Kali Puja 2021

Kali Puja 2021: শেয়ালকে ভোগ দিয়ে শুরু হয় পুজো

পুজো শুরুর আগে শেয়ালকে দিতে হয় ভোগ। প্রতিমা গড়ার প্রথা থেকে পুজোর রীতি সবেতেই ব্যতিক্রমী গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের ওই কালীপুজো।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২১ ০৭:১৫
Share:

পাঁচড়া গ্রামে কালীপুজোর প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র।

‘কালী’ নামের সঙ্গে মিশে থাকে ভয় ভক্তি। এক দিকে তিনি সংহারের দেবী, অন্যদিকে তিনি স্থিতি, সৌভাগ্যের প্রতীওক। শতাব্দী প্রাচীন বহু কালী পুজো সূচনার সঙ্গে জুড়ে থাকে সেই ভয়, ভক্তি। এক তন্ত্রসাধক প্রতিষ্ঠিত খয়রাশোলের পাঁচড়া গ্রামের ক্ষ্যাপা কালী সেই গোত্রেই পড়ে। গ্রামের ওই কালী মূর্তি বেদিতে চাপানোর পরই গ্রামের অন্য প্রতিমা বেদিতে তোলা হয়। পুজো শুরুর আগে শেয়ালকে দিতে হয় ভোগ। প্রতিমা গড়ার প্রথা থেকে পুজোর রীতি সবেতেই ব্যতিক্রমী গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের ওই কালীপুজো।

Advertisement

বর্ধিষ্ণু গ্রাম পাঁচড়া। গ্রামের মধ্যেই ক্ষ্যাপা কালীর মন্দির। ২৬টি ছোট বড় শিব মন্দির দিয়ে ঘেরা। মন্দিরে গিয়ে জানা গেল, ১৯ পুরুষ আগে একদা রঙ্গলাল ভট্টাচার্য হিংলো নদী ঘেঁষা শ্মশানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই কালী প্রতিমা। সেই পুজো এখন অমৃতময় ভট্টাচার্য এবং প্রয়াত দয়াময় ভট্টাচার্য ও প্রয়াত লক্ষ্মীনারায়ণ ভট্টাচার্যের (দৌহিত্র) পরিবারের সদস্যদের কাঁধে।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, অশীতিপর অমৃতময় শোনালেন পুজো প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত। তিনি বলছেন, ‘‘তন্ত্রমতেই পুজো হয় দেবীর। হিংলো নদীর পাশ দিয়ে একটি শাখা নদী ছিল পাঁচড়া গ্রাম ঘেঁষে তার মধ্যবর্তী চর এলাকা কালীদহ নামে পরিচিত। সেখানেই তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন পরিবারের এক পূর্বপুরুষ ভৈরবনাথ ভট্টাচার্য। সেই সময় থেকেই শিবা বা শেয়ালকে কালীদহ গিয়ে ভোগ দিয়ে এসেই কালী পুজো শুরু করার রীতি।’’

Advertisement

পরিবারের সদস্য তাপস ভট্টাচার্য, অশেষ ভট্টাচার্যরা জানিয়েছেন, প্রথা অনুযায়ী নদী থেকে হাতে করে জ্যান্ত চ্যাং মাছ ধরে সেটিকে পুড়িয়ে, সঙ্গে পান্তা ভাত ও মদ দিয়ে ভোগ দিতে হয়। তিন শরিককেই একই প্রথা পালন করতে হয়। সেই জন্য কালী পুজোর দিন রাতে দেবীকে বেদিতে তোলার পর পাট কাঠি জ্বালিয়ে সকলে নদীতে যান। দেবীর ভয়ঙ্করী রূপদানের ক্ষেত্রেও মানা হয় এক গুচ্ছ নিয়ম। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ত্রয়োদশীর দিন প্রতিমা গড়ার কাজে হাত পড়ে। এ দিনই দেবীর বাঁ পায়ের জন্য একটি বেল কাঠ সংগ্রহ করতে হয়। বংশ পরম্পরায় একজন শিল্পীই প্রতিমা গড়েন। বাবুই দড়ি দিয়ে কাঠামো বাঁধতে হয়। উপোস করে রংয়ের কাজে হাত দিতে হয়। কোনও কৃত্রিম রং চলে না।
কালো রংয়ের জন্য ভুষো কালী তৈরি করা হয় প্রদীপের উপর সরা পেতে। তার সঙ্গে খাঁটি দুধ ও বেলের আঠা মিশিয়ে তৈরি হয় রং। চুলের বদলে ঝোলানো হয় চামর। বিসর্জন পর দিন সূর্য ডোবার আগে।

আচারে যাতে কোনও বিচ্যুতি না হয় সেই চেষ্টা চলে নিরন্তর। জানা গিয়েছে, একদা মাটির মন্দির ভেঙে গিয়েছিল বন্যায়। তারপরই পরিবার ও গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় নতুন পাকা মন্দির তৈরি হয়েছে বাংলা ১৩৯৫ সালে। পুজো ঘিরে জমজমাট থাকে গ্রাম। অমৃতময়বাবু জানাচ্ছেন, ‘‘আগে নির্জন কালীদহে পুজো গিতে গিয়ে শেয়ালের দেখা মিলত। এখন আর দেখা মেলে না ‘শিবা’র। তবে পরদিন গিয়ে দেখা যায় মালসা থেকে ভোগ খেয়ে গিয়েছে ওরা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement