গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রচার তৃণমূলের। নিজস্ব চিত্র
মহম্মদবাজারের প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রকল্প নিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে মুখ্যসচিবের বৈঠকের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই মাঠে নামল শাসকদল!
বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ সরকারের তরফে যে বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন, শুক্রবার সকাল থেকে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সেটা প্রচার করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। তাঁদের বার্তা , ‘কাউকে বঞ্চিত করে নয়, কারও ক্ষতি করে নয়, একশো শতাংশ পুনর্বাসন করে তবেই তবেই কয়লা খনির কাজে হাত দেবে সরকার।’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে মহম্মদবাজার ব্লকের ব্লকের ভাঁড়কাটা, হিংলো, সেকেড্ডা, পুরাতনগ্রাম ও ডেউচা সহ ১১টি মৌজায় মাটির নিচেই রয়েছে বিশাল কয়লা ভাণ্ডার। মৌজাগুলি হল: হাটগাছা, চাঁদা, পাঁচামি, আলিনগর, মুকদমনগর, সালুগা, কাবিলনগর, নিশ্চিন্তপুর, দেওয়ানগঞ্জ, হরিণশিঙা ও বাহাদুরগঞ্জ। মুখ্যসচিব জানিয়েছিলেন, মোট সাড়ে তিন হাজার একর জুড়ে থাকা কোল ব্লক থেকে কয়লা উত্তোলন ধাপে ধাপে হবে।
পুজোর পরে যে মৌজাগুলিতে কাজ শুরু করার কথা ভাবা হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে, সেগুলি হল দেওয়ানগঞ্জ, হরিণশিঙা, নিশ্চিন্তপুর, এবং চাঁদা। একমাত্র চাঁদা মৌজা ভাঁড়কাঁটা পঞ্চায়েতের অধীনে। বাকি মৌজাগুলি হিংলো গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রস্তাবিত খনি এলাকায় থাকা সেই হিংলো পঞ্চায়েতের দেওয়ানগঞ্জ, হরিণশিঙা, নিশ্চিন্তপুর ও জগৎপুর গ্রামে এ দিন সকালে ও বিকেলে প্রচার চলেছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা তো ছিলেনই, গ্রামের মানুষের কাছে খনি নিয়ে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শিবদাস দাস এবং প্রতিটি সংসদের নির্বাচিত তৃণমূল সদস্যেরা।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা মহম্মদবাজারের ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এত বড় একটা প্রকল্প হাতে নিয়ে সরকার নিজে করছে। সকলের ভালর জন্যই এই শিল্প হবে— এ কথা বোঝানো হয়েছে মানুষজনকে। পাশাপাশি বাইরের কেউ যাতে এলাকাবাসীকে ভুল বোঝাতে না পারেন, সে ব্যাপারেও সজাগ করা শুরু হয়েছে।’’ বাইরের কেউ বলতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের লোকেদের কথা বলছেন কিনা, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি কালীবাবু।
তবে, বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের কটাক্ষ, ‘‘এত তাড়া কিসের! এখন থেকেই লাভের অঙ্ক দেখতে পাচ্ছেন নাকি!’’ মুখ্যসচিবের বৈঠক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কেন প্রস্তাবিত কয়লাখনি এলাকার মানুষদের সঙ্গে বৈঠক হল না, কেন সর্বদল বৈঠক হল না? মুষ্টিমেয় কিছু তৃণমূল নেতা এবং তৃণমূল আশ্রিত লোকদের বোঝালেই কয়লা খনি হবে না। সকলের স্বার্থ সুরক্ষিত না করে কাজে নামলে খনি সম্ভব নয়।’’
প্রস্তাবিত খনি এলাকার বেশ কয়েকটি আদিবাসী গ্রাম থেকে মোট ২০ জন বাসিন্দাকে নিয়ে বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিবের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী সংগঠনের নেতা রবীন সরেন। তিনিও বৈঠক শুরু করেছেন এলাকায়। বৃহস্পতিবারই তিনি বৈঠক করেছেন চাঁদা মৌজার সাগরবন্দি গ্রামে। তবে তৃণমূল নেতাদের মতো একটি বৈঠক থেকেই এতটা আশার আলো দেখছেন না রবীন।
তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যসচিব বলেছেন, স্থানীয় মানুষের কথা বলে খনি হবে। যাঁর যা আছে, পুর্নবাসন হিসেবে সেটাই তিনি পাবেন। কিন্তু যাঁদের ভিটে মাটি হারাতে হবে, তাঁদের কর্মসংস্থানের বিষটি স্পষ্ট করেননি মুখ্যসচিব। জমির বদলে জমি দিলে কোথায় কত দূরে দেওয়া হবে, সেটাও স্পষ্ট নয়।’’ তাঁর আরও দাবি, মাটির নীচে পাথর আছে। তাই প্রত্যন্ত এই এলাকাতেও এক কাঠা জমির দাম প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। পাথর তোলার অধিকার দিলে টন প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে পায় একটি আদিবাসী পরিবার। সঙ্গে পাথর খাদা, ক্রাশার বা পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত হয়েও আয়ের সুযোগ থাকে। রবীনের প্রশ্ন, ‘‘সেই সব দিক কি সরকার দেখবে?’’