সিপিএমের সাংগঠনিক বৈঠক চলার সময় স্কুলে ঢুকে বোমাবাজি করে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রবিবার দুপুরে বাঁকুড়ার খাতড়া হাইস্কুলের ঘটনা। ওই সভায় উপস্থিত থাকা সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি-সহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ না করে তাঁদের ফিরিয়ে দেয় বলেও সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ।
ঘটনাটি শুনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ট্যুইট করে জানিয়েছেন, ‘‘তৃণমূলের গুন্ডারা বাঁকুড়ায় আমাদের পার্টি ক্লাসে বোমাবাজি করেছে। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন বিধায়ক দেবলীলা হেমব্রম ও অজিত পতি-সহ অনেকে আহত ও নিগৃহীত হন।’’ ঘটনার নিন্দা করে তিনি ব্যাপক প্রতিবাদ সংগঠিত করার ডাক দিয়েছেন।
খাতড়া হাইস্কুলে এ দিন দক্ষিণ বাঁকুড়ার খাতড়া, রানিবাঁধ, ইঁদপুর ও হিড়বাঁধ জোনের ১২০ জন শাখা সম্পাদককে নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। অজিতবাবু জানান, বৈঠক চলছিল স্কুলের দু’তলার হল ঘরে। দুপুর প্রায় সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রথমে স্কুল প্রাঙ্গণে বোমা ফাটে। আতঙ্কে কয়েক জন সিপিএম কর্মী জানালা দিয়ে নীচে উঁকি মারার চেষ্টা করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কিছুক্ষণের মধ্যেই জনা ছয়েক তৃণমূল কর্মী লাঠি হাতে হল ঘরে ঢুকে পড়েন। ওঁরা ঢুকেই বলতে থাকে— ‘মিটিং করা চলবে না।’ মাইক্রোফোন তুলে আমাদের দলের কয়েকজনকে মারতে থাকে। হলের মধ্যেও বোমা ফাটায়। আমাদের কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেন।”
অজিতবাবু প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁর হাঁটুতে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয় বলেও অভিযোগ। আরও কয়েক জন সিপিএম কর্মীকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। আহত হন দেবলীনা হেমব্রমের গাড়ির চালকও।
যদিও কাউকেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হননি। হল ঘরে বোমা ফাটার পরেই সিপিএম নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বেরিয়ে যান। হামলাকারীরাও এরপর সেখান থেকে চম্পট দেয়।
এর পর অজিতবাবু-সহ সিপিএম নেতৃত্ব খাতড়া থানায় ঘটনাটি নিয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি বলে দাবি তাঁদের। অজিতবাবু বলেন, “আমরা খাতড়া থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ আমাদেরই পাল্টা প্রশ্ন করে, অনুমতি না নিয়ে কেন আমরা ওই বৈঠক করছিলাম। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের জন্য পুলিশের অনুমতি কেন নিতে হবে? এটা জানালে পুলিশ আধিকারিক জানিয়ে দেন, তাহলে অভিযোগ জানানোরও দরকার নেই।” এমন কোনও অভিযোগ শোনেননি বলেই জানিয়েছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা। তিনি বলেন, “পুলিশ অভিযোগ নেয়নি এ রকম অভিযোগ শুনিনি। অভিযোগ পেলেই তদন্ত শুরু হবে।”
তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। অরূপবাবু বলেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। কিছু স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ঝামেলা করেছিলেন সিপিএম নেতারা। তার জেরেই ওই ঘটনা।”
এ দিকে এই হামলার প্রতিবাদে জেলার বিভিন্ন জায়গায় সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম নেতৃত্ব। এ দিন বিকেলে বাঁকুড়ার মাচানতলা মোড়ে, বেলিয়াতোড় ও বড়জোড়ায় সিপিএম এই হামলার প্রতিবাদে সভা করে। সেখানে নিন্দা করা হয়।