ঘটনার প্রতিবাদে এলাকায় তৃণমূলের মিছিল। —নিজস্ব চিত্র
দুষ্কৃতী হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও খয়রাশোলের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা দীপক ঘোষের দু’টি চোখই ভাল রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই আহত দীপককে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। পরে সেখান থেকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চোখ যাতে বাঁচে, সেই লক্ষ্যে আরও ভাল চিকিৎসার জন্য শুক্রবার সন্ধ্যায় দীপককে বিমানে চাপিয়ে হায়দরাবাদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দুই সঙ্গীকে নিয়ে মোটরবাইকে নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে খয়রাশোল বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন দীপক। তিনি মাঝে বসেছিলেন। তখনই থানা থেকে তিনশো মিটার দূরে দু’টি মোটরবাইকে চেপে এসে দীপকদের ধাওয়া করে মুখঢাকা চার জন। প্রথম মোটরবাইক থেকে দীপককে লক্ষ করে গুলি চালানো হয়। গুলি দীপকের মুখ ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। ওই পরিস্থিতিতে রক্তাক্ত দীপককে নিয়ে একটি অন্য পথ ধরে সোজা থানায় হাজির হয়ে যান তাঁর দুই সঙ্গী। তাঁদের তৎপরতায় এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান দীপক।
চিকিৎসা নিয়ে দিনভর ব্যস্ত থাকায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দীপকের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করতে পারেনি। তবে, রাতের দিকে স্ত্রী মিঠু ঘোষ এফআইআর করতে পারেন বলে খবর। অন্য দিকে, প্রিয় নেতাকে খুনের চেষ্টার প্রতিবাদে এ দিনই খয়রাশোলে প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল। কড়া পুলিশি পাহারায় সকাল ১১টা নাগাদ দলীয় কার্যালয় থেকে বাজার এলাকা ঘুরে ফের কার্যালয়ে এসে ওই মিছিল থামে। মিছিল থেকে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। পুলিশের কাছে একই দাবি জানিয়েছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, খয়রাশোলের তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমতা যাঁর হাতে, এলাকার সব কিছুর নিয়ন্ত্রক তিনি-ই। এলাকা দখলদারিকে কেন্দ্র করে খয়রাশোলে এর আগেও বহু রক্ত ঝরেছে। একই কায়দায় খুন হয়ে গিয়েছেন যুযুধান দুই গোষ্ঠীর নেতা অশোক ঘোষ (দীপকের দাদা) এবং অশোক মুখোপাধ্যায়। তবে, বর্তমানে দুই গোষ্ঠীর নেতা দীপক ঘোষ এবং অশোক মুখোপাধ্যায়ের ভাই মাখন মুখোপাধ্যায়রা এক ছাতার তলায় চলে এসেছেন বলে তৃণমূল সূত্রেরই দাবি।
তার পরেও দ্বন্দ্ব কেন?
দলীয় সূত্রে খবর, সম্প্রতি তৃণমূল পরিচালিত লোকপুর পঞ্চায়েতে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা পাশ হয়েছে। খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভানেত্রী অসীমা ধীবরের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়েছে। সেটাও দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশকে উপেক্ষা করে। তৃণমূলের এক জেলা নেতার দাবি, এই দু’টি ক্ষেত্রেই দলের অন্দরে দীপকের বিরুদ্ধে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে এলাকার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ কার্যত অশোক ঘোষের ভাইয়ের হাতে চলে এলেও দীপক-বিরোধী একটি অংশ বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে বলে এলাকার নিচুতলার তৃণমূল কর্মীদের বড় অংশের দাবি। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, প্রায় দু’বছর ধরে বন্ধ থাকার পরে ফের খুলতে চলেছে খয়রাশোলের দু’টি খোলামুখ কয়লাখনি। ওই কয়লা উত্তোলনকে ঘিরে স্থানীয় যে অর্থনীতি, তার রাশ কার হাতে থাকবে— তা নিয়েও শাসকদলের অন্দরে চাপা উত্তেজনা আছে। এলাকার প্রভাবশালী নেতার উপরে হামলার পিছনে সব ক’টি দিকই খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ।
অন্য দিকে, অসীমাদেবীর বিরুদ্ধে জমা পড়া অনাস্থায় যাঁরা সই করেছেন, এ দিন সেই সমস্ত সই মিলিয়ে দেখার কথা ছিল খয়রাশোলের বিডিও তারকনাথ চন্দ্রের। কিন্তু এলাকায় উত্তজনা থাকায় মহকুমাশাসকের নির্দেশে আপাতত তা বাতিল করা হয়েছে। সই করা ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জন সদস্যই এ দিন হাজির হন। নির্দেশের কথা জেনে তাঁরা ফিরে যান।