পাহাড়েশ্বরের কাছে তৈরি হচ্ছে জলাধার।—নিজস্ব চিত্র।
বয়স গড়িয়েছে চল্লিশে।
কিন্তু, এখনও শহরের সব অংশের মানুষকে পানীয় জল খাওয়াতে ব্যর্থ দুবরাজপুর পুরসভা!
অন্তত এমন অভিযোগেই সরগরম শহর। এ বার পুরভোটেও তাই বিরোধীদের ইস্যু দুবরাজপুর শহরে পরিস্রুত পানীয় জলের সঙ্কট। কার্যত জল নিয়ে পুরসভার বদনাম দীর্ঘদিনের। গেল পুরভোটে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রচারেও বারবার ওই প্রসঙ্গ উঠছিল। পুরসভার দাবি অবশ্য, ২০১৬ সালের মধ্যেই সেই বদনাম ঘুচতে চলেছে। এক বছরেরও বেশি সময় আগে থেকেই কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘শহর পরিকাঠামো উন্নয়ন’ অনুমোদিত অর্থ সাহায্যে একটি জল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টেরটের(এমইডি)/ পুর কারিগরি দফতরের তত্বাবোধানে সেই কাজই সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে আশাবাদী। তিনি বলেন, “সময়েই কাজ শেষ হবে। খুব দ্রুত পুরবাসীর কাজে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে যাবে। সব ঠিকঠাক চললে প্রকল্প সময়েই শেষ হবে বলছে পুর কারিগরি দফতরও।
ঘটনা হল, পুরপ্রধান দাবি করলেও বেশ কয়েকটি বিষয়ে কিন্তু রয়েছে এখনও। দুবরাজপুর পুরসভার যে যে ওয়ার্ডগুলিতে জল পৌঁছয়নি, সেই সেই ওয়ার্ডগুলিতে পানীয় জল সরবরাহ করার জন্য প্রকল্প অনুমোদতি হয়েছিল আগেই। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ মোট ২৩ কোটি ১৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। ২০১৩ সালের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘শহর পরিকাঠামো উন্নয়ন’য়ের সেই টাকা ‘আর্বান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট স্কিম ফর স্মল অ্যান্ড মিডিয়ম টাউনস’-এর কাজের জন্য পুরসভার হাতে পৌঁছে যাওয়ার পরই হাত পড়ে প্রকল্পের কাজে।
দুবরাজপুর পুরসভা ও পুর কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠিক হয়েছে চারটি গভীর নলকূপের সাহায্যে অজয় নদ থেকে জল তুলে ১২.৭ কিমি দুরত্বের দুবরাজপুর শহরে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে পরিস্রুত পানীয় জল। সেই জন্য অজয় নদের পাড়ে রতনপুর মৌজায় তৈরি হবে পাম্প হাউস ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। পাইপ লাইনের মাধ্যমে আসা সেই পরিস্রুত জল জমা করার জন্য একটি বড় ও একটি ছোট, মোট দুটি জলাধার তৈরি হওয়ার কথা দুবরাজপুর শহরে। ১১ লক্ষ ৯০ হাজার লিটার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন জলাধারটি তৈরি হবে পাহাড়েশ্বরের কাছে। অন্যটির ধারন ক্ষমতা ১ লক্ষ ৫০ হাজার লিটার। সেটি শহরের সিনেমা হলের কাছে নির্মাণ হবে।
এই দুটি জলাধার থেকে প্রায় ৫৬ কিমি ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ লাইনের মাধ্যমে শহরের মোট ৮৩১১ টি বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার কথা। সেই কথা আদৌ রাখা সম্ভব হবে কিনা, সেটাই এখন দেখার। কেন না, পুর ও কারিগরি দফতর সূত্রের খবর ২০১৪ সালের শুরুতেই যে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল, দরপত্র ডাকা নিয়ে কিছুটা জটিলতার কারণে সেই কাজেই হাত পড়েছিল অন্তত ৭ থেকে ৮ মাস পড়ে। কারণ ই-টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আবেদন পত্র আহ্বান করা হলেও নুন্যতম তিনটি আবেদনের অভাবে এক-একটি দরপত্র বার বার ডাকা হয়েছে। কোনওটি অন্তত চারবার, কোনও ক্ষেত্রে পাঁচবার দরপত্র আহ্বান করার পর নির্দিষ্ট সংখ্যক অবেদন পত্র জমা পড়েছে। তাতেই গড়িয়ে গিয়েছে সময়।
এছাড়া অজয় নদ থেকে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশ দিয়ে জল সরবরাহের পাইপ লাইন শহরে আসার কথা। জাতীয় সড়ক চার লেনে পরিবর্তিত হওয়ার কারণে ওই পাইপ লাইন ঠিক কোন দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, সেটা নিয়েও কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে।
এ দিকে দুবরজাপুরের আগের একটি জলপ্রকল্পের পাইপ লাইন সরানোর জন্য পুরসভাকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তাহলে এক্ষেত্রে কোন অবস্থান নিতে হবে, সেটা স্পষ্ট নয়। রতনপুর মৌজায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের জন্য প্রযোজনীয় জায়গা ঘেরা হলেও, এখনও আসল কাজে হাত পড়েনি। দুটি জলাধারের একটির কাজ জোড়কদমে চালু হলেও অন্যটির জন্য সবে কাজে হাত পড়েছে। একটি জলাধার তৈরির জন্যই কমপক্ষে ৯ মাস লেগে যাওয়ার কথা। তার উপর ৫৬ কিমি শহরের মধ্যে ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হতে দেরি আছে। শহরের রাস্তা খুঁড়ে এতটা পথ পাইপলাইন বসানো খুব সহজ বলে মনে করছেন না অনেকেই।
২০০৩ সালে অজয় নদের গর্ভ থেকে জল তুলে বাড়ি বড়ি পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবারাহ করার জন্য একটি জলপ্রকল্প চালু হয়। তবে সেই প্রকল্পের দুবরাজপুর পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের সবকটিতে পানীয় জল পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পুরসভার ১, ২, ৯ ও আংশিক ভাবে ৮ ওয়ার্ডে জল পৌঁছয়নি। যে সব ওয়ার্ডে জল গিয়েছে, সেই সব ওয়ার্ডের জলের যোগানও পর্যাপ্ত নয় বলে ক্ষোভ রয়েছে এখনও। সেই সব দিকের কথা ভেবেই, নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের প্রতিটি প্রান্তে জল পৌঁছে যাওয়াটা সময়ে বাস্তবায়িত হয় কিনা সে দিকে তাকিয়ে শহরবাসী। পুর কারিগর দফতরের অ্যাসিস্টান্ট ইঞ্জিনিয়রের আশ্বাস, “নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা থাকবে।”