রাজ্যে প্রধান বিরোধী দলের তকমা গত বিধানসভা ভোটেই হারিয়েছে সিপিএম। তারপরেও একের পর এক নির্বাচনে ভরাডুবি অব্যাহত। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বাঁকুড়ায় দলের দুই তাবড় নেতার উপরে শাস্তির কোপ বসাল সিপিএম। এতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে সিপিএম কর্মীদের মধ্যে।
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তথা দলের জেলা কমিটির সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে বহিষ্কার করেছে দল। এ ছাড়াও দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শেখর ভট্টাচার্যকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল তা অবশ্য খোলসা করেননি সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি। তাঁর মাপা বক্তব্য, “দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন ওই দুই নেতা। অপরাধ চরম হওয়ায় সুব্রতবাবুকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শেখরবাবুকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ভুল শুধরে নেওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, বেশ কয়েক মাস আগেই দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগের বিচার করে দলীয় সংবিধান অনুযায়ী জেলা কমিটিই শাস্তি বিধান করে রাজ্যে পাঠায়। দলের রাজ্য কমিটি সেই শাস্তি অনুমোদন করেছে।
ঘটনা হল, শেখরবাবু ও সুব্রতবাবু দু’জনেই সোনামুখী ব্লকের প্রথম সারির সিপিএম নেতা। শেখরবাবু সিপিএমের প্রাক্তন সোনামুখী জোনাল সম্পাদকও। গত বিধানসভা নির্বাচনে সোনামুখী বিধানসভায় দাপুটে তৃণমূল নেত্রী তথা প্রাক্তন বিধায়ক দীপালি সাহাকে পরাজিত করেন সিপিএম প্রার্থী অজিত রায়। ওই নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন সুব্রতবাবু ও শেখরবাবু। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই দুই নেতার শাস্তিকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সিপিএমেরই একাংশে।
দলের এক জেলা নেতার অভিযোগ, “সোনামুখীর বিধায়ককে তৃণমূলে নিয়ে যেতে উস্কানি ও প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন ওই দুই নেতা। মূলত সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের।” এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন সুব্রতবাবু ও শেখরবাবু দু’জনেই। সুব্রতবাবু বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ।” শেখরবাবু বলেন, “জানি না এই ধরনের অভিযোগ কেন তোলা হচ্ছে।” এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সোনামুখীর বিধায়কও কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সিপিএম নেতাদের একাংশ আবার দাবি করছেন, দলের কিছু জেলা নেতা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতেই পরিকল্পিত ভাবে ওই দুই নেতার উপর কোপ বসিয়েছেন। চলতি ডিসেম্বরেই দলের জেলা সম্মেলনে ওঁদের ভাল পদ পাওয়ারও একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তাই নিজেদের পদ বাঁচাতেই এই দুই নেতাকে সরিয়ে দেওয়া হল।
বহিষ্কারের পরে সুব্রতবাবু অন্য কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন কি না তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সুব্রতবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “আমি এখনই এ সব নিয়ে এখন ভাবছি না। তবে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে জেনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বহু নেতাই ফোন করে সমবেদনা জানাচ্ছেন।”
তবে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে দুই সক্রিয় নেতার উপরে শাস্তির খাঁড়া নেমে আসায় অস্বস্তি বেড়েছে সিপিএম শিবিরেও। জেলা সিপিএমের এক নেতার কথায়, “সুব্রতকে ফিরিয়ে আনতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।” এই সিদ্ধান্ত কি পঞ্চায়েত ভোটে প্রভাব ফেলবে? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, “আমাদের দলের কাছে শৃঙ্খলা সবার আগে। তার পরে অন্য কিছু।” তিনি যুক্ত করেন, “দল থেকে বহিষ্কার হয়েও অনেকেই ফিরে এসে নেতা হয়েছেন, এমন নজির রয়েছে।”
দলেরই একটি সূত্রের খবর, বের করে দিলেও সুব্রতবাবুর জন্য দল একেবারে কপাট বন্ধ করে দিচ্ছে, এমনটা বোধহয় নয়।