সুস্মিতা মণ্ডল, আশাকর্মী (ইনসেটে)।
বাড়িতেই উঠেছিল প্রসব-যন্ত্রণা। সে কথা জেনে ছুটে এসেছিলেন আশাকর্মী। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফোন করে অ্যাম্বুল্যান্স আনিয়ে হাসপাতালের পথে দ্রুত রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু, পৌঁছনোর আগে রাস্তাতেই প্রবল হয় যন্ত্রণা। পরিস্থিতি দেখে ঝুঁকি নিয়ে মাঝ রাস্তাতেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রসব করালেন ওই আশাকর্মী। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মা ও সদ্যোজাত পুত্র আপাতত সুস্থই আছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে মহম্মদবাজারে। পুরাতন গ্রাম পঞ্চায়েতের বাতাসপুর গ্রামে বাড়ি নাজমা খাতুনের। পরিবার সূত্রের খবর, বছরখানেক আগে নাজমার বিয়ে হয় সেকেড্ডা পঞ্চায়েতের মীর ইয়াসিন রহমানের সঙ্গে। প্রথম প্রসবের আগে নাজমা বাপের বাড়ি বাতাসপুর গ্রামে এসেছিলেন। যাঁর তৎপরতায় প্রাণে বেঁচেছেন প্রসূতি ও সদ্যোজাত, সেই আশাকর্মী সুস্মিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা নাগাদ নাজমা খাতুনের বাড়ি থেকে ফোন আসে আমার কাছে। সঙ্গে সঙ্গে চলে যাই নাজমার বাড়ি। গিয়ে দেখি নাজমা প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছে। সঙ্গে সঙ্গে মহম্মদবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য ফোন করি।’’
তার মিনিট ২০ পরেই চলে আসে মাতৃযান। বাড়ি থেকে মহম্মদবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তখনও ১৬ কিলোমিটার। পরিবার সূত্রের খবর, ছয় কিলোমিটার আসার পরে প্রসব যন্ত্রণা অনেকটাই বেড়ে যায়। সুস্মিতাদেবীর কথায়, ‘‘তখনই বাধ্য হয়ে মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে করাতে হয় ডেলিভারি। জন্ম হয় ফুটফুটে পুত্র সন্তানের। তার পরেই সেখান থেকে মহম্মদবাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাই। প্রথমেই নাড়ি কাটা হয়। প্রাথমিক শুশ্রূষার পরে টিকাকরণও করা হয়েছে।’’
জেলায় এমন ঘটনা আগেও হয়েছে। চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা, প্রসূতি ও তাঁর পরিবারের সচেতনতার অভাব থেকেই অনেক সময় দেরিতে খবর দেওয়া হয়। তাতেই প্রসূতি ও সদ্যোজাতের প্রাণের ঝুঁকি তৈরি হয়। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘একই ভাবে স্বাস্থ্য দফতরকেও সতর্ক থাকতে হবে। আশাকর্মীদের কাছে তাঁর এলাকায় আসন্নপ্রসবা কে কে আছেন, তার তালিকা থাকে। সেখানে উল্লেখ থাকে প্রসবের সম্ভাব্য তারিখও। তাই আশাকর্মীদেরও আগে থেকেই সতর্ক করা উচিত। গাড়ির ভাউচারও দিয়ে দেওয়া হয়।’’
হেরুকা সাব সেন্টারের ফাস্ট এএনএম শম্পা সরকার জানাচ্ছেন, দফতরের নির্দেশ মেনে সে সব কাজ গুরুত্ব দিয়েই করা হয়। স্বাস্থ্য দফতরের প্রচারে কোনও ভাবেই যেন বাড়িতে প্রসব না করানো হয়, সে কথা বার বার বলা হয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই প্রচারের কাজ করেন আশাকর্মীরা। যে কোনও সমস্যাতেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলা হয়। দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছনোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। তাতে সাফল্যও মিলেছে। জেলায় আগের থেকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবও অনেক বেড়েছে। শম্পাদেবীর কথায়, ‘‘হেরুকা সাব সেন্টার এলাকায় গত এক বছরে একটিও হোম ডেলিভারি হয়নি। এটা আমাদের কাছে একটা সব থেকে বড় বিষয়।’’
মহম্মদবাজার বিএমওএইচ সুরাইয়া খাতুন মানছেন, ‘‘আশাকর্মী দিদিরা নিজেদের কাজ যত্ন নিয়ে করলেও অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, প্রসূতির পরিবারের সদস্যেরা এখনও তেমন সচেতন নন। আমাদের আরও চেষ্টা করতে হবে, যাতে এই ধরনের সমস্যায় মায়েদের পড়তে না হয়।’’ এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এখনও গ্রামের মহিলারা নিজেদের এলএমপি-র তারিখ ঠিক করে বলতে পারেন না। যার ফলে এই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। কিছু কিছু মহিলারা আছেন, যাঁরা অতিরিক্ত প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পরে স্থানীয় আশাকর্মীদের ফোন করেন। তাঁরা যদি সময় মতো সব জানিয়ে দেন, তা হলে এই সমস্যায় কাউকে পড়তে হবে না।’’