ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পাড়াশোনা করে বাবা-মা’র হাত ধরে ও-পার বাংলা থেকে এসেছিলেন। ছোট থেকেই বই পাগল সাঁইথিয়ার বোলসুণ্ডা কলোনির অরুণ সাহা। নিজের চায়ের দোকানে কাজের ফাঁকে। ছবি: অনির্বাণ সেন
বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্ব বই দিবস। কিন্তু বীরভূম জেলায় কোথাও তার প্রভাব পড়েনি। এই দিনটির কথাও প্রায় কারও মনে নেই। অথচ সারা বছর ধরেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা স্বাদের বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে আসছে স্থানীয় এবং প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের মাধমে। এর কারণ, হিসেবে বীরভূমের কবি, সাহিত্যিকেরা কার্যত বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে দায়ী করেছেন। শান্তিনিকেতনের চিকিৎসক কবি অনির্বাণ দাশগুপ্তের বক্তব্য, “এখন অধিকাংশ গ্রন্থই ইন্টারনেটের মাধমে পড়ে নিচ্ছেন পাঠকেরা। সেই তথ্য আমরা জানতে পারছি না।” তবে সিউড়ির অন্যতম পাঠক প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় ওই কথা স্বীকার করেও বলছেন, “ইন্টারনেটের যুগে অনেক সংখ্যক পাঠক গ্রন্থাগার মুখী হচ্ছেন না অথবা বই কিনছেন না বটে, তবে এখন কিছু পাঠক আছেন যাঁরা মুদ্রিত বই পড়তে চান। তার মজাটাই আলাদা।” সব্যসাচীবাবুর বাড়িতে বিভিন্ন বইয়ের একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। সিউড়ির যে কোনও মানুষ যে কোনও বিষয়ে তথ্যের জন্য সব্যসাচীবাবুর কাছেই হাত বাড়ান। প্রায় একই কথা বলেছেন সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক পার্থ শঙ্খ মজুমদার। তাঁর বক্তব্য, “বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে শিক্ষকেরাও এখন লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়ছেন না। অথচ আমি বীরভূমের প্রাচীন ইতিহাস লেখার জন্য দিনের পর দিন বিভিন্ন লাইব্রেরিতে গিয়েছি। তার মধ্যে একটি হল ১১৫ বছরের প্রাচীন গ্রন্থাগার ‘সিউড়ি রামরঞ্জন পৌরভবন স্বামী বিবেকানন্দ গ্রন্থাগার।’’ সেখানে প্রবাসীর যাবতীয় পত্রিকার সংকলন থেকে শুরু করে বহু প্রাচীন গ্রন্থ সংগ্রহে রয়েছে। কিন্তু পড়ার লোক নেই। ওই গ্রন্থাগারের অবৈতনিক গ্রন্থাগারিক রবীন্দ্রনাথ দাস জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘হেতমপুরের রাজার দানে তৈরি ওই গ্রন্থাগারে প্রায় লক্ষাধিক গ্রন্থ রয়েছে। সদস্য সংখ্যা ৭৪৩। কিন্তু আসেন মাত্র কয়েক জন। ইংরেজি সাহিত্য পড়ার লোক প্রায় নেই বললেই চলে। কয়েক দিন আগে মল্লারপুরের কাছে মাসড়া গ্রামের এক সাহিত্যপ্রেমী এবং গবেষক সৈয়েদ মইনুদ্দিন হোসেন (অশোক) কয়েকটি ইংরেজি সাহিত্যের গবেষণামূলক বই নিয়েগিয়েছেন। তাতে আমি খুশি।’’ অশোকবাবু বলেছেন, ‘‘ওই গ্রন্থাগার একটি অ্যাসেট। আমি যে সব বিষয়ে গবেষণা করতে চাইছি তাতে ওই গ্রন্থাগারটি আমাকে সাহায্য করবে বলে আশা করছি।’’ গত কয়েক বছর ধরে সাঁইথিয়ার একটি পুস্তক বিপণি বিশ্ব গ্রন্থদিবস পালন করে আসে। কিন্তু এ বার পুরভোটের কারণে সেই প্রতিষ্ঠানও নিস্তব্ধ ছিল।