Elephants

হাতি আর মানুষ ঠিক যেন পড়শি, সাক্ষী ডাকাইসিনি 

গ্রামের শেষ প্রান্তে বন দফতরের তৈরি বাঁধে স্নান করছে হাতির দল। জলে খেলছে হস্তি শাবকেরা। ৫০ মিটার দূরে স্নান করছেন গ্রামের মানুষও।

Advertisement

তারাশঙ্কর গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫ ০৮:২৭
Share:
হাতিদের স্নান দেখতে ভিড়।

হাতিদের স্নান দেখতে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

এমনটা সচরাচর দেখা যায় না।

Advertisement

গ্রামের শেষ প্রান্তে বন দফতরের তৈরি বাঁধে স্নান করছে হাতির দল। জলে খেলছে হস্তি শাবকেরা। ৫০ মিটার দূরে স্নান করছেন গ্রামের মানুষও। অথচ কেউ আওয়াজ করে, ঢিল ছুড়ে বা খুব কাছাকাছি গিয়ে হাতিদের বিরক্ত করছেন না। মোবাইল হাতে ছবিও তুলছেন না।

হাতি ও মানুষের এমন সহাবস্থান হয়তো বড়জোড়ার ডাকাইসিনিতে না এলে বিশ্বাস করা যায় না। বাসিন্দাদের সচেতনতার প্রশংসা করেছে বনদফতরও। অনেকের মতে, বর্তমানে এমন সহজ যাপনের ছবি বিরল।

Advertisement

বন দফতর সূত্রে খবর, গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে বড়জোড়ার জঙ্গলে রয়েছে প্রায় ৬৮টি হাতির একটি দল। বেশির ভাগ সময় ডাকাইসিনি গ্রামের আশেপাশের জঙ্গলেই তাদের দেখা মেলে। গরম বাড়তেই সকাল-বিকেল নিয়ম করে বাঁধের জলে স্নান করতে আসছে হাতির দল। স্থানীয় দেবশঙ্কর তেওয়ারি বলেন, “বহু বছর ধরে আমাদের এলাকায় হাতির দল আসে। বেশ কয়েক মাস
থাকে ওরা। আমরা যদি ওদের বিরক্ত না করি তাহলে ওরাও আমাদের বিরক্ত করবে না।”

জঙ্গলের প্রায় আট কিলোমিটার ভেতরে এই গ্রাম। তিনশো মানুষের বাস। গ্রামে দুটি পুকুর। জলের ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত। এই গ্রামের প্রায় চারপাশেই হাতিদের ডেরা। ফলে, পুকুরে স্নান বা ঘরে থাকা দু’টোই সমান ঝুঁকির। হাতিরা স্নান করে বন দফতরের কাটা পরিখায়। তার পরে বৈদ্যুতিক বেড়া (ইলেকট্রিক ফেন্সিং) আছে। সেখান থেকে ৫০ মিটার দূরে গ্রামবাসীর স্নানের পুকুর। এই গ্রামে হাতির হানায় ক্ষয়ক্ষতিও হয়। ফসল নষ্ট হয়, ঘর ভাঙে। তা সত্ত্বেও হাতিদের প্রতি গ্রামবাসী অসহিষ্ণু নন।

গ্রামবাসীর এমন ভাবনা-চিন্তা তৈরি হওয়ায় দফতরেরও সাফল্য দেখছেন বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের ডিএফও দেবাশিস মহিমাপ্রসাদ প্রধান। তিনি বলেন, “গ্রামবাসী বন দফতরের প্রচারে সাড়া দিয়েছেন। এই তো চাই।”

বছরের কয়েকটি মাস বড়জোড়ার ডাকাইসিনি ও পাবয়া গ্রামে হাতি ও মানুষ প্রতিবেশীর মতো বাস করে। স্থানীয় প্রশান্ত সিংহের কথায়, “প্রতি বছর হাতির দল আসে।
তবে এ বারের দলটি যেন বেশিই শান্ত। ডাকাইসিনির বাসিন্দারা গর্ব করে বলতে পারি, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও আমরা কেউ ফোনে ছবি, ভিডিয়ো তুলে ওদের বিরক্ত করি না।” সমান সচেতন গ্রামের শিশু-কিশোররাও। তাদের অতি উৎসাহে হাতিরা বিরক্ত হোক বা ভয় পাক, চায় না কেউই।

তবে হাতি নিয়ে আগ্রহ আছে যথেষ্টই। হাতিদের কর্মকাণ্ড দেখে গোটা দিন কাটিয়ে দিতে পারেন স্থানীয় ভৈরব বাউরি। তিনি বলেন, “দল বেঁধে আসা যাওয়া, শাবকদের যত্ন
নেওয়া, জলে নেমে খেলা, দলপতির নির্দেশ মেনে চলা সব থেকেই শিক্ষা নেওয়া যায়। বাইরের মানুষ এসে ওদের বিরক্ত করলে আমাদেরও
বিপদ হতে পারে।”

গ্রামবাসী জানালেন, বন দফতর তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন। পথঘাটেও যথেষ্ট নজরদারি থাকছে। বাঁকুড়া উত্তর বন
বিভাগের ডিএফও দেবাশিসের কথায়, “ডাকাইসিনির ও আশেপাশের গ্রামের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। তাঁদের সহানুভূতিশীল মনোভাব ও বন্যপ্রাণ সচেতনতা প্রশংসা যোগ্য।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement