কলাভবনের ভিন্-রাজ্যের ছাত্রীর নির্যাতনের ঘটনায় এ বার রাজ্য মহিলা কমিশনের সঙ্গে সংঘাতের পথে গেল বিশ্বভারতী। বুধবার মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় বিশ্বভারতীতে পরপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অসহযোগিতার অভিযোগ করে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লেখেন। তারই প্রেক্ষিতে শুক্রবার বিশাখা কমিটির চেয়ারপার্সন মৌসুমী ভট্টাচার্য প্রেস-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দাবি করেন, অসত্য অভিযোগ করে তাঁর ‘মানহানি’ করার জন্য মহিলা কমিশনকে ক্ষমা চাইতে হবে। ফেসবুক পোস্টে কমিশনের চিঠির প্রতিলিপি দেখে মৌসুমী দেবীর অভিযোগ, সুনন্দাদেবী ঘটনার বিষয়ে না জেনেই অভিযোগ করেছেন। তিনি কলাভবনের ছাত্রীর অভিযোগ নিয়ে কিছুই জানতে চাননি। তাঁর দাবি, আইনত বিশাখা কমিটি মহিলা কমিশনকে তথ্য দিতে বাধ্য নয়।
সুনন্দা দেবীর দাবি, “মূল ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতে ওঁর (মৌসুমীদেবীর) এই চেষ্টা। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যা অভিযোগ করেছি, তা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে করেছি।” মৌসুমীদেবী তাঁর বিজ্ঞপ্তিতে জানান, তিনিও রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখছেন।
এই চাপান-উতোরের মধ্যেই আজ, শনিবার, বিশ্বভারতীতে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি।’ শুক্রবার বোলপুরের এসিজেএম সঙ্ঘমিত্রা পোদ্দার ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ধৃত তিন ছাত্রের সঙ্গে ইউজিসির কমিটির প্রতিনিধিদের দেড় ঘণ্টার জন্য কথা বলার অনুমতি দিয়েছেন। পুলিশি হেফাজতের আবেদন নামঞ্জুর করে ১২ অগস্ট পর্যন্ত ধৃতদের জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন তিনি। ধৃতদের জামিনের আবেদনও নাকচ করে দেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, নির্যাতিতা সুস্থ হলে ধৃতদের ফের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে। তাঁর সামনেই অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, এখন ওই তিন ছাত্রের ফোনের ‘কল-লিস্ট’ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আজ এই মামলার তদন্তকারী অফিসার বদল হয়েছে। শান্তিনিকেতন তদন্তকেন্দ্রের আইসি অশোক সিংহ মহাপাত্রর বদলে তদন্তভার সিউড়ি মহিলা থানার আইসি নন্দিতা দাসকে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ছাত্রীর সঙ্গে দেখা করেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় ও সদস্য শিখা আদিত্য। এ দিন বর্ধমান মেডিক্যালের সুপারের সঙ্গে বৈঠক করে ছাত্রীটির শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন সুনন্দাদেবীরা। পরে তাঁরা বর্ধমান মেডিক্যালের কেবিনে ভর্তি ছাত্রী ও তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সুনন্দাদেবী সাংবাদিকদের বলেন, “আজ শিক্ষক দিবস। এমন দিনে এক ছাত্রী নির্যাতিতা হয়ে হাসপাতালে শুয়ে আছেন দেখে খুবই খারাপ লাগছে।” বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানানো হয়েছে, ছাত্রীটির শারীরিক অবস্থা ভাল। তবে তিনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।
এ দিন দোষীদের শাস্তির দাবিতে নতুন করে পোস্টার পড়েছে বিশ্বভারতীতে। বিকেলে ক্যাম্পাসে কয়েকশো পড়ুয়া একটি প্রতিবাদ মিছিল করেন। সেখানে নির্যাতিতাকে সুবিচার দেওয়ার দাবি ওঠে। এ দিনই ওই ছাত্রীর জন্মদিন ছিল। কলাভবন চত্বরে কালোবাড়ির সামনে মিছিল নির্যাতিতা প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর দ্রুত আরোগ্যও কামনা করে। মিছিলে পড়ুয়াদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পড়ুয়ারা কলাভবনের অধ্যক্ষকে স্মারকলিপিও দেন। তাতে ঘটনার কথা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এ দিনই আবার বামেরা বিশ্বভারতীতে পড়ুয়াদের জন্য কাউন্সেলিং কেন্দ্র খোলা-সহ একাধিক দাবিতে উপাচার্যের দফতরে স্মারকলিপি দেন।
এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করে এ দিন স্মৃতি ইরানির কাছে ফ্যাক্স-বার্তা পাঠিয়ছেন বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাতে তিনি লিখেছেন, সম্প্রতি কিছু দুষ্কর্মের ফলে বিশ্বভারতীর গৌরব ও সম্মান ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। ওই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও কলা ভবনের অধ্যক্ষকে অভিযুক্ত করেছেন অধীর।