সাবধানতা: নিকাশি নালা পরিষ্কার চলছে বিষ্ণুপুরে। নিজস্ব চিত্র
সময়টা ২০১৪ সালের অগস্ট। বিষ্ণুপুর শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুমোরপাড়ার কাকলি কুচল্যান তিন বছরের ছেলে অয়নকে হারিয়েছিলেন। পার হয়ে গিয়েছে আরও তিনটে বছর। কাকলি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘কয়েক দিনের জ্বরে ছেলেটা চলে গেল। ডাক্তার বলেছিল ম্যালেরিয়া। তার পরে তো উন্নতি বলে কাঁচা ড্রেন পাঁকা আর একটা ছোট ভ্যাট। কিন্তু নিয়মিত সাফাই এখনও হয় না।’’
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলায় ২০১৬ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২৯ জন। তার মধ্যে মৃত্যু হয় ৪ জনের। ওই বছর ১১৪ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলেও কারও মৃত্যু হয়নি। এই শহর দেশ বিদেশ থেকে সারা বছর প্রচুর পর্যটক আসেন। ফলে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার শহরে আসার সম্ভাবনাও কিছুটা বাড়তি থাকে। কিন্তু শহরে মশার উপদ্রব কমিয়ে রোগের চিন্তা কমানোর কাজ কতদূর?
নিকাশি নিয়ে পুরশহরের বিভিন্ন এলাকায় এখনও ক্ষোভ রয়েছে। ৬ নম্বর, ৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং বাসস্ট্যান্ড অঞ্চলে প্রধান নিকাশি নালার আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, একবার ভারী বৃষ্টি হলেই ঘরে নোংরা জল থইথই করে। রাস্তা আর নালা একাকার হয়ে যায়। তাঁদের অভিযোগ, কাগজে কলমে থাকলেও পৌরকর্মীদের পথে নামতে দেখা যায় না। তার উপরে এ বছরই শহর জুড়ে রাস্তা সংস্কারে নেমেছে বিষ্ণুপুর পৌরসভা। গর্তে জমছে জল। কোথাও পাইপ বসানোর জন্য রাস্তা খোঁড়া হয়েছে। সেখানে হাঁটু জল টলটল করছে; বাড়ছে মশার লার্ভা।
বিষ্ণুপুর পুরসভার জনস্বাস্থ্য পরিদর্শক তুহিনশুভ্র কুণ্ডু অবশ্য দাবি করেছেন, সর্বত্র তাঁদের নজর রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কর্মী সংখ্যা কম। তার মধ্যেও অস্থায়ী কর্মী নিয়ে আমরা নিয়মিত পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছি। প্রত্যেক দিন ১২ জন কর্মী দুটো করে ওর্য়াডে গিয়ে মশার লার্ভা মারার ওষুধ ছড়িয়ে আসেন, চুন আর ব্লিচিং তো আছেই।’’ তাঁর দাবি, নিয়মিত নিকাশি নালা পরিষ্কার করা হয়। ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়া কী ভাবে আটকানো যায় তা নিয়ে সচেতন করতে ফেস্টুন টাঙানোর তোড়জোড় হচ্ছে।
বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি সব কাউন্সিলরদের নিজের নিজের ওয়ার্ডে নজর রাখতে বলেছি।’’ তিনি জানান, পুরসভার মেডিক্যাল অফিসার অমল বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধান করে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী তৈরী করা হচ্ছে। পাঁচটি দল তৈরি হয়েছে। তাঁরা পালা করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিদর্শন করবে। বাসিন্দাদের সচেতন করবেন। কারও জ্বর হয়েছে কি না, কত দিন ধরে জ্বর থাকছে, এ জাতীয় বিশদ তথ্য ওই দলগুলি ওয়ার্ড থেকে সংগ্রহ করে এনে পুরসভাকে দেবে। তার ভিত্তিতেই কাজে নামবে স্বাস্থ্য বিভাগের দল।
বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল অফিসার অরবিন্দ হালদার জানান, গরম এবং আর্দ্র পরিবেশ মশার বংশ বিস্তারে সহায়তা করে। পুরএলাকার বাসিন্দারদের খেয়াল রাখতে হবে, কোথাও যেন জল না জমে— সে নোংরা জলই হোক বা পরিষ্কার জল। সন্ধ্যায় ঘরের জানলা দরজা বন্ধ রাখা, নিয়মিত মশারি ব্যবহার, জ্বর হলে অবহেলা না করে সময় মতো রক্ত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।