তুমুল লড়াই ঝালদার বধূর

ভালুকের চোয়ালে লাঠি ঠেসে রক্ষা

জঙ্গলে ভালুক রয়েছে তিনি জানতেন। এলাকার অনেকেই ভালুকের সামনে পড়েছেন। কিন্তু কোনও দিন তাঁর সে দুর্ভাগ্য হয়নি। সোমবার শীতের দুপুরে সেটাই হল! সামান্য একটা লাঠি দিয়ে কোনওরকমে বুনো জন্তুটাকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও ভালুকের থাবা এড়াতে পারলেন না ঝালদার কিরিবেড়া গ্রামের বাসিন্দা মালতী সিং মুড়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝালদা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৭
Share:

পুরুলিয়া হাসপাতালে ভর্তি মালতী সিং মুড়া।—নিজস্ব চিত্র।

জঙ্গলে ভালুক রয়েছে তিনি জানতেন। এলাকার অনেকেই ভালুকের সামনে পড়েছেন। কিন্তু কোনও দিন তাঁর সে দুর্ভাগ্য হয়নি। সোমবার শীতের দুপুরে সেটাই হল! সামান্য একটা লাঠি দিয়ে কোনওরকমে বুনো জন্তুটাকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও ভালুকের থাবা এড়াতে পারলেন না ঝালদার কিরিবেড়া গ্রামের বাসিন্দা মালতী সিং মুড়া। তাঁর উরু ও পিঠের মাংস কিছুটা ভালুকের ধারাল নোখে উঠে গেলেও তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। সোমবার সকালে গুরুতর আহত হওয়া বছর পঁয়তাল্লিশের ওই বধূ পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে কার্যত খালি হাতে রীতিমতো যুঝেই তিনি রক্ষা পেয়েছেন বলে দাবি করছেন তাঁর পড়শিরা। পুরুলিয়ার ডিএফও কুমার বিমল বলেন, ‘‘ওই এলাকার জঙ্গলে শ্লথ বিয়ার রয়েছে। তারাই মাঝে মধ্যে লোকালয়ে চলে আসে।’’

Advertisement

গায়ে চাদর জড়িয়ে ছোট্ট একটা লাঠি নিয়ে পড়শি কয়েকজন মহিলার সঙ্গে অন্যান্য দিনের মতো সোমবার মালতীদেবী গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে গিয়েছিলেন ছাগল চরাতে। অন্যেরা আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখেন, সামনে একটি বুনো ভালুক। হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণার মধ্যেও সেই মুহূর্তের কথা ভেবে তাঁর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। তিনি বলেন, ‘‘সামনের বাঁশঝোপের মধ্যে কিছু নড়ে উঠল মনে হল। ভাল করে কিছু ঠাহর করার আগেই দেখি ঝোপের ভিতর থেকে একটি ভালুক আমার দিকে এগিয়ে আসছে।’’ আগে এই এলাকার দু’-একজন যে জঙ্গলে ভালুকের মুখোমুখি পড়েননি তা নয়। তাঁদের কাছেই তিনি শুনেছিলেন, কী ভাবে আত্মরক্ষা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁকেই যে কোনওদিন ভালুকের মুখে পড়তে হবে, ভাবেননি মালতীদেবী।

তাঁর কথায়, ‘‘ভালুকটা এগিয়ে আসছে দেখেই হাতে থাকা ছোট লাঠিটার দু’প্রান্ত দুই হাতে শক্ত করে ধরি। ভালুকটা মুখ হাঁ করে তেড়ে আসতেই লাঠিয়া ওর চোয়ালে ঠেসে ধরি। এ ভাবে কিছুক্ষণ চাপ দিয়ে লাঠিটা ধরে থাকলেও বেশিক্ষণ ঠেকিয়ে রাখতে পারিনি। ভালুকটা ধাক্কা মেরে আমাকে মাটি ফেলে দেয়। আমি চিৎকার করতে শুরু করি। তারই মধ্যে ভালুকটা আমার ডানপায়ের উরু ও পিঠের কিছুটা মাংস থাবার নখ দিয়ে খুবলে নেয়।’’ অন্যেরা তেড়ে আসতেই ভালুকটি মালতীদেবীকে ছেড়ে জঙ্গলের ভিতরে সেঁধিয়ে যায়।

Advertisement

মালতীদেবীর সঙ্গে জঙ্গলে থাকা তারণী মাঝি বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি মালতী ভালুকটার সঙ্গে লড়াই করছে। সব দেখে আমরা কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। হুঁশ ফিরতেই সবাই মিলে চিৎকার জুড়তেই ভালুকটা পালায়।’’ মালতীদেবীর ভাইপো তারনহার সিং মুড়া বলেন, ‘‘জেঠিমা অমন লড়াই করতে পারেন, ভাবা যায় না।’’

ঝালদার রেঞ্জ অফিসার সুকান্ত ওঝা জানান, বন দফতর ওই মহিলার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। চোট গুরুতর হলেও মঙ্গলবার তিনি কিছুটা ভাল আছেন।’’ তবে তিনি মানছেন, ‘‘ওই মহিলা যে ভাবে বুনো ভালুকের মুখোমুখি পড়ে লড়াই করেছেন, তাতে তিনি দৃঢ় মানসিকতারই পরিচয় দিয়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement