ভেঙে পড়ছে চাঙড়। বেহাল দশা জলাধারের। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
চলে এল আরও একটা পুরভোট। তাই ফের রামপুরহাট শহরের বাসিন্দারা ‘এ বারও ডাক্তারপাড়ার রিজার্ভার’ সংস্কার করা হল না বলে আক্ষেপ শুরু করছেন। প্রশ্ন উঠছে কবে সংস্কার?
বস্তুত এই শহরের ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১,১২, ১৩ এই ৯ টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জল সরবরাহ করার জন্য ১৯৮৪ সালে এই জলাধারটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সংস্কার আর হয়নি। এ দিকে জলাধারের চাঙড় মাঝে মধ্যেই খসে পড়ছে। তার আঘাতে আহতও হচ্ছেন অনেকে। কিন্তু কেন তা সত্ত্বেও জলাধারটি সংস্কার করা হচ্ছে না, সে প্রশ্ন তুলেছেন পুরবাসী। যদিও পুরকতৃর্পক্ষের আশ্বাস, বিকল্প একটি রিজার্ভার তৈরি করা হচ্ছে। তার পর ডাক্তারপাড়ার এই জলাধার ভেঙে ফেলা হবে। কিন্তু তার আগেই যদি জলাধারটি ভেঙে বড় দুঘর্টনা ঘটে যায়? আশঙ্কা রামপুরহাট পুরবাসীর।
রামপুরহাট পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তার পাড়ায় জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অফিস চত্বরেই ওই জলাধারটি রয়েছে। আশপাশে জনবসতিও রয়েছে। ১২টি স্তম্ভের উপরে প্রায় ৭০ ফুট উচ্চতার ওই জলাধারটি তৈরি করেছিল জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। ওই দফতর সূত্রে খবর, ১৯৯২ সালে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর রামপুরহাট পুরসভাকে জলাধারটি হস্তান্তর করে। কিন্ত গত কয়েকবছর ধরে জলাধারের সিমেন্টের চাঙর খসে পড়ছে। এতে বিপদ বেড়েছে।
বছর তিনেক আগে পুরসভার এক অস্থায়ী কর্মী জলাধারের ভালভ খুলতে এসে খসে পড়া চাঙরের আঘাতে গুরুতর জখম হন। প্রাণে বেঁচে গেলেও সেই কর্মী এখনও ঠিক মতো চলাফেরা করতে পারেন না। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্মীরা জানান, মাঝে মধ্যেই চাঙর খসে পড়ে। চাঙড়ের আঘাতে দফতরের কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তলা থেকে উপরের দিকে তাকালে জলাধারের বেহাল দশা ভাল করে দেখতে পাওয়া যায়। সিমেন্টের স্তম্ভগুলির জীর্ন হয়ে লোহার রড বেরিয়ে পড়েছে। জলাধারের উপরে উঠার লোহার সিঁড়ি মাঝখান থেকে ভেঙে পড়েছে আগেই। সে জন্য রিজার্ভার পরিষ্কারের কাজও বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ঘোলা জলই এলাকাবাসীকে এখন পান করতে হয়। তা নিয়েও বাসিন্দাদের কম ক্ষোভ নেই। এ দিকে বেহাল জলাধারের পাশ দিয়ে শহরের একটি ব্যস্ত রাস্তা চলে গিয়েছে। এ ছাড়া আশপাশ এলাকাতেও জনবসতি রয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঝড় উঠলে তাঁদের ভয়ে বুক কাঁপে। এই বুঝি কিছু অঘটন ঘটল সেই আশঙ্কায় দিন কাটাতে হয়।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের রামপুরহাট বিভাগের বাস্তুকার বিশ্বনাথ দাস জানান, কিছুদিন আগে অফিস চত্বরে মজুত প্লাস্টিক পাইপে আগুন লেগেছিল। মিনিট দশেকের মধ্যে দমকল কর্মীরা এলাকায় পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। কিন্তু সেই সময় আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা যে ভাবে জলাধারের চারপাশে চলে এসেছিলেন তাতে দফতরের কর্মীরা অন্য বিপদের আশঙ্কা করছিলেন। সেই সময় জলাধারটি ভেঙে পড়লে পড় বিপদ ঘটে যেতে পারত। তিনি বলেন, ‘‘জলাধারটি সংস্কারের জন্য আমি একাধিকবার পুরসভাকে চিঠি দিয়েছি। আমার আগের আধিকারিকরাও এ ব্যাপারে পুরসভাকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত পুরসভা সংস্কারে নামেনি।’’
তাঁর মতে, জলাধারটি প্রতি মাসে একবার করে পরিষ্কার করার দরকার। কিন্তু তা হচ্ছে না। এ দিকে ওই জলই পান করতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের বীরভূম জেলার নির্বাহী বাস্তুকার অর্দ্ধেন্দু দত্ত জানান, রামপুরহাট পুরসভার জলাধারের সংস্কারের জন্য তাঁরা একাধিকবার পুর দফতরে প্রকল্প ব্যয় পাঠিয়েছেন। কিন্তু রামপুরহাট পুরসভা এ নিয়ে উদ্যোগী হয়নি।
রামপুরহাটের বিদায়ী পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারির দাবি, ‘‘ডাক্তারপাড়ার জলাধারটি ভেঙে ফেলার অনুমোদন এসেছে। নতুন করে তৈরি করার প্রকল্প ব্যয়ও পাঠিয়েছি। তা এখনও অনুমোদন হয়নি। টাকা বরাদ্দ হলেই পুরনো জলাধার ভেঙে নতুন জলাধার তৈরি করা হবে।’’
তিনি জানান, ইতিমধ্যেই শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন একটি রিজার্ভার তৈরি করা হচ্ছে। তা তৈরি হয়ে গেলে ৩ নম্বর ওয়াডের্র পুরনো জলাধারটি ভেঙে ফেলা হবে।