সৃজা ঘোষ। নিজস্ব চিত্র নিজস্ব চিত্র
ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাঁকুড়া জেলায় বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১২ থেকে বেড়ে দাঁড়াল ১৪। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অবশ্য এই রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলায় কারও মৃত্যু হয়নি বলেই দাবি করা হচ্ছে। তবে কোতুলপুরের জয়রামবাটি এলাকার এক ছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ডেঙ্গি-জল্পনা দানা বেঁধেছে।
মৃতা সৃজা ঘোষ (২১) কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। সল্টলেকে রবীন্দ্রভারতীর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকতেন তিনি। তাঁর পরিবারের দাবি, শনিবার সন্ধ্যায় জ্বরে অসুস্থ হয়ে হস্টেল থেকে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। রবিবার জ্বর না কমায় স্থানীয় একটি ক্লিনিকে সৃজার রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে এনএস ১ পরীক্ষায় রিঅ্যাকটিভ আসে। এরপর সোমবার বিকেলে সৃজাকে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতেই সেখান থেকে তাকে রেফার করে দেওয়া হয়। কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথেই সৃজার মৃত্যু হয়। মৃতার দাদা সুপ্রকাশ ঘোষ এ দিন ফোনে দাবি করেন, “স্থানীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করে জানায়, বোনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসার গাফিলতিতেই তার মৃত্যু হল।’’
এ দিকে সৃজা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছেন কি না, তা নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি বাঁকুড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বাঁকুড়ার ডেপুটি সিএমওএইচ ২ নিলয় চক্রবর্তী দাবি করেন, “ঘটনাটি শোনার পরেই মঙ্গলবার স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃতার বাড়িতে পাঠিয়ে খোঁজ নিতে বলি। ডেঙ্গি ঘোষণার জন্য যে সব পরীক্ষাগুলো করা দরকার, ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সরকারি পরীক্ষাগারে তা করা হয়নি। কাজেই ওই ছাত্রীর মৃত্যুর কারণ যে ডেঙ্গিই তা নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না।’’
এ দিকে জেলায় আরও দু’জন নতুন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। বাঁকুড়া শহরেও ডেঙ্গিতে কয়েকজন ইতিপূর্বে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু মশা নিধন অভিযান কেমন চলছে? বাঁকুড়া পুরসভা জানাচ্ছে, তাদের নিজেদের এলাকায় সোমবার সন্ধ্যা থেকেই অভিযান শুরু হয়েছে। বাঁকুড়া শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ওই অভিযান শুরু হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতর পুরসভাকে দু’টি ফগিং মেশিন দিয়েছে। সেই মেশিন নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়া পুরসভার ১৮ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মশা নিধন অভিযান চালানো হয়। তবে এই পুরসভায় মোট ওয়ার্ড রয়েছে ২৪টি। এতগুলি ওয়ার্ডে
মশা নিধন অভিযান চালানোর জন্য দু’টি মেশিন যথেষ্ট নয় বলেই অভিযোগ পুরবাসীর।
অনেকেরই মতে দু’টি মাত্র মেশিন দিয়ে এতগুলি ওয়ার্ডে অভিযান শেষ করতে অনেক দিন সময় লেগে যাবে। পুরবাসীর অভিযোগ যে অযৌক্তিক নয় তা মানছেন পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তও। তিনি বলেন, “আমি স্বাস্থ্য দফতরকে আরও মেশিন দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। তবে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে ঘণ্টা চারেক মশা নিধন অভিযান চালানো হবে। আমাদের লক্ষ্য প্রতিদিন অন্তত দু’টি করে ওয়ার্ডে অভিযান চালানো। এতে ১২ দিনের মধ্যেই গোট পুরএলাকায় আমরা অভিযান শেষ করতে পারব।”