দুর্ঘটনা: মৃত বাবুধন সরেনের স্ত্রী লক্ষ্মী। নিজস্ব চিত্র
ভিজে কাপড় মেলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিলেন স্ত্রী। ছুটে এসে স্ত্রীকে বাঁচালেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল ওই আদিবাসী যুবকের। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে সিউড়ির শালবনি গ্রামে। মৃতের নাম বাবুধন সরেন (২৮)। পরিসংখ্যান বলছে, শুধু অক্টোবর মাসেই জেলায় বিদ্যুতের বলি হলেন সাত জন।
সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম শালবনি। এ দিন সকালে গ্রামের বাসিন্দা বাবুধনের স্ত্রী লক্ষ্মী সরেন বাড়ির উঠোনের তারে ভিজে কাপড় মেলছিলেন। কোনও ভাবে ওই তার বিদ্যুৎবাহী হয়েছিল। ভিজে কাপড়ের সংস্পর্শে আসতেই তখনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন লক্ষ্মী। তাঁর চিৎকার শুনে ছুটে এসে স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে পারলেও বিদ্যুৎবাহী তারের ছোঁয়া থেকে নিজেকে সরাতে পারেননি বাবুধন।
উভয়ের চিৎকার শুনে পড়শিরা ছুটে এসে দেখেন মাটিতে পড়ে ছটফট করছেন ওঁরা। তাঁদের কথায়, গরম দুধ খাইয়ে লক্ষ্মীকে কিছুটা সুস্থ করা গেলেও বাবুধন অচৈতন্য ছিলেন। সিউড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান। পড়শিদের বক্তব্য, চুরি বা কারচুপির জন্য
দুর্ঘটনা নয়। দিওয়ালির সময় চিনা আলোর ছেঁড়া তার কোনও ভাবে কাপড় মেলার তারের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে এমনটা হয়েছে।
আসল কারণ কী, সেটা তদন্ত বলবে। তবে ঘটনা হল, গত কয়েক সপ্তাহে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বেশ কিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুৎ দফতরের ক্রটি, বিদ্যুৎ চুরি, না কি জনসাধারণের বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে সচেতনতার অভাব, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। কপালে ভাঁজ চওড়া হয়েছে বিদ্যুৎ কর্তাদেরও।
বিদ্যুৎ দফতর ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অক্টোবরের মধ্যে এই নিয়ে বিদ্যুতের বলি হলেন সাত জন। সাঁইথিয়ার মাঠপলসার রোঙ্গাইপুর গ্রামে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় শাশুড়ি-বৌমার। নিম্নচাপের জেরে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পুকুরের জলে পড়েছিল। তারই সংস্পর্শে এসেই মৃত্যু হয়ে তাঁদের। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে মহম্মদবাজার সোঁতশাল এলাকায়। ইলেকট্রিক মিস্ত্রি পরিচয়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠে প্রাণ হারান এক যুবক। একই দিনে বোলপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক বালিকার। কালীপুজোর আগেই সদাইপুর থানা এলাকার কামারডাঙ্গাল গ্রাম মারা যান স্বামী–স্ত্রী। ফুচকা বিক্রির গাড়িতে বিদ্যুত ঠেকেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। সোমবার ফের একই দুর্ঘটনা।
বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার দয়াময় শ্যাম বলছেন, ‘‘বিদ্যুৎ চুরি রোখা থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সচেতনতার পাঠ, সব ক্ষেত্রেই সাধ্য মতো চেষ্টা চালাচ্ছে বিদ্যুৎ দফতর। স্কুলস্তর থেকে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। উৎসব, অনুষ্ঠানেও ফ্লেক্স থেকে মাইকে প্রচার, সবই চলছে।
তারপরও এমন ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।’’ তবে সচেতনা বাড়ানোর প্রক্রিয়া জারি থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।