তিনি চুলও বাঁধেন। দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকের ফাঁকে স্মৃতি ইরানি। বৃহস্পতিবার রমাকান্ত কুশওয়াহার তোলা ছবি।
বিশ্বভারতীর কলাভবনে ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনা ভোলেননি স্মৃতি ইরানি।
আর ভোলেননি বলেই বিশ্বভারতীর উপাচার্যের কাছ থেকে কৈফিয়ত চাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী। আগামী কাল চণ্ডীগড়ে দেশের সমস্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন স্মৃতি ইরানি। ওই বৈঠকে থাকার কথা বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তেরও। কেন বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে বারবার অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে ওই বৈঠকেই সুশান্তবাবুর কাছে মন্ত্রী কৈফিয়ত তলব করতে পারেন বলে স্মৃতি-ঘনিষ্ঠ মহলের খবর।
বস্তুত, বিশ্বভারতীর মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাধিক যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠায় তিনি যে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ, স্মৃতি তা ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েওছেন। বিশেষ করে, যে ভাবে কলাভবনের ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে, তা মোটেও ভাল ভাবে নেননি মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী। মন্ত্রকের একশো দিনের কাজ সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে বিশ্বভারতী প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। ইউজিসি-র ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং (তথ্যানুসন্ধান) কমিটির পাশাপাশি পুলিশও আলাদা করে তদন্ত করছে। তাই এর চেয়ে কিছু বেশি বলা যাবে না। তবে, রিপোর্ট এলে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে। পাঁচটি অধ্যাপক পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ ছাড়াও, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিঙ্গ বৈষম্য ও হয়রানির অভিযোগ আনেন এক মহিলা কর্মী। উঠেছে স্বজনপোষণের অভিযোগ। অগস্টেই এ সব অভিযোগের ভিত্তিতে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি। তারই মধ্যে গত মাসের শেষে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে বিশ্বভারতীতে পড়তে আসা কলাভবনের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী যৌন হেনস্থার শিকার হন। অভিযোগ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছেন। এর পরেই মন্ত্রকের নির্দেশে তথ্যানুসন্ধান কমিটিকে বিশ্বভারতীতে পাঠায় ইউজিসি। মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, তদন্ত রিপোর্ট এলেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বোলপুর আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতে যাচ্ছেন কলাভবনের নির্যাতিতা ছাত্রী। —নিজস্ব চিত্র
আজই বোলপুর আদালতে গোপন জবানবন্দি দিলেন কলাভবনের ওই নির্যাতিতা। ঘণ্টা তিনেক বোলপুরের সেকেন্ড জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সৌরভ নন্দীর কাছে গোপন জবানবন্দি দেন কলাভবনের ওই ছাত্রী। অসুস্থতার জন্য দিন সাতেক বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে থাকার পর গত কাল শান্তিনিকেতন ফিরে আসেন ওই ছাত্রী। আজ তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র তথা প্রাক্তনীদের সংগঠনের অন্যতম সদস্য সুবোধ মিত্র। সাম্প্রতিক ঘটনার কথা উল্লেখ করে সুবোধবাবু সিবিআই তদন্তের আর্জিতে চিঠিও পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক উদ্বিগ্ন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের মনোভাবেও। বিভিন্ন সূত্রে তারা জেনেছে, নির্যাতিতা যাতে পুলিশের কাছে অভিযোগ না জানায়, তার জন্য প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার যে অভিযোগ বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে উঠেছে, তা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রীও। স্মৃতি ইরানি বলেন, “সব শুনেছি। অথচ যৌন নিগ্রহ বা র্যাগিং-র মতো ঘটনা ঘটলে পুলিশকে সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। তা ছাড়া, এ বিষয়ে মন্ত্রকের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে।”