কারবার: রামপুরহাট থেকে নলহাটি যাওয়ার পথে জাতীয় সড়কের পাশে গরুর হাট। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
জেলার নানা জায়গাতেই বসে গরুর হাট। অভিযোগ, সেই সব হাট থেকে কেনা গরুই পাচার হয়। গরু পাচারের সেই মামলায় সিবিআই তদন্তের জেরে বীরভূম যখন চর্চায়, তখনই প্রশ্ন উঠছে জেলার গরু হাটগুলিতে পুলিশি নজরদারি নিয়ে। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, গরু পাচার রুখতে যথাযথ নজরদারি রয়েছে।
গরু পাচার মামলায় ইতিমধ্যেই জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সিবিআই হেফাজতে। পাচারের টাকা কোথায় কোথায় গিয়েছে তার সন্ধানে জেলায় বিভিন্ন জায়গায় সিবিআই তদন্তকারী আধিকারিকেরা হানা দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে জেলার বিভিন্ন পশুহাটে এখনও পুলিশি নজরদারির অভাব আছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ঝাড়খণ্ড সীমান্ত দিয়ে রামপুরহাট থানার নারায়ণপুর এলাকা দিয়ে আগে গরু পাচার করা হত বলে অভিযোগ উঠত। বর্তমানে নারায়ণপুর এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প করার পর থেকে ওই এলাকা দিয়ে গরু নিয়ে যাওয়া বন্ধ হয়েছে। নারায়ণপুর এলাকায় পুলিশি ক্যাম্প করার আগে পুলিশ ১১ বার অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন পাচারকারীকে গ্রেফতারও করে। বেশ কয়েকটি গরুও আটক করেছিল পুলিশ। রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ধীমান মিত্র জানান, বেআইনি গরু পাচারে রুখতে পুলিশি নজরদারি রয়েছে।
নলহাটি থানার গোপালপুর এবং রামপুরহাটের পশুর হাটগুলিতে পুলিশি নজরদারি অভাব আছে বলেই দাবি স্থানীয়দের। বড় বড় লরিতে অবাধে গরু ওঠানামা করতে দেখা যায়। লরি ভর্তি গরুগুলি স্থানীয় পশু হাট থেকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় তা অনেকেরই অজানা।
জেলার ইলামবাজার ব্লকের সুখবাজার হাটের ‘নিয়ন্ত্রক’ বলে পরিচিত গরু ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের নাম রয়েছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে। লতিফকে খুঁজছে সিবিআই। নজরদারি রয়েছে ওই হাটে। মুরারই ২ ব্লকের হিয়াতনগর পশুহাটেও দিকে নজরদারি রয়েছে। তবে জেলার সাঁইথিয়া, রামপুরহাট, নলহাটির আরও অন্য পশুহাটগুলি থেকে বড় বড় গাড়িতে কোথায় কোথায় গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা নজরদারি প্রয়োজন বলে দাবি বিরোধীদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাত আট বছর আগে নলহাটি থানার লোহাপুরের কাঁটাগড়িয়া এলাকায় বড় বড় লরিতে গরু নামানো হতো। এবং উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড থেকে আসা ওই সমস্ত লরিগুলি থেকে গরু নামিয়ে কাছাকাছি মুর্শিদাবাদ সীমানায় পৌঁছনোর জন্য কাঁটাগড়িয়া মোড়ে দিন দু’য়েক গরু গুলিকে রাখা হতো। বর্তমানে মুর্শিদাবাদ সীমানা এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য কাঁটাগড়িয়া এলাকায় গরু নিয়ে যাওয়ার সেই রমরমা না থাকলেও এখনও ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ থেকে বড় বড় লরিতে গরু নামানো হয়। কাঁটাগড়িয়া মোড়ে সেই গরুগুলি রাখা হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, কয়েক মাস আগে পর্যন্ত পাইকর থানার নয়াগ্রামের পাশ দিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার বাড়ালা পঞ্চায়েত এলাকার পাশ দিয়ে হাজার হাজার গরু বীরভূম মুর্শিদাবাদ সীমানায় জড়ো করা হতো। তবে অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে পাইকর থানার নয়াগ্রাম এলাকা দিয়ে গরু নিয়ে যাওয়া বর্তমানে বন্ধ আছে। তবুও মুরারই-রঘুনাথগঞ্জ রাজ্য সড়ক দিয়ে এখনও অনেক গরু ভর্তি বড় লরি রঘুনাথগঞ্জ এলাকায় যেতে অনেকেই দেখেছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশি নজরদারির অভাবের জন্য ঝাড়খণ্ডের মহেশপুর, হিরণপুরের মতো এলাকা থেকে গরু ভর্তি লরি রঘুনাথগঞ্জ পৌঁছে যায়।