আলুন্দা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস। ছবি সংগৃহীত।
১৭ আসন বিশিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতে শাসক দলের ঝুলিতে গিয়েছে ৯টি আসন। তার পরেও প্রধান পদের প্রার্থীর জন্য বিরোধীদের ‘শরণাপন্ন’ হতে হচ্ছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের। সিউড়ি ১ ব্লকের আলুন্দা পঞ্চায়েতে এমন পরিস্থিতির সৌজন্যে সংরক্ষণ।
ওই পঞ্চায়েতের প্রধানের আসনটি তফসিলি জাতিভুক্ত মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু তৃণমূল থেকে জয়ী হওয়া ন’জন প্রার্থীর মধ্যে তফসিলি জাতিভুক্ত মহিলা প্রতিনিধি নেই একজনও। অন্য দিকে, বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষ থেকে জয়ী চার প্রার্থীর এক জন এবং বিজেপির তিন জন জয়ী প্রার্থীর একজন তফসিলি জাতিভুক্ত মহিলা। নিয়ম অনুযায়ী, ওই দুই প্রার্থীর মধ্যেই এক জনকে বসতে হবে প্রধানের চেয়ারে৷
প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, পরিস্থিতি যদি এমনই থাকে, সে ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করবে তৃণমূল, কিন্তু মাথার উপর প্রধানের আসনে কোনও বিরোধী প্রার্থীকেই বসিয়ে কাজ চালাতে হবে। তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে, বোর্ড চালানো, মাসিক বৈঠক করা, এলাকা উন্নয়নে অর্থ ব্যয়, বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয়— সব ক্ষেত্রেই পদে পদে সমস্যায় পড়তে হবে বলে দাবি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের। যদিও দলের জেলা নেতৃত্বের দাবি, “এখনও সময় আছে। সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।” শাসক দল যে এ ভাবে দল ভাঙানোয় ইঙ্গিত দিচ্ছে সেই অভিযোগ তুলছেন বিরোধী নেতাকর্মীরা। তবে অথচ বিরোধী দু’পক্ষেরই দলেরই দাবি, তাদের প্রার্থী তাদের সঙ্গেই থাকবে।
তবে দলবদল করলেও নিজেদের জেতা পঞ্চায়েতে অন্য দল থেকে আসা কাউকে মাথায় বসিয়ে আগামী দিনে পথ চলতে হবে ভেবে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব বিশেষ স্বস্তিতে নেই বলেই দল সূত্রে দাবি। আলুন্দা পঞ্চায়েতের ধল্লা ও বড় আলুন্দা গ্রামের একটি আসন তফশিলি জাতিভুক্ত মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে ধল্লা থেকে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের পূর্ণিমা দাস এবং বড় আলুন্দার আসনটি থেকে জয়ী হয়েছেন বিজেপির মিঠু বাগদি। তৃণমূল এই দু’টি আসনে তো হেরেইছে, সেই সঙ্গে বড় আলুন্দার অপর একটি সাধারণ আসনে তফসিলি জাতিভুক্ত মহিলাকে প্রার্থী করেছিল তারা। সেই আসনেও বিজেপি জিতেছে।
আলুন্দা পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান রামকৃষ্ণ দত্ত বলেন, “প্রধানের আসনে বসার মতো কোনও প্রার্থী যখন আমাদের নেই, তখন বিজেপি বা কংগ্রেসের দুই প্রার্থীর মধ্যে যে কোনও একজন আমাদের দলে আসতে চান, সেক্ষেত্রে আমাদের স্বাগত জানাতেই হবে।”
তৃণমূল সূত্রে দাবি, অপর একটি ভাবনাও কাজ করছে নেতাদের মধ্যে। তা হল, কোনও নিশ্চিত আসনে জয়ী প্রার্থীকে পদত্যাগ করিয়ে সেখান থেকে কোনও তফসিলি জাতিভুক্ত মহিলা প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা। যদিও, প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, এই জিনিস অবাস্তব না হলেও প্রায় অসম্ভব। কারণ, পঞ্চায়েতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খালি আসনে আর উপনির্বাচন হয় না। সেক্ষেত্রে একটি আসনে কেউ পদত্যাগ করলে ৮ জন তৃণমূল ও ৮ জন বিরোধী সদস্য থেকে যাবেন। তাতে বোর্ড গঠনও কঠিন হয়ে যাবে।
তবে এত সব তর্কের মধ্যে ঢুকতেই চান না কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থী পূর্ণিমা দাস। তিনি বলেন, “দল ছাড়ার কোনও প্রশ্ন নেই। যদি কংগ্রেসে থেকেই প্রধান হওয়ার সুযোগ আসে, তাহলে আমার কোনও আপত্তি নেই। আর যদি আমাকে দলবদলের জন্য চাপ দেয়, তাহলে আমি দলের নেতাদের জানাব। তাঁরা যা বলবেন, সেটাই করব।” কংগ্রেসের জেলা কার্যকরী সভাপতি চঞ্চল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের প্রার্থীকে দলবদলের চাপ দেওয়া হচ্ছে। তবে আমাদের প্রার্থী আমাদের সঙ্গেই থাকবেন। আর যদি বিরোধীদের থেকেই প্রধান নির্বাচন করতে হয়, তাহলে সংখ্যার বিচারে আমাদের প্রার্থীই প্রধান নির্বাচিত হবেন।”
বিজেপির জয়ী প্রার্থী মিঠুর সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা যায়নি। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বাবন দাস বলেন, “আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এখনও পূর্ণিমাও জেতেননি, মিঠুও জেতেননি। আগে নির্বাচনের ফলাফলের ভবিষ্যত কোন দিকে গড়ায় দেখি, তার পর অন্য বিষয় নিয়ে ভাবব। তবে আমাদের প্রার্থী দলবদল করবেন না, এটা নিশ্চিত।”তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “যিনি প্রধান হবেন তাঁকেই মেনে নিতে হবে। তবে আগেই যদি কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শামিল হতে চান তাহলে খুব ভাল।”