জয়ের আনন্দে। বোলপুরে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিত্ রায়চৌধুরী।
গণনা চলছে ঢিমে তালে ।
প্রার্থীর কাছ থেকে এই অনুযোগ পেয়েই মহকুমাশাসককে মোবাইলে ধরলেন তিনি “এসডিও সাহেব, প্রেসিডেন্ট বলছি। গণনা খুব স্লো চলছে। একটু দেখুন!”
বোলপুরের মহকুমাশাসক মলয় হালদার কী জবাব দিলেন, স্পষ্ট নয়। তবে, বেলা বাড়তেই মুখে চওড়া হাসি তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। তত ক্ষণে যে তাঁর দল ২৭টি আসনে এগিয়ে গিয়েছে!
বীরভূমের দু’টি আসনই দলকে ‘উপহার’ দেবেন বলে আগাম ঘোষণা করে দিয়েছিলেন অনুব্রত। গোটা প্রচারপর্ব সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে এ দিক-ও দিক দাপিয়ে বেরিয়েছেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বোলপুর নিচুপট্টির বাড়িতে যখন তাঁর দেখা মিলল, চোখেমুখে আদৌ টেনশনের ছাপ নেই। খদ্দরের লুঙ্গি আর ফতুয়া পরে এসে বসলেন নির্দিষ্ট চেয়ারে। খানিক বাদেই এল বোঁঁদে আর আলুর দম। অফিসঘরে বসেই প্রাতরাশ সারলেন। দলীয় কর্মী, নিরাপত্তারক্ষী এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও প্রায় জোর করে আপ্যায়ন করলেন।
সকাল ১০টা। দেওয়ালে বড় এলসিডি টিভিতে তখন দেখা যাচ্ছে রাজ্যে ২১টি আসনে তৃণমূল এগিয়ে। সে দিকে চোখ রেখে অনুব্রতর স্বগতোক্তি, “কম করে ৩৫টি আসন না পেলে কোনও মানেই নেই। যখন ক্ষমতায় ছিলাম না তখনই তো ২০টা পেয়েছিলাম। আড়াই বছর এত উন্নয়ন করার পরেও কি মানুষ আমাদের দেখবেন না?” মোবাইল বেজে উঠল। অনুব্রত ধরলেন “এক দম চিন্তা কোরো না দাদা। রেকর্ড ভোটে জিতব।” টিভিতে অনুপমের পিছিয়ে পড়ার খবর দেখে মুকুলদা (রায়) ফোন করেছিলেন, জানালেন নিজেই। খানিক পরে বোলপুরের প্রার্থী অনুপম হাজরার ফোন ‘কেষ্টকাকা, গোনা খুব আস্তে চলছে।’ অনুব্রত বললেন, “ফোন রাখ, আমি দেখছি।”
১০টা ২০ মিনিট নাগাদ স্নান আর পুজোর ব্রেক। আধঘণ্টা পরে সবুজ পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা আর জুতো পরে যখন ফের উপরের ঘর থেকে নামলেন, তত ক্ষণে চলে এসেছেন অনুপমও। গলা জড়িয়ে ধরে তিনি কপালে চুমু খেলেন অনুব্রতর। মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে অনুব্রত বললেন, “তুই দু’লক্ষ ভোটে জিতবি। তা হলে ২০১৬ সালের ভোটে ঘরে বসে আমরা জেলার ১৪টি বিধানসভা জিতে যাব!” (শেষে দেখা যায়, অনুপমের জয়ের ব্যবধান দু’ লক্ষ ছত্রিশ হাজার ছাড়িয়েছে।)
দুপুরে সাড়ে ১২টা নাগাদ অনুব্রত যখন সিউড়ির পুরসভার সামনে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছলেন, ভিতরে বীরভূম কেন্দ্রের প্রার্থী শতাব্দী রায়। সরকারি ঘোষণা না হলেও তত ক্ষণে দুই প্রার্থী জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অনুব্রত দাবি করলেন, উন্নয়নের স্বার্থেই মানুষ এই রায় দিয়েছেন। কিন্তু জয়ের আসল কাণ্ডারি তো আপনিই? অনুব্রতর ঝটপট জবাব, “অনুব্রত মণ্ডল কোনও ফ্যাক্টর নয়। এই জয়ে আমার কোনও হাত নেই। এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।” কার্যালয়ের ভিতরেই তখন শুরু হয়েছে আবির খেলা। শতাব্দী এবং অনুব্রত দু’জনেই দু’জনকে লাড্ডু খাওয়ালেন। বেরনোর আগে প্রেসিডেন্টের কটাক্ষ, “সিপিএম এখন খোল-কীর্তন বাজাক। আমিই কিনে দেব। শতাব্দী নিজে সেগুলো দিয়ে আসবেন।”