জয়ের পরে দুবরাজপুরে তৃণমূল শিবিরে এক প্রার্থীকে নিয়ে উল্লাস। ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।
উপনির্বাচনে যাওয়ার আগেই অর্ধেক বাজি জেতা হয়ে গিয়েছিল। নির্বাচনের ফলাফলেও সেই ধারা অক্ষুণ্ণ রাখল শাসকদল।
দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ছাড়া, সবকটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে শাসকদলের প্রার্থীরাই জয়ী হল। বাদ গেল না ইলামাবাজারের মঙ্গলডিহি গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণডিহি আসনটিও। পাড়ুই থানা এলাকার মধ্যে থাকা ওই আসনটিকে নিয়ে ওই অঞ্চলে তৃণমূল না বিজেপি কার ক্ষমতা বেশি সেটা দেখানোর সেরা সুযোগ ছিল। বিজেপি নেতা সদাই শেখের জামিন পাওয়ার পরও মাত্র ১৭টি ভোটে তৃণমূলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্রার্থী জয়ী হওয়ায় মার্যাদা বজায় রাখল শাসকদলের। অনুব্রত বলছেন, ‘‘আশানুরূপ ফল হয়েছে।’’
জেলার যে ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ৩টি পঞ্চায়েত সমিতির উপ নির্বাচনের ফলাফলকে ঘিরে প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিল শাসক শিবির। বুধবার জেলার ৯টি ব্লকে উপ-নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯টি আসন ও ৩টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে জায়ী শাসকদলের প্রার্থীরা। শুধু মঙ্গলডিহি নয়, মহম্মদবাজারের সেকেড্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের যে আসনটিতে উপ নির্বাচনে এবার তৃণমূল জিতেছে সেটাই ২০১৩ সালে বামেদের দখলে ছিল। পঞ্চায়েতটিও বামেদের দখলেই রয়েছে।
ঘটনা হল, শাসকদলের অস্বস্তির জায়াগাও রয়েছে। দুবরাজপুরের সাহাপুর ও খয়ারশোলের রূপোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুটি আসনে হেরে যাওয়ায়। সেটাও আবার নির্দল প্রার্থীদের কাছে। রূপোষপুরের আসনটি গতবার ছিল তৃণমূলের দখলে আর সাহাপুরের আসনটি গতবার নির্দল থেকে জয়ী প্রার্থী পরে তৃণমূলে চলে আসেন এবার শাসকদলের হাত থেকে চলে যাওয়া, খানিকটা ধাক্কা বলছেন দলীয় কর্মী সমর্থকেরা। কেউ কেউ বলছেন রূপোষপুরের আসনটি নির্দল হলে আদতে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। যদিও এই জেতা হারায় পঞ্চায়েতগুলির সমীকরণে কোনও পরিবর্তন আনবে না।
বিরোধী দলগুলির ছবি কেমন?
ভোট প্রাপ্তির নিরিখে সিপিএম দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও শাসকদলকে বেগ দিতে পারর মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েনি। জেলায় মোট ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ৪টি পঞ্চায়েত সমিতির উপ নির্বাচনের কথা থাকলেও, অর্ধেকে গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ও একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করেছিলেন শাসকদলের প্রার্থীরা। প্রতিটি আসনে বিরোধী প্রার্থী দিতে না পারার কারণ হিসাবে শাসক দলের সন্ত্রাসকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল বিরোধীরা। বিশেষ করে মুরারই-১ব্লকের চাতরা পঞ্চায়েতের ১টি, মুরারই ২ এর আমডোল গ্রাম পঞ্চায়েতের ও রামপুরহাট ২ ব্লকের বুধিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে প্রার্থীদের ভয় দেখানো ও শাসকদলের সন্ত্রাস নিয়ে সরব ছিল কংগ্রেস। বিশেষ করে চাতরা গ্রাম পঞ্চায়েত আসনটিকে ঘিরে।
কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল বলছে, রামপুরহাট মহকুমায় তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের কোনওটিতেই সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি কংগ্রেস। বিজেপি একমাত্র মঙ্গলডিহিতে লড়াই দিয়েছে। তবে সামগ্রিক ভাবে বিরোধী দল হিসাবে, শাসকদলকে টক্কর দিয়েছে এমটা নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ হল, রাজ্য যে ভাবে পুর ও পঞ্চায়েত উপ নির্বাচনকে ঘিরে রক্ত ঝরেছে, অশান্তি হয়েছে বীরভূমে তেমন ঘটনা ঘটেনি।
সিউড়ি ভোট গণনাকেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র।
একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া পঞ্চায়েতের রসিদপুর প্রথামিক স্কুলের দুটি বুথ(৩ এবং ৪)। নির্বাচনের দিন বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়ে অবাধে ছাপ্পা দিচ্ছিল বহিরাগতরা। এই অভিযোগ করেছিল সিপিএম। অভিযোগের সত্যতা মেলার পরই খয়রাশোলের বিডিও তারকনাথ চন্দ্র ইভিএম সিল করে ভোটদান স্থগিত করে দেন। সোমবার কড়া পুলিশ ও প্রশাসনিক পাহারায় ফের ভোটগ্রহণ হয় ওই দুটি বুথে। কিন্তু ফলে প্রভাব পড়েনি। অত্যন্ত কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ভোট হয়েছিল ইলামবাজারের মঙ্গলডিহি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনটিতেও।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলছেন, ‘‘যেখানে সুষ্টু ভাবে ভোট হয়েছে অথচ শাসকদলই এগিয়ে থেকেছে, ধরে নিতে হবে মানুষ তাই চেয়েছেন।’’ অন্যদিকে বিজেপির জেলা সভাপতি অর্জুন সাহা বলছেন, ‘‘মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতে আসনটি অল্পের জন্য হেরেছি। বেশ কিছু মানুষ সে দিন ভোট দেননি। হারার অন্যতম কারণ সেটাও হতে পারে।’’