বীরভূমে ফের আক্রান্ত বিজেপি। এ বারও ইলামবাজারের ঘুড়িষা পঞ্চায়েত এলাকাতে।
সপ্তাহ তিনেক আগেই ওই পঞ্চায়েতের কানুর গ্রামে খুন হয়েছিলেন বিজেপি সমর্থক রহিম শেখ। অভিযোগের তির ছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ বার একই পঞ্চায়েতের ঘুড়িষা গ্রামে হামলা হল বিজেপি সমর্থক জিয়ার শেখের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় সাত তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। জিয়ার শেখ আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ এখনও কাউকে ধরতে পারেনি। এসডিপিও (বোলপুর) সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, “খুনের চেষ্টার মামলা শুরু হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।”
বরাবর সিপিএমের দখলে থাকলেও গত পঞ্চায়েত ভোটে তিনটি স্তরেই ঘুড়িষা-সহ ইলামবাজার ব্লকের সর্বত্র তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। সিপিএমের অভিযোগ, তারপর থেকেই একাধিক বার দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপরে শাসক দল হামলা চালায়। তবে, সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটে ওই এলাকায় বিজেপির ভোট বাড়ে। ফল প্রকাশের পর থেকেই এলাকার বহু কর্মী-সমর্থক নিরাপত্ত পেতে সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেয়। তার জেরেই বিজেপির ওই নতুন কর্মী-সমর্থকেরা শাসক দলের রোষের মুখে পড়েন বলে অভিযোগ। গত ৭ জুন কানুরে খুন হন রহিম শেখ। মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলামকে পুলিশ আজও গ্রেফতার করেনি। ইতিমধ্যেই কানুর ঘুরে গিয়েছে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।
ঘুড়িষা গ্রামের বিজেপি কর্মী অনিল চট্টোপাধ্যায়, শেখ ফিরোজরা জানান, তৃণমূল পরিচালিত ঘুড়িষা পঞ্চায়েতের নানা অনিয়ম-বেনিয়ম নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে জিয়ার শেখ-সহ বেশ কিছু দলীয় কর্মী-সমর্থক প্রধান এবং উপপ্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, “কেন পঞ্চায়েতে গিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে, সেই অপরাধে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা লাঠি, রড, টাঙ্গি নিয়ে ইচ্ছাপুর পাড়া, তিনোর পাড়া, শ্রীপুর পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই দুষ্কৃতীরা শ্রীপুর পাড়ায় জিয়ারের বাড়িতে চড়াও হয়।” পরিবারের দাবি, ঘুমন্ত জিয়ারকে তুলে বাইরে নিয়ে গিয়ে রড, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাস্তা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিজেপি-র জেলা নেতা চিত্তরঞ্জন সিংহ বলেন, “শুধু সিপিএম থেকেই নয়, ওই এলাকায় তৃণমূল থেকেও বহু কর্মী-সমর্থক বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। ভয় পেয়েই ওরা আমাদের উপরে হামলা চালাচ্ছে।” বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে জাফারুল ইসলামের দাবি, গোটাটাই সাজানো। জিয়ারের উপরে হামলার ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই স্থানীয় কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ করেন ঘুড়িষা পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান হাফিজা বিবি।
বৃহস্পতিবারই বাঁকুড়ার খাতড়া ও বিষ্ণুপুরে আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের দেখতে যান বিজেপি-র রাজ্য নেতা তথাগত রায়। সম্প্রতি বিষ্ণুপুর, খাতড়া ও ইন্দাসে বিজেপি কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আহত কর্মীরা বিজেপি-র প্রতিনিধিদলের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে শাসকদলের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ তোলেন। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ পেয়ে তথাগতবাবু কর্মীদের বলেন, “পুলিশ যদি নিজের কাজ না করে, তাহলে আইনের পথে গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করুন। যেখানেই এই ধরনের ঘটনা ঘটবে, সেখানেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করুন।প্রয়োজনে হাইকোর্টে আমরা সেই মামলা নিয়ে যাব। আইনের পথেই এ বার আমরা পুলিশের মোকাবিলা করব।”
মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।