অনুমোদন ছাড়াই কাজ পাঁচ কোটির, বিপাকে পুরসভা

কালভার্ট, স্নানের ঘাট, রাস্তা নির্মাণ হয়েই গিয়েছে। কিন্তু অনুমোদন না নিয়ে এই সব কাজ করানোয় বিল আটকে গিয়েছে ঠিকাদারের। সমস্যাটি রঘুনাথপুর পুরসভা এলাকার। সামনেই পুরভোট। এই অবস্থায় ঠিকাদারদের পেমেন্ট না দিতে পারলে নির্বাচনে তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৫
Share:

সদ্য নির্মিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাইপাস। অনুমোদন ছাড়াই এমন আরও বহু কাজ হয়েছে পুরসভায়। —নিজস্ব চিত্র।

কালভার্ট, স্নানের ঘাট, রাস্তা নির্মাণ হয়েই গিয়েছে। কিন্তু অনুমোদন না নিয়ে এই সব কাজ করানোয় বিল আটকে গিয়েছে ঠিকাদারের। সমস্যাটি রঘুনাথপুর পুরসভা এলাকার।

Advertisement

সামনেই পুরভোট। এই অবস্থায় ঠিকাদারদের পেমেন্ট না দিতে পারলে নির্বাচনে তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্য দিকে, কেন পুর দফতরের অনুমোদন না নিয়ে কাজ করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জেলা প্রশাসনও। মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) সুরেন্দ্রকুমার মীনা বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী আগে সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠাতে হয়। সংশ্লিষ্ট দফতর অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ করার পরেই কাজ শুরু করা যাবে। এ ক্ষেত্রে পুরসভা নিয়ম মেনে কাজ করেনি।” পুরপ্রধান মদন বরাটের দাবি, কাউন্সিলরদের চাপে পড়ে অনুমোদন মেলার আগেই কাজ করতে হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি কলকাতায় পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে গিয়ে শেষ হওয়া কাজগুলির অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে তদবির করেছেন পুরপ্রধান।

রঘুনাথপুর পুরসভায় ১৩টি ওর্য়াড রয়েছে। তৃণমূল পরিচালিত রঘুনাথপুর পুরসভাতে নর্দমা(২৬টি), কালভার্ট (৫টি), কংক্রিটের রাস্তা (৯টি), পিচ রাস্তা (৫টি), সীমানা প্রাচীর(১টি) ও স্নানের ঘাট (৪টি) নির্মাণে প্রায় পাঁচ কোটি (৪ কোটি ৮৭ লক্ষ ৮৯ হাজার) টাকার কাজ করিয়েছে পুরসভা। কিন্তু এই সব কাজের ক্ষেত্রে আগাম অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ফলে অর্থ বরাদ্দ করেনি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। আর এখানেই সমস্যার সূত্রপাত। কারণ, ষাটজনের বেশি স্থানীয় যুবক এই কাজগুলির বরাত পেয়েছিলেন। সেই ঠিকাদাররা কাজ শেষ করার চার-পাঁচ মাস পরেও বিল না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ঠিকাদারদের কয়েকজনের দাবি, কাজের বরাত পাওয়ার পরে তাঁরা বাজার থেকে সুদের বিনিময়ে টাকা ধার করে কাজ শেষ করেছেন। আশা ছিল কাজ শেষ করার পরেই বিল মিলবে। তাতে ঋণ মিটিয়ে কিছু লাভ থাকবে। বাস্তবে লাভ্যাংশ পাওয়া তো দূর অস্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ মেটাতে না পারায় প্রতি মাসে সুদ গুনতে হচ্ছে তাঁদের।

Advertisement

কিন্তু কেন অনুমোদন না নিয়েই আগেভাগে কাজ করেছে পুরসভা? তাও আবার প্রায় পাঁচকোটি টাকার মত বিশাল অঙ্কের কাজ। পুরসভা সূত্রেই জানা যাচ্ছে, গত মে-জুন মাস থেকেই এই অনুমোদনহীন কাজগুলি করতে শুরু করেছিল পুরসভা। পরে সেপ্টেম্বর মাসে পুরসভার তরফে প্রকল্পগুলি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে। কিন্তু এখনও সেই অনুমোদন মেলেনি। তবে কাজ বন্ধ হয়নি। পুরসভা সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর মাসে যে প্রকল্পগুলি অনুমোদনের জন্য রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল সেগুলির অনুমোদন এখনও আসেনি। তা সত্ত্বেও নতুন করে কিছু কাজ আবার শুরু করা হয়েছে। আর এই ক্ষেত্রেই পুরপ্রধানের দাবি, কাউন্সিলরদের চাপেই তিনি বাধ্য হয়ে কাজের অনুমতি দিয়েছেন।

অভিযোগ, পুরসভার বোর্ড মিটিংগুলিতে প্রতিবারই কাউন্সিলররা নিজেদের ওয়ার্ডে কাজ করানোর জন্য পুরপ্রধানের উপরে চাপ তৈরি করেছিলেন। টাকার অভাবে কাজ করা সম্ভব নয় বলে পুরসভার আধিকারিকরা পুরপ্রধানকে জানালেও কাউন্সিলরদের চাপে কার্যত বাধ্য হয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডেই নর্দমা, রাস্তা, কালভার্টের মতো কাজগুলি করতে সম্মত হয়েছিলেন পুরপ্রধান। পুরসভা সূত্রের খবর, পুরসভা জুড়ে এই ধরনের প্রায় ১০০টি কাজ করা হয়েছে।

পুরপ্রধান কাউন্সিলরদের চাপে কাজ করানোর যুক্তি দিলেও তা মানতে নারাজ তৃণমূলেরই একাংশ। উপপুরপ্রধান বাসুদেব তিওয়ারি, পুরসভায় তৃণমূলের দলনেতা বিষ্ণুচরণ মেহেতাদের পাল্টা দাবি, তাঁরা মদনবাবুকে অনুমোদন আসার আগেই কাজগুলি শুরু না করার জন্যই বলেছিলেন। কিন্তু পুরপ্রধান তাতে কর্ণপাত না করাতেই সমস্যা হয়েছে। একধাপ এগিয়ে পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী বলেন, “কাউন্সিলরদের নয় ঠিকাদারদের চাপে পড়ে অনুমোদন না নিয়েই কাজ করিয়েছেন তৃণমূলের পুরপ্রধান। আসলে এই পুরসভা বরাবরই তৃণমূল নয়, ওদের খাপের ঠিকাদাররাই পরিচালনা করে। এই ঘটনা তারই প্রমাণ।” তবে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, শহর বাড়ছে। ফলে নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ করতেই হয়। সেই প্রেক্ষিতেই এই কাজ করা হয়েছে। তা ছাড়া অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর আগেও অনুমোদনহীন প্রকল্পগুলিতে কাজ শেষ করার পরে অর্থ বরাদ্দ করেছে। সেই নজির মাথায় রেখে অর্থ মেলার আশাতেই কাজগুলি করানো হয়েছে।

কিন্তু অনুমোদন আদৌ মিলবে কি না, মিললেও কত টাকা পাওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে পুরসভার একাংশের মধ্যে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement