মৃতের বাড়িতে মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো। রবিবার সন্ধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বিধায়ক হস্টেলের চার তলার বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বান্দোয়ানের বিধায়কের দেহরক্ষী জয়দেব গরাঁইয়ের, প্রাথমিক তদন্তের পরে অনুমান পুলিশের। তা হলে তাঁর দেহে গুরুতর চোট-আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই কেন, প্রশ্ন তুলছেন মৃতের পরিজনেরা। ঘটনার তদন্ত চেয়ে কলকাতার পার্ক স্ট্রিট থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন মৃতের কাকা কাঞ্চন গরাঁই। তাঁর দাবি, “উপর থেকে পড়ে গিয়ে ওঁর (জয়দেব) মৃত্যু নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই কিছু প্রশ্ন উঠছে। পুলিশের কাছে ঘটনার সবিস্তার তদন্তের দাবি জানিয়েছি।”
লালবাজার সূত্রে দাবি, মৃতের পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে প্রাথমিক ভাবে ওই মৃত্যুর ঘটনায় এখনও অস্বাভাবিক কিছু মেলেনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
শনিবার ভোরে কলকাতার কিড ষ্ট্রিটে, বিধায়ক হস্টেলের তিন নম্বর ইউনিট ভবনের সামনে থেকে বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীবলোচন সরেনের দেহরক্ষী, বাঁকুড়ার সিমলাপালের বাঁশি গ্রামের বাসিন্দা জয়দেবের দেহ উদ্ধার হয়। হস্টেলের নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে। ওই ভবনের ৪১৯ নম্বর ঘরে থাকতেন জয়দেব। ওই ঘরের বারান্দা থেকে নীচে পড়ে ওই ঘটনা বলে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছিল পুলিশ। ময়নাতদন্তের পরে রবিবার ভোরে কলকাতা থেকে পুলিশের উদ্যোগে গ্রামে পৌঁছয় দেহ। পরে, গ্রাম সংলগ্ন শিলাবতী নদীঘাটে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
জয়দেবের খুড়তুতো বোন ঋতু গরাঁইয়ের প্রশ্ন, “বলা হচ্ছে, চার তলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। তবে অতটা উপর থেকে পড়লে মাথায় বা মুখে গুরুতর চোট লাগার কথা। অথচ দাদার (জয়দেব) দেহে ময়নাতদন্তের কাটাছেঁড়ার চিহ্ন ছাড়া অন্য কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না!” জয়দেব যে ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন, সেখানে শুক্রবার রাতে কেউ ছিলেন কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
পাশাপাশি, ঘটনার সময়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ় দেখতে চেয়ে পুলিশে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান কাঞ্চন। তিনি বলেন, “বিধায়কদের আবাস তো ‘হাই-সিকিউরিটি জ়োন’। আমরা ঘটনাস্থলের সেই সময়ের ফুটেজ় দেখতে চাই। ফুটেজ় থেকে গোটা ঘটনা স্পষ্ট হতে পারে।” তাঁর আরও দাবি, “বিধায়কদের হস্টেলের ওই ঘটনাস্থল আমাদের দেখার ইচ্ছে থাকলেও সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়নি। কতটা উপর থেকে পড়েছিল, তা-ও দেখতে পাইনি।”
একমাত্র রোজগেরে সদস্য জয়দেবের মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রীর দ্রুত চাকরির ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে পরিবার। বিধায়ক রাজীবলোচন বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। জয়দেব দীর্ঘদিন আমার কাছে ছিল। ওঁর পরিবারের পাশে রয়েছি। আমার তরফে যা করণীয়, করা হবে।” রাজ্যের মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতোও এ দিন সন্ধ্যায় বাঁশি গ্রামে গিয়ে মৃতের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।