পুরবোর্ডের সদস্যদের বরণ। সঙ্গে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
পুরভোটের ফল ঘোষণার ২৪ দিন পরে পঞ্চম বারের জন্য সাঁইথিয়া পুরবোর্ড গঠিত হল। সেই সঙ্গে শুক্রবার অবসান ঘটল টানা দশ মাস ধরে চলা প্রশাসনিক বোর্ডের। যা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছিল।
প্রসঙ্গত, গত পুরবোর্ড কংগ্রেসের দখলে ছিল। পুরপ্রধান ছিলেন বীরেন্দ্রকুমার পারখ।২০১৩ সালের অক্টোবরে বিপ্লববাবু, বীরেন্দ্রবাবু-সহ কংগ্রেসের অধিকাংশ কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। দল নভেম্বরে বিপ্লববাবুকে পুরপ্রধান করে। গত বছর ২১ জুন ওই বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়। সেই থেকে এই পুরশহর ছিল প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত। এ দিন শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রথম তৃণমূল সাঁইথিয়ায় সরাসরি পুরবোর্ড গঠন করল।
এ দিন দুপুরে বোর্ড গঠনের কথা আগেই ঘোষণা করেছিল পুর কর্তৃপপক্ষ। জয়ী প্রার্থীদের শপথ নেওয়া অনুষ্ঠান দেখতে তাঁদের অজস্র অনুগামী মাথার উপর গনগনে রোদ আর চরম গরম উপেক্ষ করে হাজির হন রবীন্দ্র ভবনে। কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই জানতেন যে, এ দিনের উপস্থিত সবাইকে রবীন্দ্রভবনে জায়গা দেওয়া যাবে না। তাই পুর চত্বরে বড় স্ক্রিন লাগানো হয়। যাঁরা ভিতরে ঢুকতে পারবেন না তাঁরা যাতে সরাসরি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দেখতে পান।
ঘোষিত সময়ের মিনিট ১৫ পরে দুপুর সোয়া ১টা নাগাদ সদর মহকুমাশাসক অরুন্ধতী ভৌমিক সমস্ত (১৬) কাউন্সিলরকে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ শেষে পুরপ্রধান নির্বাচনের জন্য প্রথা মাফিক এসডিও-সহ সব কাউন্সিলরেরা গোপন স্থান হিসাবে পুরপ্রধানের কার্যালয়ে চলে যান। ওই সময় উপস্থিত মানুষ জনের মনোরঞ্জনের জন্য বাউল গানের ব্যবস্থা ছিল।
মাত্র তিনটি বাউল গান হতে না হতেই মঞ্চে ফেরেন এসডিও-সহ সব কাউন্সিলরেরা। ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং শহর সভাপতি পিনাকী দত্ত। মঞ্চ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা দেবাশিস সাহা ঘোষণা করেন, এসডিও-র উপস্থিতিতে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিবনাথ হাজরা পুরপ্রধান হিসাবে বিপ্লব দত্তের নাম প্রস্তাব করেছেন। বাকি দলীয় ১১ জন কাউন্সিলর হাত তুলে তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন। বিজেপি-র তিন মহিলা কাউন্সিলরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এসডিও পুরপ্রধান হিসাবে বিপ্লববাবুকে শপথবাক্য পাঠ করান। এর পরে বিপ্লববাবু মঞ্চেই উপ পুরপ্রধান হিসাবে কাজী কামাল হোসেনের নাম ঘোষণা করেন। তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান।
শপথ অনুষ্ঠান শেষে পুরসভার পক্ষে একটি ছোট্ট সোনার কৃষ্ণ মূর্তি, একটি ট্রলি ব্যাগ, ফুলের তোড়া ও উত্তরীয় দিয়ে এসডিও-কে বরণ করে নেওয়া হয়। অনুব্রতবাবুকেও একটি ছোট্ট ব্রিফকেস, ফুলের তোড়া ও উত্তরীয়-ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করা হয়। এর পরে বিপ্লববাবু-সহ সমস্ত কাউন্সিলরদের একে একে বরণ করা হয়।
পুরপ্রধান হিসাবে শপথ নেওয়ার পরে বিপ্লববাবু তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘‘আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হল, তা আমার একার পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। শহরের উন্নয়নের স্বার্থে সমস্ত মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সহযোগিতা করতে হবে। নিজেদের দায়িত্বও ভুললে চলবে না।’’ কী সেই দায়িত্ব? পুরপ্রধান বলেন, ‘‘সময় মতো কর দেওয়া, পুর নিয়ম মেনে গৃহ নির্মাণের অনুমতি নিয়ে বাড়ি করা, যাতে রাস্তা আলো বাতাস নিয়ে কোনও সমস্যা না হয়। জলের সমস্যা আছে। দেখতে হবে যাতে কেউ জল অপচয় না করেন।’’ সব শেষে তিনি বলেন, ‘‘সকলের কাছে আমার অনুরোধ, আমি আমার জন্য একটা বিষয়ে প্রার্থনা করছি। আপনারাও আমার জন্য প্রার্থনা করুন যাতে আমার মধ্যে কোনও দিন অহংকার না জন্মায়।’’