বেহাল দশা ময়ূরেশ্বরের ঢেকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। —নিজস্ব চিত্র
প্রশাসনের সকল স্তরে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরাতে গ্রামবাসীরা চিঠি দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ না হওয়ায় এ বার তাঁরা চিঠি পাঠালেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার ঢেকার ঘটনা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল কয়েক বছর ধরেই বেহাল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে বরাদ্দ রয়েছে ১ জন ডাক্তার, ২জন নার্স, ১ জন ফার্মাসিস্ট, ১ জন জিডিএ এবং একজন সুইপার। কিন্তু ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বর্তমানে স্থায়ী কর্মী বলতে রয়েছেন ফার্মাসিস্ট এবং জিডিএ। এর ফলে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র কার্যত জোড়াতালি দিয়ে চলছে বলে অভিযোগ। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে উচ্চ শিক্ষার্থে ছুটি নিয়ে চলে যান ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক শুভব্রত মজুমদার। সেই পদে আজও কোনও স্থায়ী চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়নি। এতেই সমস্যা বেড়েছে।
পরিস্থিতি এমনই, মাস কয়েক ধরে সপ্তাহে মাত্র ১ দিন করে পালাক্রমে ১জন হোমিওপ্যাথিক এবং একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসককে পাঠানো হচ্ছে। সপ্তাহে একদিন একজন অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক অবশ্য আসেন। নার্সের অবস্থাও তথৈবচ। দীর্ঘ দিন ধরেই বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থেকে ১ জন করে তুলে এনে অস্থায়ীভাবে কাজ চালানো হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে অবসর নিয়েছেন সুইপার। কিন্তু তাঁর জায়গায় আজও কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। এর ফলে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফার্মাসিস্ট মইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘মাস পাঁচেক হল এসেছি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নথি অনুযায়ী ডাক্তার থাকাকালীন গড়ে শতাধিক রোগী আসতেন। এখন সাকুল্যে ৫০ থেকে ৬০ জন আসেন। কিন্তু আমরা আর কতটুকুই বা পরিষেবা দিতে পারি। অধিকাংশ রোগীকেই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিতে হয়। তাই আমাদেরও ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।’’
দেখভালের অভাবে কার্যত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে এখন গরু-ছাগল চরতে দেখা যায়। স্থানীয়রা ধান শুকতো দেন ভিতরের মাঠেই। এক স্বাস্থ্যকর্মীর কথায়, পরিস্থিতি এমনই পর্যায়ে পৌঁচেছে হঠাৎ কেউ এলে এখন বুঝতেই পারবে না এটি আদৌ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, না গোচারণভূমি! ওই স্বাস্থ্যকর্মী জানান, গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়ার আশঙ্কায় তাঁরা সব দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। অথচ ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেই এলাকার ২০ থেকে ২৫টি গ্রামই শুধু নয়, লাগোয়া মুর্শিদাবাদ জেলারও বহু মানুষ নির্ভরশীল। কিন্তু বেহাল দশার কারণে তাঁদের এখন দূরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটতে হচ্ছে।
নবগ্রামের কার্তিক ভল্লা, কুলিয়ারার সেন্টু দাসরা বলেন, ‘‘ডাক্তার না থাকলে সময় নষ্ট করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েই বা কি লাভ। রোগের উপসর্গ বললেই তো পাড়ার মোড়ের দোকান থেকেই ওষুধ মিলে যায়।’’ স্থানীয় বাসিন্দা দুকড়ি মণ্ডল, স্বাধীন মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডলরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরানোর জন্য প্রশাসনের সকল স্তরে জানিয়েছি। জানিয়েছি প্রাক্তন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছি।
আশিসবাবু বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের চিঠি পাওয়ার পরই আমি স্বাস্থ্যদফতরকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তার নিয়োগ হয়নি তা জানা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’