এ ভাবেই বেড়া দিয়ে লাগানো হয়েছে গাছের চারা। —নিজস্ব চিত্র।
নতুন তৈরি হওয়া পাকা রাস্তার দু’দিকে লাগানো হচ্ছে, শাল, বট, কদম, বকুল, শিরীষ, কৃষ্ণচূড়ার মতো নানা প্রজাতির গাছের চারা। আর সেই চারাগাছ বাঁচানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে কম খরচের বেড়া।
খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া থেকে মামুদপুর গ্রাম ছুঁয়ে যে পাকা রাস্তাটি হজরতপুরের দিকে গিয়েছে। সেই রাস্তা দিয়ে গেলেই চোখে পড়বে এমন দৃশ্য। সোমবার থেকেই বৃক্ষরোপণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা বন বিভাগ নয়। এই কাজে উদ্যোী হয়েছেন মামুদপুর গ্রামের বেশ কিছু তরুণ। তাঁদের এই উদ্যোগে পাশে রয়েছে গ্রাম।
মামুদপুর গ্রামের বাসিন্দা তথা বৃক্ষরোপণে উদ্যোগী সনৎ বাউড়ি, বুদ্ধদেব বাউড়ি জানাচ্ছেন, রাস্তার ধার ঘেঁষে অন্তত ৫০০ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই শতাধিক গাছ লাগিয়ে তাতে বেড়া দেওয়া হয়েছে। মলয় বাউড়ি, প্রকাশ ঘোষ, সৌরভ ঘোষেরা বললেন, ‘‘দিন সাতেকের মধ্যেই মিলিত উদ্যোগে সে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’’
গ্রামের যুবকেরা এমন কথা ভাবলেন কেন? তাঁরা বলছেন, ‘‘এবারের তীব্র গরমই গাছ লাগানোর ভাবনা উস্কে দিয়েছে।’’ ওই গ্রাম ছুঁয়ে হজরতপুর যাওয়ার রাস্তাটির কাজ কিছু দিন আগেই শেষ হয়েছে। রাস্তার দু’পাশে গাছ পালা নেই। মে মাসে তীব্র গরমের সময় গ্রামের তরুণদের মধ্যে আলোচনায় গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
গ্রামের তরুণেরা জানিয়েছেন, চার কিমি দৈর্ঘ্যের হজরতপুর যাওয়ার রাস্তাই নয়, ঠিক হয় গ্রামের অদূরে একটি মন্দির পর্যন্ত নতুন রাস্তার দু’দিকে গাছ লাগাতে হবে। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা সবাই বেশিরভাগ দিনমজুরি করি। কেউই সেভাবে প্রতিষ্ঠিত নই। স্বেচ্ছাশ্রমে গাছ লাগানো হলেও গাছের চারা কোথায় পাব, বেড়ার খরচ কী ভাবে উঠবে সেই ভাবনা শুরু হয়।’’ সনৎ, মলয়রা বলছেন, ‘‘আমাদের বন্ধুস্থানীয় পাশের কেন্দ্রগড়িয়া গ্রামের সায়ন সাঁই ৩০০টি গাছের চারা দিয়েছেন। গ্রামের আদিত্য বাউড়ি ৫০টি গাছের চারা দিয়েছেন। বাকি গাছের চারা বন দফতরে থেকে পাওয়া যাবে।’’
সকলের কাছে কিছু করে চাঁদা তুলে বাঁশ ও আলুর বস্তা (প্লাস্টিকের) জোগাড় চলছে, যাতে অনেক কম খরচে বেড়া দেওয়া যায়। সকলেই সাহায্য করছেন বলে জানিয়েছেন তরুণেরা। লাগানো গাছের চারা যাতে গরু-ছাগলে মুখ না দেয় সেজন্য গ্রামবাসীদের সাহায্য চাইতে ঢেঁড়া পিটিয়ে প্রচার হয়েছে। গ্রামের সকলে কথা দিয়েছেন গাছ বাঁচাতে তাঁরা সাধ্যমতো সাহায্য করবেন।
যিনি ৩০০ গাছের চারা কিনে এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন সেই সায়ন সাঁই বলছেন, ‘‘‘সকলেই আমার বন্ধু। ওঁদের সঠিক উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছি। গাছ না বাঁচলে আমরা বাঁচব না।’’ বনদ ফতরের দুবরপাজপুরের রেঞ্জার কেশব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভাল উদ্যোগ সন্দেহ নেই। তবে কতগুলি গাছ ওঁরা বাঁচিয়ে রাখতে পারেন সেটাই আসল চ্যালেঞ্জ।’’