দোকান আর মলের জোর টক্কর

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪৮
Share:

পুজোর আগে শেষ রবিবারে কেনাকাটায় মাতল পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া। শহর তো বটেই, গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দারাও ভিড় করলেন দোকানে, শপিংমলে।—নিজস্ব চিত্র

এক পক্ষের সঙ্গে ক্রেতাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। অন্যপক্ষের বয়েস মোটে এক বছর। এক পক্ষের সঙ্গে যদি ক্রেতাদের বিশ্বস্ততার সম্পর্ক থাকে, তবে অন্যপক্ষে আছে কেনাকেটায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য। সাবেকি পোশাকের দোকান আর শপিংমলকে দাঁড়িপাল্লায় বাছবিচার করতে করতেই পুজোর আগে শেষ রবিবারের ক্রেতাদের ভিড় আছড়ে পড়ল পুরুলিয়া শহরে।

Advertisement

পুজোর বাজার শুরু হয়েছিল আগেই। কিন্তু মাস পয়লার বেতন মিলতেই চাকরিজীবী পরিবারের লোকেরা এ দিন সকাল থেকেই বাকি কেনাকাটা সারতে বাজারমুখো হয়ে পড়েন। পুরুলিয়া শহরের পোশাকের বাজারের কেন্দ্র কাপড়গলি থেকে চকবাজার, চাঁইবাসা রোড— সর্বত্রই এ দিন ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। গত বছর পুজোর আগে শহরে দু’টি শপিংমল চালু হয়েছিল। গতবার ক্রেতাদের পাল্লা শপিংমলের দিকে ভারী থাকায় তাঁদের বিক্রিবাটায় কিছুটা মন্দা গিয়েছিল বলে শহরের পরিচিত বস্ত্র ব্যবসায়ারী স্বীকার করলেও, এ বার দাবি করছেন, তাঁরা পুরনো ক্রেতাদের ফিরে পেয়েছেন। যদিও তা মানতে নারাজ শপিংমলের কর্মকর্তারা। এই দু’পক্ষের রেষারেষিতেই পুজোর কেনাকাটা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে ক্রেতাদের কাছে।

পুরুলিয়ার বাজার অনেকটাই আশপাশের ব্লকগুলির উপরে নির্ভরশীল। ব্যবসায়ীরা জানান, পুরুলিয়ায় মাঠে ধান ভাল হলে বাজার জমে। টানা দু’বছর পরে এ বারে বৃষ্টি ভাল হওয়ায় বাজারে ভিড় রয়েছে। পুরুলিয়ার পোশাকের বাজারের সুনামের জন্য ঝাড়খণ্ডের অনেক থেকেও লোকজন কেনাকাটা করতে আসেন। তবে ঝাঁ চকচকে শপিংমল চালু হওয়ায় অনেক বস্ত্র ব্যবসায়ী এ বার নিজেদের দোকানের চেহারাও বদলাতে শুরু করেছেন— ক্রেতাদের স্বাচ্ছন্যের কথা ভেবে।

Advertisement

চাইবাসা রোডের এক বস্ত্র বিক্রেতা অশোক সারাওগির কথায়, ‘‘আমরা এ বার দোকানের জায়গা বাড়িয়েছি। ব্র্যান্ডেড পোশাক ও সাধারণ পোশাকের জন্য আলাদা কাউন্টার করেছি। পোশাক পরিবর্তনের ঘর বাড়িয়েছি। পুরো দোকানটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করেছি। পরিচিত অনেক ক্রেতাই দোকানে ঢুকে চমকে যাচ্ছেন।’’ তাঁর দোকানেই কেনাকাটা করতে বাঘমুণ্ডি থেকে দিদির সঙ্গে কেনাকাটা করতে কিশোর অরিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তার কথায়, ‘‘শপিংমলের সঙ্গে এখানকার কয়েকটা দোকান দেখছি রীতিমতো পাল্লা দিচ্ছে।’’

তবে অল্প কিছু দোকান চেহারা বদলালেও কাপড়গলির মতো সঙ্কীর্ণ জায়গায় সে সুযোগ ব্যবসায়ীদের বিশেষ নেই। তাঁরা অনেকেই এ বার বিভিন্ন ধরনের পোশাকের মজুত বাড়ানোয় জোর দিয়েছেন। যেমন বসন্ত খেড়িয়া নামের এক ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, শপিংমলের থেকে বেশি রকমের পোশাক তিনি দোকানে তুলেছেন। সিরিয়াল-সিনেমার কুশীলবদের নামের পোশাকও রেখেছেন। ক্রেতারা চাইলেই হাতে তুলে দিচ্ছেন। এই এলাকাতেই বাজার করার ফাঁকে পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা পার্থ চক্রবর্তী বললেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে কাপড়গলিতেই জিনিসপত্র কিনছি। একটা বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। দামও নায্য নেয়, গুণগত মান নিয়েও সংশয় থাকে না। এই ভরসা তো দু’দিনে তৈরি হবে না। গরমে ঘেমে একশা হলেও এখানেই কিনব।’’

তবে তাঁর সঙ্গে একমত নন পুরুলিয়া শহরের বধূ সুনীতা সরকার। তিনি বলেন, ‘‘শপিংমলে ঠান্ডা ঘরে একছাদের তলায় পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করা যায়। আমি তো এখানে বিভিন্ন রাজ্যের প্রচুর শাড়ির স্টক দেখলাম। হাতে নেড়েচেড়ে কেনাকাটি করছি।’’ সহমত আনাড়া থেকে মাসির সঙ্গে কেনাকাটা সারতে আসা তরুণী প্রিয়ঙ্কা পান্ডের। তিনিও শহরের একটি শপিংমলে কেনাকাটা সারছিলেন। বললেন, ‘‘পছন্দের জিনিস কিনতে এ দোকান, ও দোকান করতে হল না। শপিংমলেই সেই জিনিস পেয়ে গেলাম।’’

সেই ভরসাতেই একটি শপিংমলের ম্যানেজার শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করছেন, ‘‘আমরা এমন কিছু হালফ্যাশনের পোশাক আমদানি করেছি যা আ কোথাও মিলবে না। এ ছাড়া বেশি দামের কেনাকাটায় ‘গিফট ভাউচার’ দেওয়া হচ্ছে।’’ পাশের অন্য একটি শপিংমলের ম্যানেজার অজয়কুমার শর্মা জানাচ্ছেন, তাঁরাও ভাল সাড়া পাচ্ছেন। তবে যতটা ভিড় আশা করেছিলেন এখনও ততটা ভিড় হচ্ছে না।’’ এই শপিংমলেরই এক ব্যবসায়ী অজয় কাটারুকা বলছিলেন, ‘‘আমাদের ব্র্যান্ডেড পোশাকের শোরুম। বিক্রিবাট্টা হচ্ছে ঠিকই, তবে পুজো উপলক্ষ্যে আরও ভাল বাজার আশা করেছিলাম।’’

ব্যবসায়ীদের আশা-হতাশার এই টানাপড়েনের মধ্যেই সাবেকি দোকান আর শপিংমলের দ্বৈরথ উপভোগ করছেন ক্রেতারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement