গ্রুমিংয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়

গতানুগতিক শিক্ষা নয়। তার বাইরে বেরিয়ে এসে ছাত্রছাত্রীদের আরও পরিণত করতে নানা পদক্ষেপ করছে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়।ব্যক্তিত্বের বিকাশে জোর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই ব্যাকরণগত ইংরেজি জানেন। তা সত্ত্বেও ইংরেজি বলতে বাধা বা লেখাতেও ততটা সাবলীল নয়। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মধ্যে অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন। তা নজর এড়ায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:১২
Share:

চলার শুরু থেকেই জেলার এক মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঘিরে পড়ুয়াদের প্রত্যাশা অনেকটাই। —ফাইল চিত্র

গতানুগতিক শিক্ষা নয়। তার বাইরে বেরিয়ে এসে ছাত্রছাত্রীদের আরও পরিণত করতে নানা পদক্ষেপ করছে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

ব্যক্তিত্বের বিকাশে জোর

ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই ব্যাকরণগত ইংরেজি জানেন। তা সত্ত্বেও ইংরেজি বলতে বাধা বা লেখাতেও ততটা সাবলীল নয়। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মধ্যে অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন। তা নজর এড়ায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

Advertisement

উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কী ভাবে এই সমস্যা কাটানো যায়, তা নিয়ে নানা চিন্তাভাবনা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিত্ব বিকাশের আলাদা ক্লাস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি বিভাগের প্রত্যেকটি থেকে প্রথম পাঁচজন পড়ুয়াকে বেছে নিয়ে মোট ৫৫ জনকে এই বিশেষ ক্লাসে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। গত দু’মাস ধরে এই ক্লাস চলছে। উপাচার্য জানান, ইংরেজি বলা ও লেখার উপর যেমন জোর দেওয়া হয়েছে, তেমনই ইন্টারভিউয়ে গিয়ে কী ভাবে কথা বলতে হয়, হাঁটাচলা, পোশাক-পরিচ্ছদ কেমন হওয়া উচিত সেই সবও শেখানো হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। এক কথায় গ্রুমিংয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে।

উপাচার্য বলেন, “মার্কশিটে ভাল নম্বর তোলার পাশাপাশি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁরা যাতে পিছিয়ে না পড়েন, সেই দিকটির বিকাশেই এই বিশেষ ক্লাস চালু করা হয়েছে।’’ আপাতত চতুর্থ বা শেষ সেমিস্টারের বাছাই করা ছাত্রছাত্রীরাই এই বিশেষ ক্লাস নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে প্রতিটি সেমিস্টারেই এই বিশেষ ক্লাস চালু করার চিন্তাভাবনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গ্রামে গ্রামে শুরু সমীক্ষা

বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ সম্প্রতি গ্রামে গ্রামে পড়ুয়াদের নিয়ে গিয়ে সমীক্ষা চালানোর কাজ শুরু করেছে। উপাচার্যের মতে, পড়ুয়ারা এই ভাবে গ্রামে গিয়ে সমীক্ষা চালানোয় একদিকে যেমন নিজেদের অনেক পরিণত করার সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনই আবার বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে, তাঁদের জীবনযাত্রার সঙ্গেও পরিচিত হচ্ছেন। তিনি জানান, সাধারণ মানুষের জন্য সরকারি যে সব প্রকল্প রয়েছে সেগুলি বিডিও-র কাছে আগে তাঁরা ভাল করে জানছেন। তারপর এক একটি প্রকল্প ধরে গ্রামে গিয়ে সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। বাসিন্দাদের সচেতনও করা হচ্ছে। সম্প্রতি বাঁকুড়া ২ ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের উপর একটি সমীক্ষা চালান পড়ুয়ারা। বিধবাভাতা, বার্ধক্যভাতার মতো সুযোগ সুবিধা যোগ্য প্রবীণ মানুষেরা তা পাচ্ছেন কি না তা নিয়ে পড়ুয়ারা কথা বলেন। এ ছাড়াও ঘরে ঘরে শৌচালয় গড়ার প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েও একটি সমীক্ষা চালানো হয়। এই প্রকল্পটি নিয়ে মানুষ সচেতন কি না তা খোঁজ নেওয়া হয়। বাড়িতে যাঁরা শৌচালয় বানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কতজন সেই শৌচালয় ব্যবহার করছেন সমীক্ষা করা হয় তা নিয়েও। উপাচার্য বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা এই সমস্ত সরকারি প্রকল্পগুলি নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সেই রিপোর্ট জেলাশাসকের দফতরে পাঠানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট জেলা প্রশাসনেরও কাজে লাগবে বলেই আমরা আশাবাদী।”

ভাবনা আইনি সহায়তা কেন্দ্রের

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তরফে আইন নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়েই আইনি সহায়তা কেন্দ্র গড়ে তোলার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। উপাচার্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু পড়ুয়াও আইন নিয়ে সে ভাবে সচেতন নয়। তাই আইন বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাই যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের সহপাঠীদের আইন নিয়ে সচেতন করে তাহলে বিষয়টি নিয়ে চর্চা আরও বাড়বে। আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়েই এই আইনি সহায়তা কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সহায়তা কেন্দ্রের দরজা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের জন্যও খোলা যেতে পারে।

দেখব এ বার জগতটাকে

বিশ্বের নানা দেশের ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানতে গেলে পুথিগত বিদ্যার উপরেই এতদিন ভরসা করতে হতো পড়ুয়াদের। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী হয়ে উঠছে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়। পড়ুয়াদের শুধু বই পড়িয়েই ক্ষান্ত থাকতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যতদুর সম্ভব ভিন্‌ দেশের সংস্কৃতির নমুনা ছাত্রছাত্রীদের চাক্ষুস করাতেও উদ্যোগী হয়েছে। পড়ুয়াদের তাই সম্প্রতি কলকাতার স্কটিশ সিমেট্রি (সমাধিক্ষেত্র) ও আমেরিকান সেন্টারের পাঠাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের নানা এলাকার অধ্যাপকেরা এসেও মাঝে মধ্যে ক্লাস নেন। তাঁরা নিজেদের দেশের অতীত, বর্তমান নিয়ে কথা বলেন। ছাত্রছাত্রীরা সেই সব কথা শোনার পাশাপাশি নিজের চোখে ওই সব দেশের গৌরবময় স্মৃতি দেখতে পেলে আরও ভাল বুঝতে বুঝতে পারবে বলেই অভিমত উপাচার্যের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement