পুজোর সময় রবিবারগুলোয় পুরুলিয়ার এই কাপড়গলিতে ক্রেতা আর গাড়ির ভিড়ে পা ফেলাই দায় হয়ে ওঠে। বৃষ্টির জন্য রবিবার কিন্তু এমনই ফাঁকা বাজারে নিশ্চিন্তে কেনাকাটা সারলেন মানুষজন। —নিজস্ব চিত্র
হঠাৎ বৃষ্টিতে ছন্দপতন ঘটাল পুজোর রবিবাসরীয় বাজারে। ভাদু ও বিশ্বকর্মা পুজোর শেষে পরিবহণ ধর্মঘটের পরে রবিবারের দিকে তাকিয়ে ছিলেন পুরুলিয়া থেকে আদ্রা, রঘুনাথপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই বিধি বাম। সকাল থেকেই ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে বাজারে দৃশ্যতই ভাঁটার টান। দোকানে পসরা সাজিয়ে বসে বিক্রেতারা। কিন্তু দেখা মিলল না ক্রেতাদের সেই চেনা ভিড়ের। নামমাত্র কিছু ক্রেতা বিকেলে কেনাকাটি করলেন। জেলার মূলত শহরাঞ্চল হিসাবে পরিচিত পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর ও আদ্রার বাজার ঘুরে এমনই ছবি চোখে পড়ল।
পুরুলিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব ভাদু। তার পরেই শুরু হয়েছিল বিশ্বকর্মা। মূলত এই পুজোগুলির পরেই পুরুলিয়ায় জমে ওঠে পুজোর বাজার। আর এ বার বিশ্বকর্মা পুজোর পরে হঠাৎ করে ক্রেতাদের শহরে আসা আটকে দেয় পরিবহণ ধর্মঘট। তারপরে রবিবার বাজার বেশ জমে উঠবে এমনই আশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। ভেবেছিলেন, হয়তো ব্যবসার ঘাটতি একদিনেই অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
কিন্তু শনিবার বিকেল থেকে আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামতেই তাঁরা প্রমাদ গোনেন। সে জন্য শনিবারের বিকেলের বাজার কিছুটা মার খায়। আশা করেছিলেন, রবিবার সকালে নিশ্চই মেঘ সরে দিয়ে সোনা রোদ গড়াগড়ি খাবে। কিন্তু কোথায় কি! সকাল থেকেই জেলার প্রায় সব এলাকাতেই শুরু হয় ঝিরঝিরে বৃষ্টি। ফলে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অধিকাংশ ক্রেতাই আর বাড়ি ছেড়ে বাজারে যাওয়ার দিকে বিশেষ উৎসাহ দেখাননি।
তাও সকালে দোকান খুলে সামান্য কিছু বিক্রিবাটা করতে পেরেছিলেন পুরুলিয়া শহরের চাঁইবাসা রোডের ছোটদের জামাকাপড়ের দোকানের মালিক বসন্ত খেড়িয়া। তারপর তিনি অনেকটা সময় ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকলেন। আক্ষেপ করে বলেন, “ভাদু ও বিশ্বকর্মা পুজোর পরে হঠাৎ করেই পরিবহণ ধর্মঘটে বিক্রিবাটায় টান পড়েছিল। ভেবেছিলাম রবিবার বাজারে উপচে পড়া ভিড় থাকবে। কিন্তু ক্রেতাদের সংখ্যা দেখে সত্যিই হতাশ” একই কথা শোনালেন শহরের অন্যতম বাজার টাক্সিস্ট্যান্ড এলাকার মহিলাদের বস্ত্র বিক্রেতা শ্রীপদ সিংহ। তাঁর কথায়, “পুজোর আগে আর মাত্র একটা রবিরার রয়েছে। অন্যবার এই শেষ ক’টা রবিবার বাজারে উপচে পড়া ভিড় হয়। কিন্তু এ বার সেই চেনা ছবিটা ছিল না।”.এ বার পুজোর আগে বাজারে বিক্রিবাটার যা মন্দা চলছে তা অন্তত গত ১০ বছরে দেখা যায়নি বলে দাবি করছেন পুরুলিয়া শহরের পিএন ঘোষ স্ট্রিটের শাড়ির দোকানের মালিক গৌতম অগ্রবালের।
তবে এই বৃষ্টিভরা দিনেও হুড়া থানার লক্ষণপুর থেকে পুরুলিয়া শহরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে জামাকাপড় কিনতে এসেছিলেন ভজন গরাই। তিনি বলেন, “পুজো শুরু হওয়ার আগে মাত্র আর একটা রবিবার আছে। তাই ভেবেছিলাম বাজারে ভালই ভিড় থাকবে। কিন্তু বাজার বেশ ফাঁকা। তাতে অবশ্য বেশ স্বস্তিতে কেনা কাটা করা গেল।” পুরুলিয়ার বাজারে দেখা মিলল কেন্দা থানার চাঁদরার বাসিন্দা প্রৌঢ় অজিত গরাইয়ের। তিনি জানান, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় চাষের সমস্যা হয়েছে। মানুষের মন ভাল নেই। তারই প্রভাব পড়েছে পুজোর বাজারে।” তাঁর সঙ্গে একমত রঘুনাথপুর শহরের অন্যতম বড় বস্ত্র ব্যবসায়ী উত্তম সারাওগি। তাঁর কথায়, “বৃষ্টির জন্য না হয় রবিবাররের বাজার মার খেয়েছে। কিন্তু এ বার প্রথম থেকেই বাজার খুব মন্দা। চাষ ভাল না হওয়াই এর একটা কারণ।”
রেলশহর আদ্রায় রেলকর্মীরা এখনও পুজোর বোনাস না পাওয়ায় বাজারে মন্দা চলছে বলে মনে করছেন আদ্রার বড়বাজারের বড় মাপের রেডিমেড দোকানের মালিক সৈনিক অগ্রবাল। বস্তুত রেলশহরে পুজোর বোনাস পাওয়াপ পরেই মূল বিক্রিবাটা শুরু হয়। তাই সৈনিকবাবু বলছেন, “রেলের বোনাসের পরে বাজার জমে। কিন্তু তার আগেও কিছুটা ব্যবসা হয়। এই রবিবার কিন্তু বৃষ্টির জন্য পুরো মার খেয়ে গেল।”