গলদাচিংড়ির ডিম ছাড়ছেন ১০০ দিন প্রকল্পের কমিশনার। —নিজস্ব চিত্র
একশো দিন প্রকল্পে স্থায়ী সম্পদ হিসেবে আমবাগান গড়ে আগেই চমক দিয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। বছর বছর সেই আমবাগানের সুফল পাচ্ছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। এই উদ্যোগের জন্য মিলেছে কেন্দ্রীয় পুরস্কারও।
এ বার এই প্রকল্পেই ওন্দার রামসাগরের খাস জমিতে পুকুর কেটে গলদা চিংড়ি চাষ শুরু করল জেলা প্রশাসন। গ্রামীণ অর্থনীতির ভোল বদলাতেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন একশো দিন প্রকল্পের রাজ্য কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার। রামসাগরে ১২ একর খাস জমিতে একশো দিনের প্রকল্পে মোট সাতটি পুকুর কেটে গলদা চিংড়ি চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই দু’টি পুকুর কাটা হয়ে গিয়েছে। আরও একটি পুকুর কাটার কাজ শুরু হয়েছে। শুক্রবার দু’টি পুকুরে গলদাচিংড়ির ডিম ছেড়ে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন দিব্যেন্দুবাবু। উপস্থিত ছিলেন একশো দিন প্রকল্পের জেলা আধিকারিক বাবুলাল মাহাতো, ওন্দা ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর ভট্টাচার্য, জেলা মত্স্য দফতরের আধিকারিক অভিজিত্ সাহা, ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের চম্পা ঘোষ, রামসাগর পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান বিজয় দে-সহ আরও অনেকে।
ডিমপোনা ব্যবসায় রামসাগর গোটা ভারতবর্ষে অতি পরিচিত নাম। এখানের ডিমপোনা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। এই ব্যবসার উপরে রামসাগরের সাধারণ মানুষের অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করে। এই দিকটি দেখেই জেলাশাসক বিজয় ভারতী পঞ্চায়েত প্রধান বিজয় দেকে পুকুর কেটে অর্থকরী মাছ চাষের কথা বলেন। লাল কাঁকুরে মাঠের পুকুরে গলদাচিংড়ি চাষ ভাল হবে বলে প্রধান জেলা প্রশাসনকে জানান। সেই মতো এই মাছ চাষের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওন্দার বিডিও শুভঙ্করবাবু বলেন, “পঞ্চায়েত প্রধান সব দিক বিবেচনা করে আমাদের গলদাচিংড়ির কথা বলেন। আমরাও রাজি হয়ে যাই। পঞ্চায়েতের কাছ থেকে পুকুরগুলি লিজে নিয়ে মাছ চাষ করতে পারে স্বনির্ভর গোষ্ঠী। মত্স্য দফতরের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে গোষ্ঠীগুলিকে ডিমপোনা দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রকল্পে সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন জেলা মত্স্য আধিকারিক।” তবে উন্নতমানের মাছের জন্য চাষের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শও দিয়েছেন মত্স্য আধিকারিক। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, “রামসাগরের ডিমপোনা যাচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশে। সেখান থেকে ফের ফিরে আসছে বাংলায়। এতে দামও বাড়ছে। আমরা নিজেরাই যদি মাছ চাষ করি তা হলে বাজারেও মাছের দাম কমবে। একশ্রেণির মানুষও অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হবে।”
গত বছর খাতড়া মহকুমার বেশ কয়েকটি ব্লকে একশো দিনের প্রকল্পে আমবাগান গড়েছিল জেলা প্রশাসন। যার মধ্যে ছিল সিমলাপাল ও রানিবাঁধ ব্লক, হিড়বাঁধ। এই আমবাগানগুলির দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে। প্রতি বছর আমের মরসুমে বাগানের আম বিক্রি করে গোষ্ঠীগুলি রোজগারের একটি নতুন দিশা পেয়েছে। এই ভাবে স্থায়ী সম্পদ গড়ে দিয়ে মানুষকে স্বনির্ভর করার জন্য বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন কেন্দ্রীয় পুরস্কারও পেয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বাঁকুড়া জেলা জুড়ে ইতিমধ্যেই ২০০টি আমবাগান গড়া হয়েছে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে। প্রায় ৩ লক্ষ আম গাছ লাগানো হয়েছে ওই বাগানগুলিতে। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, “শুধু পুকুর কাটলেই হবে না। এই প্রকল্পে স্থায়ী সম্পদ গড়ার দিকে বেশি করে জোর দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে প্রকল্প উঠে গেলেও মানুষের রোজগার বন্ধ না হয়।”