রিঙ্কু বাউড়ি।
ঘটনার পরে এক দিন পার হয়ে গেলেও কোলিয়ারিতে নিখোঁজ মহিলার কোনও হদিশ মিলল না। শুক্রবার রাতে মৃত হাবল বাগদির ছেলে পিন্টু বাগদি বড়জোড়া থানায় ঘটনাটি নিয়ে খনিতে কয়লা তোলার দায়িত্বে থাকা ঠিকা সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ সেটির প্রেক্ষিতে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বাগুলি এলাকায় বড়জোড়া নর্থ কোলিয়ারিতে মাটি ধসে মৃত্যু হয় মালিয়াড়া গ্রামের দু’ই ভাই হাবল বাগদি, বিশ্বনাথ বাগদি এবং তাঁদের পড়শি কল্পনা বাগদির। তাঁরা অবৈধ ভাবে কয়লা তুলতে গিয়েছিলেন বলে পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র ঘটনার পরে দাবি করেছিল। এ দিন অবশ্য লিখিত অভিযোগে পিন্টু দাবি করেছেন, তাঁরা কাঠ কুড়োতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে কোলিয়ারির জলে হাতমুখ ধুতে নামেন। তখনই ধস নামে।
ঘটনার পর থেকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না রিঙ্কু বাউড়ি নামে এলাকার অন্য এক মহিলারও। তাঁর সন্ধানে খোলামুখ খনিতে জমে থাকা জলে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি করেও লাভ হয়নি। পুলিশের দাবি, শুক্রবার সকাল থেকেও ঘটনাস্থল ও সংলগ্ন এলাকায় রিঙ্কুর খোঁজ চালানো হয়েছে। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত খোঁজ না মেলায় তাঁর পরিবারের লোকজন উদ্বেগে রয়েছেন। রিঙ্কুর একটি বছর দুয়েকের সন্তান রয়েছে। তাঁর স্বামী রাকেশ বাউরি বলেন, “ছেলে সব সময়ে মাকে খুঁজছে। আমরা চাই প্রশাসন যে ভাবেই হোক আমার স্ত্রীকে খুঁজে বের করুক।” জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘নিখোঁজ মহিলার খোঁজে টানা তল্লাশি চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই খোলামুখ খনির দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত পিডিসিএল-এর কর্তারা এ দিন কোলিয়ারির পরিস্থিতি দেখতে এসেছিলেন। গোটা ঘটনায় প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ওই কোলিয়ারি থেকে কয়লা উত্তোলনের দ্বায়িত্বে থাকা ঠিকা সংস্থার বিরুদ্ধে। নিরাপত্তারক্ষী থাকার পরেও কী ভাবে কেউ অবৈধ ভাবে কোলিয়ারিতে ঢুকতে পারেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। কোলিয়ারির চারপাশ ঘেরা না থাকায় পিডিসিএলের কর্তারা এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। পিডিসিএলের একটি সূত্র দাবি করেছে, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি পরিত্যক্ত। এর পরে এলাকায় সচেতনতা গড়ে তোলার উপরে জোর দেওয়ার কথা ভাবছে সংস্থা।
কোলিয়ারিতে মাটি চাপা পড়ে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে এ দিন বাঁকুড়া শহরে মিছিল করে পথসভা করে এসইউসি। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দিলীপ কুণ্ডু বলেন, “কোলিয়ারির দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা নিরাপত্তায় ঢিলেমি দিয়েছে বলেই গ্রামের লোকজন ভিতরে ঢুকে কয়লা সংগ্রহ করছেন। তাই এই ঘটনার দায় ওই সংস্থারই। মৃতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।” বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন সিটু-ও একটি প্রেস বিবৃতিতে যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছে।
কোলিয়ারিতে ধসে তিন জনের মৃত্যুর পরেই মালিয়াড়ার বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করেছেন, কাজের সুযোগ না থাকায় কেউ কেউ বাধ্য হয়ে অবৈধ ভাবে কয়লা তুলতে যান। মালিয়াড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শান্তনু তিওয়ারি বলেন, “আমি ওই গ্রামের বাসিন্দাদের কথা বলেছি। ওঁদের কাজের ব্যবস্থা কী ভাবে করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চালাচ্ছি।” মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) সুদীপ্ত দাস বলেন, “গোটা ঘটনাটি কী ভাবে ঘটল তা জানার চেষ্টা করছি আমরা।”