রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সরকারি সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিডিও-র কাছে লিখিত ভাবে ওই সম্পত্তি ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সহ-সভাপতি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৮ সালে লাভপুরের সেকমপুর মৌজায় ২৫১৭ দাগে ১,৬৯ একর জমির উপর একসময় ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ইট ভাঁটা গড়ে ওঠে। সেই সময় ভাঁটার জমি বন্ধক রেখে মালিক পক্ষ ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশনের কাছে ১ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা ঋণ নেন। কিন্তু চুক্তি মাফিক সেই ঋণ নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে না পারায় ১৯৯৩ সালে বন্ধক রাখা জমিটি অধিগ্রহণ করে নেয় লগ্নিকারী সংস্থাটি। অভিযোগ উঠেছে, সেই জমিই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আব্দুল মান্নান হাতিয়ে নিয়েছেন। সে সময় আব্দুল মান্নানকে জমি বিক্রেতা হিসাবে দলিলে ছবি-সহ সই রয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশনের সিউড়ি শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার উৎপল ভট্টাচার্য। তিনি বর্তমানে চচুড়ায় ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। তিনি বলেন, ‘‘ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিয়ম নীতি মেনেই ওই জমি বিক্রি করা হয়েছে।’’
স্থানীয়দের দাবি, নিয়মানুযায়ী অধিগৃহিত ওই সব জমি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ পরিশোধের হকদার ঋণদানকারী সংস্থা। সেক্ষেত্রে ওইসব জমি বিক্রির জন্য জেলার একটি সাপ্তাহিকের পাশাপাশি একটি ইংরাজি এবং একটি বাংলা দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা। ন্যূনতম তিনজন ক্রেতার উপস্থিতিতে সর্বোচ্চ দরদাতাকে অধিগৃহিত জমি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারে ঋণদানকারী সংস্থা। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি বলে অভিযোগ।
১৯৯৩ সালে প্রথম ওই জমি বিক্রির জন্য স্থানীয় একটি সাপ্তাহিকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও ক্রেতা হাজির না হওয়ায় জমি বিক্রির প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর ২০১৩ সালে ওই জমি বিক্রির জন্য ফের জেলার একটি সাপ্তাহিকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সেখানে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় প্রায় ৫ বিঘে জমি আব্দুল মান্নান এবং তার এক অনুগামী কিনে নেন। ওইভাবে জমি বিক্রির বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিডিও’র কাছে লিখিতভাবে সরকারি আনুকুল্যে জমি ফেরানোর আর্জি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
শেখ জয়নাল, সিরাজুল হকরা জানান, ওই জমির দাম কমপক্ষে ৮০ লক্ষ টাকা। আব্দুল মান্নান রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জলের দামে সেই জমি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য অন্য ক্রেতারা যাতে জানতে না পারেন তারজন্য ঋণদানকারী সংস্থাকে হাত করে শুধুমাত্র সাপ্তাহিকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তারপর একতরফা ভাবে জমি আব্দুল মান্নানকে পাইয়ে দেওয়া হয়। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পল্টু কোঁড়া বলেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আব্দুল মান্নান কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ম বর্হিভূত ভাবে হাতিয়ে প্রমোটারি ব্যবসা করছেন।’’
মান্নানসাহেব অবশ্য বলেন, ‘‘ওই ঋণদানকারী সংস্থার কাছে নিলামে দু’জনে যৌথভাবে জমিটি কিনেছিলাম। পরে দ্বিতীয়জনের কাছে থেকেও আমি পুরো অংশটা কিনে নিই। বর্তমানে সেই জায়গা বিক্রিও করে দিয়েছি। জায়গা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও ঠিক না।’’
লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।