এই পথেই চলতে হয় ময়ূরেশ্বরের নতুনগ্রামের বাসিন্দাদের। —অনির্বাণ সেন
যাতায়াতের রাস্তা ছিল না। তা নিয়ে বহু আবেদন, দাবি-দাওয়ার পরেও প্রশাসনের টনক নড়ছে না দেখে গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে নিয়েছিলেন চলার পথ। সেই রাস্তাও এখন চলাচলের অযোগ্য হয়েছে। এরপরেও টনক নড়ছে না দেখে নতুনগ্রামের বাসিন্দাদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে।
ময়ূরেশ্বর থানার ওই গ্রামে প্রায় ৪০টি পরিবারের বাস। একসময় ওই গ্রামে যাতায়াতের কোনও রাস্তাই ছিল না। প্রায় এক কিলোমিটার আলপথ ভেঙে লাগোয়া বাজিতপুরে পৌঁছনোর পরে তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার নাগাল পেতেন নতুন গ্রামের বাসিন্দারা। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অবস্থায় প্রশাসনের সকলস্তরে আর্জি জানিয়েও রাস্তা তৈরিতে উদ্যোগী হয়নি কেউই। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাই বছর ১২ আগে সংশ্লিষ্ট বাজিতপুর পঞ্চায়েতের তৎকালীন প্রধান কংগ্রেসের সৈয়দ কাসাফদ্দোজার পরামর্শে রাস্তা তৈরিতে উদ্যোগী হন। কেউ দেন জমি, কেউ দেন স্বেচ্ছাশ্রম। টানা ১৫ দিন ধরে বহু লোকের স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি হয় রাস্তা।
সেই সময় ওই রাস্তা পাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু একবার মোরাম দেওয়ার পর আর কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বর্তমানে ওই রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এর ফলে ফের ভোগান্তি শুরু হয়েছে গ্রামবাসীর।
ওই গ্রামে কচিকাঁচাদের স্কুল তো দূরের কথা, একটা মুদিখানাও নেই। বাজিতপুর কিংবা গদাধরপুর বাজারে পৌঁছে তবেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য তথা জীবন জীবিকার নাগাল পান গ্রামবাসী। অথচ ওই রাস্তাটিকে কেন্দ্র করে সাঁইথিয়া-রামপুরহাট সড়কের গদাধরপুর বটতলা থেকে মহম্মদবাজার থানার পুরাতনগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৭ পাকা রাস্তা করা হলে শুধু ওই গ্রামের দুর্ভোগই নয়, দুই থানা এলাকার যোগসূত্রও গড়ে ওঠে বলে গ্রামবাসীদের দাবি।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ মণ্ডল, শঙ্কু মণ্ডলেরা জানান, জমি এবং স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে আমরা তখন রাস্তা গড়েছিলাম। তখন প্রশাসন সেই রাস্তা পাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কথা রাখেনি। প্রদীপের কথায়, ‘‘আমাদের দুর্ভোগ আজও ঘোচেনি। বিশেষত বর্ষাকালে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া অনিয়মিত হয়ে পড়ে।’’ এ বারের ভোটের আগে মিলেছে প্রতিশ্রুতি। তার পরে কাজ কবে হয় তার অপেক্ষায় গ্রামবাসী।
এই গ্রামের প্রায় ৪০ জন ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়ে। বাজিতপুর হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মেম মণ্ডল, সপ্তম শ্রেণির উমা লেটদের কথায়, ‘‘বর্ষায় রাস্তার কাদায় পা ডুবে যায়। রাস্তার কাদা শুকোতে আরও কয়েক মাস লেগে যায়। তার পরেও রাস্তা এবড়ো-খেবড়ো হয়ে থাকে। ফলে প্রায়ই স্কুল কামাই হয়।’’
ওই রাস্তা গড়ার সময় সংশ্লিষ্ট বাজিতপুর পঞ্চায়েতটি ছিল কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণে। তৎকালীন প্রধান সৈয়দ কাসাফদ্দোজা বলেন, ‘‘সেই সময় ১০০ দিনের কাজ ছিল না। রাস্তা গড়ার মতো তেমন কোনও প্রকল্পও ছিল না। তাই গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা গড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পরে আমরা তাতে মোড়াম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম।’’ তিনি আরও জানান, পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদে গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তাটি পাকা করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। এরপরেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘দু’জায়গাতেই ছিল সিপিএম পরিচালিত প্রশাসন। তাই কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রস্তাব তারা বিবেচনা করেনি।’’
বর্তমানে পঞ্চায়েতটি রয়েছে তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে। প্রধান সুমিতা দাস জানান, আমারাও ওই রাস্তা গড়ার সময় স্বেচ্ছাশ্রমে সামিল হয়েছিলাম। সত্যিই রাস্তাটির অবস্থা বর্তমানে বেহাল। পঞ্চায়েতের সামর্থ্য অনুযায়ী রাস্তাটি মাঝেমধ্যে সংস্কার করা হয়। কিন্তু রাস্তাটি পাকা করা হলে বহু গ্রামের মানুষের উপকার হবে। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা পাকা করার প্রস্তাব আমরা ইতিমধ্যেই জেলা পরিষদে পাঠিয়েছি।’’ সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রস্তাব খতিয়ে দেখে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে জেলা পরিষদ।
সেই আশ্বাসের দিকেই চেয়ে ময়ূরেশ্বরের নতুনগ্রাম।