লোকসভা নির্বাচন সময় (একসময় বিধায়কের ঘনিষ্ট শতাব্দী রায় অনুব্রত শিবিরে নাম লেখানোয়) লোক দেখানো সহবস্থান হলেও দূরত্ব কখনওই ঘোচেনি। সিউড়ি পুরসভায় পছন্দের পুরপ্রধান বা পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে মুখ খুলে জেলাসভাপতি অনুব্রতর সঙ্গে বিধায়ক স্বপনকান্তির দূরত্ব আরও বেড়েছে। অন্য দিকে, সিউড়ি পুরসভায় এমন বেশ কয়েকজন তৃণমূল কাউন্সিলর রয়েছেন, তাঁরা আবার স্বপনকান্তির লোক বলে পরিচিত। ফলে আসন্ন পুরভোটে লড়াইটা মোটেই সুখকর হওয়ার কথা নয় তৃণমূলের পক্ষে, মত শহরবাসীর। তৃণমূল সূত্রের খবর, একদিকে গৃহ কোন্দল সঙ্গে দলীয় বিধায়কের তোলা অভিযোগকে হাতিয়ার করে বিরোধী দলের প্রচারের সামনে কী কৌশল নেওয়া যায় সেটাই সব চেয়ে বড় ভাবনা তৃণমূল শিবিরে।

পুরসভার বিরুদ্ধে বিধায়কের অভিযোগটা কী ছিল?

জল এবং বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদানের প্রায় ১০ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা সিউড়ি পুরসভা থেকে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে দলের হাতে থাকা সিউড়ি পুরসভার নানা ‘দুর্নীতি’র খতিয়ান দিয়ে জানিয়েছিলেন স্বপন। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখার আগে দলীয় স্তরে কেলেঙ্কারির কথা জানিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি মত স্বপনের। তৃণমূল সূত্রের খবর, চিঠিতে স্বপনবাবু জানিয়েছেন, গরমিলের কথা আঁচ করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (সুডা) কাছে অন্তত ৫টি চিঠি লেখেন। একটিরও জবাব পাননি। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে স্বপনবাবু দাবি করেছিলেন, পুরসভার দুর্নীতির চোটেই লোকসভা ভোটে সিউড়ি শহরের ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টিতে বিজেপি-র থেকে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল।

তৃণমূল শহর সভাপতি অভিজিৎ মজুমদার বলেছিলেন, “জলপ্রকল্প নিয়ে আদতেই কোনও দুর্নীতি হয়নি। টাকাটা অন্য থাতে খরচ হয়েছে। তা ছাড়া তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড আসার আগে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বোর্ডের দেখভালের দায়িত্বে তখন ছিলেন তৎকালিন কংগ্রেস নেতা স্বপনবাবুই। রাজ্যে ১৭টি পুরসভা ওই প্রকল্প পেয়েছিল শুধুমাত্র সিউড়ি ছাড়া সবকটি পুরসভায় জলপ্রকল্পের কাজ ২০০৯ সালের মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তৎকালীন কংগ্রেস পুরপ্রধান ছিলেন তপন শুকুল (যিনি বর্তমানে সিউড়ি পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর)। তা হলে সেই সময়ের মধ্যেই কেন শেষ করাতে পারলেন না স্বপনবাবু।” তিনি আরও বলেন, “তপন শুকুল পুরপ্রধান থাকাকালীন কত টাকা পেয়ে কত টাকার কাজ হয়েছে ওই প্রকল্পে এবং বর্তমান পুরপ্রধান কত টাকা পেয়ে কত টাকার কাজ করেছেন এই কথা লিখিত ভাবে দিলেই উত্তরটা পাওয়া হয়ে যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement