কৃষক কমিটির সদস্যদের শিল্পের পক্ষে টানতে আলোচনায় বিধায়ক ও তৃণমূল নেতৃত্ব।—নিজস্ব চিত্র
শিল্পের দাবিতে পথে নেমে মিছিল করার দু’দিনের মধ্যেই গ্রামে গিয়ে জমিদাতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
রঘুনাথপুরের শিল্পতালুকের জমি ফেরত চেয়ে সম্প্রতি জমিদাতাদের একাংশ প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু ওই জমিতে শিল্প চেয়ে মিছিল করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। শুধু মিছিলেই আটকে না থেকে মঙ্গলবার দুরমুট গ্রামে গিয়ে জমি ফেরানোর দাবি তোলা ‘কৃষি কমিটি’র সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করলেন রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি। যদিও দিনের শেষে কোনও রফা সূত্রে বেরোয়নি। বৈঠকের পরে কৃষি কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা আপাতত জমি ফেরতের দাবি থেকে সরছেন না। শুক্রবার মহকুমাশাসকের কাছে গণ ডেপুটেশন দেওয়ার কথা কৃষি কমিটির। ওই কর্মসূচির বদল করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কমিটি।
যদিও বিধায়কের পাল্টা দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার রঘুনাথপুরে শিল্প গড়তে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে। এ কথা এ দিন জমিদাতাদের জানিয়েছি। জমিদাতাদের অনেকেই জানিয়েছেন, সরকারের পাশে তাঁরা থাকছেন।’’ শাসকদলের দাবি, দলের নিচুতলার যে লোকজন কমিটির সঙ্গে জমি ফেরতের দাবি তুলেছিলেন, এ দিনের বৈঠকের পরে তাঁরা শিল্পের প্রতিই মত দিয়েছেন।
এ দিনের সভায় কয়েকজন চাষিকে বলতে শোনা গিয়েছে, তাঁরা রাজ্য সরকারে পাশে আছেন। এমনকী কৃষি কমিটির সম্পাদক বাণেশ্বর গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত মতামত বিধায়ক যখন বলছেন রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে, তখন এলাকায় শিল্প গড়তে আরও কিছু সময় দেওয়ার প্রয়োজন।’’ তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী জানাচ্ছেন, কমিটির মধ্যে একটা অংশকে শিল্পের পক্ষে নিয়ে আসাতে পারা, কম সাফল্য নয়।
বাম আমলে ২০০৭-২০১১ সালে রঘুনাথপুর ১ ব্লকে শিল্পতালুকের জন্য ১,৮৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্য। জয় বালাজি গোষ্ঠীকে প্রায় ১,২০০ একর জমি সুসংহত ইস্পাত, সিমেন্ট ও ‘ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট’ তৈরির জন্য দেওয়া হয়। কারখানা গড়তে ১০০ একর করে জমি পায় রিলায়েন্স সিমেন্ট ও ইমামি সিমেন্ট। ইমামি প্রকল্প বাতিল করে জমি ফেরত দিয়েছে। রিলায়েন্স সিমেন্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়মিত কাজ চলছে। আর জয় বালাজির তরফে দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যেই ওই জমিতে তারা প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু ইস্পাতের বাজারে মন্দা ও দুর্নীতির অভিযোগে কয়লা ব্লক বাতিল হয়ে যাওয়ায় কয়লার জোগান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় রঘুনাথপুরে বিশেষ কাজ এগোয়নি। এই অবস্থায় সিঙ্গুরের জমি নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে রঘুনাথপুরের শিল্পতালুকের জমি ফেরতের দাবি জানায় ‘কৃষি কমিটি’। শিল্প না হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে কৃষি কমিটি গত সপ্তাহে ওই জমি ফেরত চেয়ে মহকুমাশাসকের (রঘুনাথপুর) কাছে স্মারকলিপি দেয়।
কেন্দ্র সরকারের ঘোষিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডরের মধ্যে রঘুনাথপুর পড়ছে বলে রাজ্য সরকার জানানোর পরেও সেই এলাকারই জমি ফেরতের দাবি ওঠায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল। তৃণমূলের নাম না করে ‘রঘুনাথপুর ১ ব্লক শিল্প বাঁচাও কমিটি’র নামে রবিবার বিধায়কের নেতৃত্বে রঘুনাথপুরে মিছিল বেরোয়। সেই মিছিলে দেখা যায়নি নতুনডি এলাকার জমিদাতাদের। এ বার তাই গ্রামে গিয়ে কৃষি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে বরফ গলানোর চেষ্টা করলেন বিধায়ক।
এদিন দুপুরে দুরমুট গ্রামের বাণী পাঠাগারের ওই সভায় বিধায়ক ছাড়াও ছিলেন জেলা পরিষদের দুই সদস্য, তৃণমূলের রঘুনাথপুর ১ ব্লক কার্যকরী সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও তৃণমূলের রঘুনাথপুর শহরের নেতারা। বিধায়ক তাঁদের জানান, রাজ্য সরকার রঘুনাথপুরে ভারী শিল্প গড়তে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন। অধিগৃহীত জমিতেই সেই শিল্প করা হবে। অন্যদিকে কেন তাঁরা জমি ফেরত চাইছেন, শাসকদলের নেতাদের সামনে তার ব্যাখ্যা দেন কৃষি কমিটির নেতারা।
কমিটির সভাপতি শক্তিপদ মাজি দাবি করেন, ‘‘জমিদাতারা শিল্প-বিরোধী নয় বলেই ন’বছর আগে স্বল্প দামে জমি দিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও কারখানাই হয়নি, কর্মসংস্থানও তৈরি হয়নি। আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?’’ সিঙ্গুরের মতো রঘুনাথপুরের জমিদাতাদেরও ভাতা দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা। তবে বিধায়ক সিঙ্গুরের সঙ্গে রঘুনাথপুরের মূলগত তফাত যে আছে, তা বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি জানান, সিঙ্গুরে অনেক কৃষক ক্ষতিপূরণের অর্থ নেননি। তাঁরা জমি ফেরত চেয়ে আদালতে মামলা করেছিলেন। রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রে সকলেই ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন। বিধায়ক বলেন, ‘‘কমিটি রাজ্য সরকারের শিল্প উদ্যোগের থাকলে তাঁদের অন্য দাবিগুলি নিয়ে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলব।’’