বিভাস অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।
নিয়োগ দুর্নতি মামলায় ইডি-র হাতে ধৃত মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর যোগ নিয়ে যখন প্রচুর জল্পনা ও আলোচনা চলছে, ঠিক সেই সময় তৃণমূলের নলহাটি ২ ব্লক সভাপতি বিভাস অধিকারীর একটি ভিডিয়ো সামনে এসেছে। আনন্দবাজার পত্রিকা ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। তবে, সেই ভিডিয়োয় বিভাসকে নিজের সম্পত্তির খতিয়ান দিয়ে কিছুটা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে দেখা ও শোনা যাচ্ছে।
গত বুধবারই দলের রামপুরহাট মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্যর কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছিলেন বিভাস। সেই চিঠি জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধূরী, হাঁসনের বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায় এবং বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়কে পাঠানো হয়। যদিও বিভাসের ইস্তফা এখনও গৃহীত হয়নি বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। তবে, নলহাটি ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিভাসের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে বিরোধীদের দাবি। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে বিভাসের কলকাতার একটি ফ্ল্যাট ইতিমধ্যেই সিল করেছে ইডি। সেই নিয়ে জেলায় জোর জল্পনা চলছে। বিভাস অবশ্য দাবি করেছিলেন, ওই ফ্ল্যাটটি অনুকূল ঠাকুরের আশ্রমের শিষ্যদের ফ্ল্যাট। তিনি ইডি-র মুখোমুখি হতে প্রস্তুত বলেও বিভাস দাবি করেন।
কিন্তু, এই ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ায় বিভাস-মানিক যোগ এবং তাঁর সম্পত্তি নিয়ে চর্চা আরও বেড়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, এই ভিডিয়োটি মাসখানেক আগে নলহাটি ২ ব্লকের লোহাপুরে তৃণমূলের এক কর্মী সম্মেলনের। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিয়োয় বিভাসকে দাবি করতে শোনা যাচ্ছে, তাঁর মোট ৮০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি আছে। পাঁচটি ব্যঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ১২৯ টাকা। এর পরেই প্রকাশ্য সভায় বিভাস বলেন, ‘‘যদি এক বছর আগে এর থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ছিল আমার, তাহলে আপনাদের সামনে গলায় দড়ি দেব!’’ এখানেই না থেমে তিনি বলেছেন, ‘‘শুনতে তো পাওয়া যায় অমুক তৃণমূল নেতার সম্পত্তি চার ডাবল হয়েছে পাঁচ ডাবল হয়েছে। জেনে রাখুন, আমার নামে ৩ বিঘে জমি আছে। বাকি সব দেবোত্তর সম্পত্তি। ২৩.৩২ গ্রাম সোনা আছে, যার মূল্য ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৪৩৪ টাকা। আমার কথাগুলো রেকর্ড করে রাখুন। কাউকে ভয় পাই না আমি!’’
ভিডিয়ো প্রসঙ্গে বিজেপি-র বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার কটাক্ষ, ‘‘এ যেন, ঠাকুর ঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি! ওঁর (বিভাস) কাছে কেউ কি হিসাব (সম্পত্তির) চেয়েছিলেন? তার মানে কিছু নিশ্চয়ই, যা তিনি আগাম আড়াল করতে চাইছেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘বিপদ বুঝে আগাম সতর্ক হচ্ছেন হয়তো।’’
বারবার ফোন করা হলেও বিভাস ধরেননি। জবাব দেননি মেসেজেরও। তবে, বিভাসের বক্তব্যের সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই বলে জানিয়েছেন জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেউ যদি মনে করেন, তিনি এলাকাবাসীর কাছে তাঁর নামে ওঠা নানান অপপ্রচারের জবাব দিয়ে পরিষ্কার হবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যপার। এ ক্ষেত্রে দলের কোনও নির্দেশ বা দলের কোনও ব্যাপার নেই।’’