—ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের ওয়ার্ড-ভিত্তিক ফলাফল দেখেই আসন্ন দুবরাজপুর পুরভোটের ‘কৌশল’ ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূল। লোকসভা ভোটের আগে থেকে সংগঠন মজবুত করতে কর্মীদের নিয়ে কর্মশালা, জনসংযোগ বাড়ানো থেকে বীরভূম কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী শতাব্দী রায়কে নিয়ে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে সভা করিয়েছিল তৃণমূল। তাতেও লাভ হল না। বৃহস্পতিবার ভোটগণনার ফল সামনে আসতেই কপালে ভাঁজ শাসক শিবিরের। কারণ, ওই ফলের নিরিখে দুবরাজপুর পুরসভার মোট ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টিতেই তৃণমূলকে হারতে হয়েছে বিজেপি-র কাছে!
বীরভূম ও বোলপুর, দু’টি লোকসভা আসন জিতে গড় রক্ষা করলেও প্রবল বিজেপি হাওয়ায় একাধিক বিধানসভা এলাকার মতো জেলার ছ’টি পুর-এলাকাতেও রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। দুবরাজপুরের মতোই রামপুরহাট, সাঁইথিয়া, সিউড়ি এমনকি বোলপুর পুর-এলাকায় এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। তুলনায় তৃণমূল কিছুটা ভাল অবস্থায় নলহাটি পুর-এলাকায়। তবে শাসকদল লিড পেলেও ১৬টির মধ্যে ৯টিতে পিছিয়ে। সিউড়ির ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টিতে এগিয়ে বিজেপি। সাঁইথিয়ার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টিতে এগিয়ে বিজেপি। তবে দুবরাজপুর নিয়েই আপাতত উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি শাসক-শিবিরে। কারণ, সব ঠিকঠাক চললে সেখানে সামনেই পুরভোট।
প্রশাসন সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বরে মেয়াদ শেষ হয়েছে দুবররাজপুর পুরসভায় ক্ষমতাসীন তৃণমূল বোর্ডের। তার পরে পরেই পুর-নির্বাচন হওয়ার থাকলেও সেটা এখনও হয়নি। মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) পুরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন। নিয়ম মানলে, লোকসভা ভোটের পরই দুবরাজপুরে পুরভোট হওয়ার কথা। সত্যিই যদি এখন ভোট হয় এবং লোকসভা নির্বাচনের প্রবণতা বজায় থাকে, তা হলে দুবরাজপুরে বোর্ড গড়া যাবে কিনা, তা নিয়েই সংশয়ে জেলা তৃণমূলের একাংশ।
ওয়ার্ডে কত ভোটার, কত ভোট পড়ল, ভোটদাতারা তাঁদের পক্ষে না বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, গত ২৯ এপ্রিল জেলায় ভোট হয়ে যাওয়ার পরে এমন নানা চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত ছিলেন তৃণমূলের নেতারা। ঠিক হয়েছিল, ফল বের হলেই ভাবনার সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতি মিলিয়ে পুরভোটের কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর ঠিক সেখানেই হোঁচট খেতে হচ্ছে শাসকদলকে।
দুবরাজপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি প্রভাত চট্টপাধ্যায় মানছেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। তিনি বলছেন, ‘‘মেরুকরণের ভোট ও পুরসভা পরিচালনার ক্ষেত্রে ফাঁক ফোঁকরের জন্যই এত খারাপ অবস্থা হয়েছে। আমি এর দায় স্বীকার করছি। পরবর্তী পদক্ষেপ জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ মেনেই হবে।’’
১৬ ওয়ার্ড বিশিষ্ট এই পুরসভায় ভোটার ৩০ হাজার ৮১ জন। মোট ৩১টি বুথে এ বার ভোট দিয়েছিলেন ২৪ হাজার ৮৪২ জন। ফল প্রকাশের পরে দেখা গিয়েছে অর্ধেকেরও বেশি ১২, ৪৫০টি ভোট পেয়েছে বিজেপি। সেখানে তৃণমূলের ভোট ৯৯৩৮। সিপিএম এবং কংগ্রেসের মিলিত ভোটর পরিমাণ ১৩৪০। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ নম্বর ওয়ার্ডগুলিতে মুখরক্ষা হলেও বাকি ওয়ার্ডে লিড পেয়েছে বিজেপি। নিজের ওয়ার্ডে হেরে গিয়েছেন বিদায়ী পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডেও। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘পুরভোট আর লোকসভা ভোট এক নয়। চরিত্রগত দিক থেকে পুরভোট অনেক আলাদা। এখানে প্রার্থী ব্যক্তিগত সম্পর্ক, উন্নয়ন এমন অনেকগুলি বিষয় কাজ করে।’’
স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ব্যাখ্যা, ফল খারাপের অন্যতম কারণ পুরবোর্ডের ক্ষমতা থেকে অনেক দিন দূরে থাকা। তাঁদের মতে, বোর্ডে ক্ষমতায় থাকলে যে ভাবে প্রতিনিয়ত শহরের মানুষের সঙ্গে নেতাদের যোগাযোগ হয়ে থাকে, তাতে ভাটা পড়েছিল। পুর এলাকায় বিজেপির পোক্ত সংগঠন না থাকলেও বাজি মেরেছে বিজেপিই। দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের মন্তব্য, ‘‘খেলা তো সবে শুরু হল!’’