বগটুই গ্রামে ভোট কেন্দ্রে ভোটার রা। সব্যসাচী ইসলাম। রামপুরহাট।
ভোটের সকাল থেকে শাসকদলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে জেলা সরগরম। বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর আসছে। এমন এক আবহে ভোটের লড়াইয়ে অদ্ভুত রকমের শান্ত বগটুই গ্রাম।
গত বছর ২১ মার্চ রাতে বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখের খুনের পরে হিংসা ছড়িয়েছিল বগটুইয়ে। পুড়িয়ে-কুপিয়ে মারা হয় ১০ জনকে। স্বজনহারা সেই সব পরিবারের একাধিক সদস্য বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। এ বার ভোটে প্রার্থীও হয়েছেন। কিন্তু, দিনের শেষে কোনও গোলমালের খবর পাওয়া যায়নি বগটুইয়ে। প্রশাসন সূত্রে খবর, বিকেল পর্যন্ত গ্রামের ৩৪৫৩ ভোটারদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটদান পর্ব ঘিরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম বা বিজেপি, কোনও বিরোধীই অভিযোগ তোলেনি।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বড়শালের সব আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। বগটুইয়ের বাসিন্দা ভাদু শেখ হন উপপ্রধান। তাঁর খুন এবং বদলার খুনের জেরে শিরোনামে আসে বগটুই। এ বারের নির্বাচনেও বগটুই গ্রামের বড়শাল পঞ্চায়েতের দু’টি আসনে তৃণমূল প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। তবে, পূর্বপাড়া এবং উত্তর পূর্বপাড়ার দু’টি আসনে ভোট হচ্ছে। এ ছাড়া পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের আসনেও ভোট হয়েছে। পূর্বপাড়ার আসনে তৃণমূলের বিপক্ষে আছেন বিজেপি ও সিপিএম প্রার্থী। অন্য দিকে, উত্তরপূর্বপাড়া আসনে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের সরাসরি লড়াই।
শনিবার ভোট ঘিরে বগটুই গ্রামে ছিল যথেষ্ট উৎসাহ। গ্রামের জুনিয়র গার্লস হাইস্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শিশুশিক্ষা কেন্দ্র—এই তিনটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেই দেখা গেল সকাল থেকেই লাইন পড়েছে ভোটারদের। তিনটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ইএফআর কর্মীদের ঘেরাটোপে মহিলা ও পুরুষদের পৃথক পৃথক লাইন। উত্তর পূর্বপাড়ার ভোটগ্রহণ কেন্দ্র জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়ের দুশো মিটার দূরত্বের মধ্যে সিপিএম এবং তৃণমূল দুই দলের শিবিরে দলীয় কর্মীদের ভিড়। কিন্তু, কোনও বিবাদ নেই। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুর্বপাড়ার ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে দেখা মিলল বগটুই হত্যাকাণ্ডে স্বজনহারা তথা বিজেপি নেতা মিহিলাল শেখের। ভোটের লাইনে দাঁড়াবার আগে মিহিলাল বলেন, ‘‘আমাদের লড়াই গ্রামের সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে।’’ দিনের শেষে মিহিলাল জানালেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামে ভালোয় ভোট হয়েছে। বুথ দখল বা ছাপ্পাভোটের অভিযোগ নেই।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণও বলেন, ‘‘বগটুই গ্রামে বুথ দখল বা ছাপ্পাভোটের অভিযোগ সন্ধ্যা পর্যন্ত আসেনি।’’ গ্রামবাসীরা জানালেন, রাজনৈতিক লড়াই থাকতে পারে। কিন্তু, ভোট মিটলেই সবাই এক। ভোটের দিন গ্রামে আজ পর্যন্ত কোনও অশান্তি হয়নি।