অপলকে: সদ্যোজাতের পাশে অঞ্জলি। মুরারইয়ে। নিজস্ব চিত্র
দিন সাতেক আগেই ট্রেনের মধ্যে অসুস্থ যাত্রীর প্রতি রেলের উদাসীনতা শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। সে যাত্রা এক চিকিৎসকের তৎপরতায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রেল যাত্রী। হাওড়া থেকে ছাড়া তিনসুকিয়া এক্সপ্রেসের টিকিট পরীক্ষক থেকে চালক, গার্ড প্রত্যেকের তৎপরতায় বুধবার রাতে মুরারই হাসপাতালে পৌঁছে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিলেন মণিপুরের এক বাসিন্দা।
মুরারই হাসপাতাল ও রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন মণিপুরের বাসিন্দা সাহানি পরিবার। বুধবার হাওড়া থেকে তিনসুকিয়া এক্সপ্রেসে করে বাড়ি ফেরার পথে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় অঞ্জলি সাহানি নামে ওই মহিলার। বোলপুর স্টেশন ছাড়ানোর পরেই যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন ওই মহিলা। ট্রেনের অন্য যাত্রীরা রামপুরহাট স্টেশনে নেমে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন অঞ্জলির স্বামীকে। কিন্তু রাতে অচেনা জায়গায় নামতে চাননি তাঁরা। ট্রেন নলহাটি ছাড়ানোর পরে যন্ত্রণা বেড়ে যায় অঞ্জলির। ট্রেনের বার্থে শুয়ে প্রসূতিকে ছটফট করতে দেখে টিকিট পরীক্ষককে ডাকেন সহযাত্রীরা। তিনি অঞ্জলির পরিস্থিতি দেখে ট্রেনের গার্ড এবং চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই মহিলাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করার কথা বলেন। বিষয়টি জানানো হয় রেলের কন্ট্রোল রুমেও। কাছাকাছি রেলের চিকিৎসক পেতে হলে মালদহ পর্যন্ত পৌঁছোতে হবে। ট্রেন তখন মুরারই ঢুকছে। মুরারইতে এই ট্রেন দাঁড়ানোর কথা না থাকলেও চালক ট্রেন দাঁড় করান। মুরারইয়ের স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে স্ট্রেচারের ব্যবস্থা হয়। রেল পুলিশের সহায়তায় তড়িঘড়ি মুরারই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ওই প্রসূতিকে। হাসপাতালে চিকিৎসক দেখলেও ভাষার সমস্যা প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসক ওবাইদুর রহমান মোবাইল ফোনে অঞ্জলি ও তাঁর স্বামীর বক্তব্য রেকর্ড করে মণিপুরে থাকা এক বন্ধুকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান। তার বাংলা অনুবাদ করে পাঠান সেই বন্ধু। ইতিমধ্যে প্রসবের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়। রাত নটা নাগাদ একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন অঞ্জলি।
ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘অঞ্জলির পরিবারে লোকেদের কথা বুঝতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়ে ওঁদের কথাবার্তা মোবাইলে রেকর্ড করে আমার এক মণিপুরবাসী বন্ধুকে পাঠাই। সেই বন্ধু তাঁদের বাড়ির ঠিকানা ও নাম এবং প্রসূতির বিষয়ে বিস্তারিত বাংলায় অনুবাদ করে জানায়। পরিস্থিতি জটিল হলেও সেই মুহূর্তে পরিবারটির অসহায়তার কথা ভেবে আমি আর রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাইনি। অপারেশন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।’’ হাসপাতালের এক কর্মী জানান, মহিলারর সঙ্গে তাঁর স্বামী, তিনটি ছোট বাচ্চা এবং ননদ ছিলেন। অপিরিচিত জায়গায় এই পরিস্থিতিতে তাঁরা অসহায় বোধ করায় হাসপাতালের একটি ঘর খুলে দেওয়া হয়। রাতে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাতের জন্মের শংসাপত্রও বানিয়ে দেওয়া হয়। অঞ্জলির স্বামী বলেন, ‘‘বোনের চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলাম। এই হাসপাতালের সকলে খুব ভাল। মানবিকতার এমন নজির সারা জীবন মনে থাকবে।’’