ফের অমর্ত্য সেনকে নিশানা করলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
‘জমি-বিতর্কে’ আরও এক বার নাম না-নিয়ে অমর্ত্য সেনকে নিশানা করলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। রবিবার বিশ্বভারতীর নিজস্ব ওয়েবসাইটে ইংরেজিতে ১২ পাতার বার্তালাপে ‘জমি-বিতর্ক’ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের ‘অবনমমন’ সহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন উপাচার্য। দাবি করেছেন, অনেকে আছেন, যাঁরা বিশ্বভারতীকে ‘টেনে নামাতে’ বদ্ধপরিকর। বিশ্বভারতীকে ফের ‘সোনার ডিম’ দেওয়া হাঁসের সঙ্গে তুলনাও তিনি করেছেন। এই বার্তালাপ প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
বার্তালাপে বিশ্বভারতীর জমি দখলের অভিযোগ ফের তুলেছেন উপাচার্য। উপাচার্য দাবি করেছেন, বিবাদের সূত্রপাত এক টুকরো জমি, যা ইজারাদারদের এক জন ‘অবৈধ ভাবে দখল’ করে রেখেছেন। এখনও কোনও চূড়ান্ত উত্তর নেই, কিন্তু নথিগুলি প্রমাণ করে যে, বিশ্বভারতীর দাবি বৈধ। এ ক্ষেত্রে নাম না-নিলেও উপাচার্যের নিশানায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেই মনে করা হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে প্রতীচী বাড়িতে গিয়ে অমর্ত্যের হাতে জমির নথি তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বার্তালাপে উপাচার্যের বক্তব্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিষয়টি (জমি-বিতর্ক) আরও জটিল করে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি পুনরুদ্ধার করাই শেষ কথা বলেও উল্লেখ করা হয়। অমর্ত্যের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উপাচার্য অমর্ত্যবাবু বা কারও নাম করেননি। সে ক্ষেত্রে জমি দখল করার অভিযোগ অন্য কারও বিরুদ্ধে আছে কি না, তা সাধারণের কাছে পরিষ্কার হল না। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করব না।’’
উপাচার্যের মতে, জমির আইনগত মালিক কে, তা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নয়। কারণ, ব্যক্তি নশ্বর, কিন্তু প্রতিষ্ঠান থেকে যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেছিলেন যাঁরা, তাঁরা আজ নেই। কিন্তু, বিশ্বভারতী রয়ে গিয়েছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের ভূমিকা পালন করে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ‘দুর্নীতি’, গরুপাচার, মাফিয়াদের উত্থান, তাঁদের সম্পদ বৃদ্ধির প্রসঙ্গও এই বার্তালাপে টেনে আনা হয়েছে। উপাচার্যের অভিযোগ, ‘রাজনৈতিক উপরওয়ালাদের আশীর্বাদে অনৈতিক উপায় এই ধরনের সম্পদ তাঁরা তৈরি করেছেন’।
বিশ্বভারতীর বক্তৃতা সিরিজে সম্প্রতি এসেছিলেন অভিনেতা অনুপম খের। নিজের বার্তালোপে অনুপম কী ভাবে তাঁর জীবন শুরু করেছেন, সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন উপাচার্য। তাঁর মতে, বিশ্বভারতী হল সেই রাজহাঁস, যা সোনার ডিম দেয়। কিন্তু, সকলে ভুলে যান যে রাজহাঁসকেও যত্ন করে লালন-পালনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। উপাচার্যের দাবি, অনেক শিক্ষক-ছাত্র-শিক্ষাকর্মী আছেন, যাঁরা বিশ্বভারতীর শুভাকাঙ্ক্ষী। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। আবার এমন কয়েক জনও আছেন, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়কে টেনে নামাতে বদ্ধপরিকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যে যে কারণে নিম্নমুখী, সেগুলি তুলে ধরা হয়েছে বার্তালাপে।
ঘটনা হল, শিক্ষায় বিশ্বভারতীর ক্রম-অবনমন নিয়ে বিভিন্ন মহলে যথেষ্ট সমালোচিত বর্তমান উপাচার্য। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের র্যাঙ্কিং (এনআইআরএফ) অনুযায়ী এক দশক আগে এই প্রতিষ্ঠান ১১ নম্বরে ছিল। ২০২০ সালে ৫০ র্যাঙ্ক হয় বিশ্বভারতীর। পরের বছর আরও হয় ৬৪। ২০২২-এ আরও ৩৪ ধাপ নেমে ৯৮ নম্বরে ঠাঁই হয়েছে বিশ্বভারতীর।