স্মরণ: সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজে। নিজস্ব চিত্র
যে মঞ্চে সন্ধেয় তাঁর অনুষ্ঠান করার কথা, সেখানেই মাঝ দুপুরে হল সেই শিল্পীর শোকসভা!
তত ক্ষণে হাওয়ায় ভাসছে শোক—‘কালিকাদা নেই!’ ফেসবুক-ট্যুইটারে মুহুর্মুহু শোকবার্তায় সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজের পড়ুয়ারা জেনে গিয়েছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি দুর্ঘটনায় ‘দোহার’-এর গায়ক কালিকাপ্রসাদের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন তাঁর আরও পাঁচ সঙ্গী।
কথা ছিল, বিদ্যাসাগর কলেজের প্লাটিনাম জুবিলি বর্ষের সমাপ্তি পর্বে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে সিউড়ি সংলগ্ন ঝোড়ামাঠের বাসিন্দা সৃষ্টিধর বাদ্যকরের বাড়িতে কালিকাপ্রসাদরা সাপখেলার গান ক্যামেরা বন্দি করবেন। দুপুরে খাবেন সেই বাড়িতেই। সেই মতো রান্নাও করিয়ে রেখেছিলেন সৃষ্টিধর।
কথা আর রইল কই!
সিউড়ির নাট্যকর্মী রজ সাহা বলেন, ‘‘কালিকাপ্রসাদের দল আমার মাধ্যমেই যোগাযোগ করেছিল সৃষ্টিধরের সঙ্গে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সে বিপর্যস্ত। বেমালুম চুপ করে গিয়েছে!’’
বিদ্যাসাগর কলেজের শিক্ষক ও সঞ্চালক সুশান্ত রাহা বলছিলেন, ‘‘গত ৪ মার্চ থেকে শুরু হওয়া উৎসবের প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্থানীয়দের পাশাপাশি বহিরাগত শিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাউল গান, হাস্যকৌতুক ও নাচের অনুষ্ঠানের সঙ্গে ছিল দোহারের গান। সবই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।’’ থেমে গিয়েছে উৎসবের হইচই। থমথমে মুখে পড়ুয়ারা এসে বসেছেন কালিকার শোকসভায়। দোহারের গান ঘুরছে মুখে মুখে। আর দুই বাংলার মিলমিশে কালিকার নিজস্ব ঘরানার কথা।
‘‘ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না!’’— বলছিলেন কলেজের প্রাক্তনী ও বর্তমান অধ্যাপিকা নবনীতা মুখোপাধ্যায়। ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পূবালী বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এমন খবর পাওয়ার পরে কিছুই ভাল লাগছে না। ভাবতেই পারছি না, এখানে আসার পথে মৃত্যু হয়েছে!’’
মর্মাহত জেলার লোক শিল্পীরাও। সিউড়ির বাসিন্দা, লোকশিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নব্বইয়ের দশক থেকে কালিকার সঙ্গে পরিচয়। একসঙ্গে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। এ ভাবে চলে যাওয়া বড় যন্ত্রণার। বড় কষ্টের। আত্মীয় বিয়োগ হল।’’
কালিকাপ্রসাদের চলে যাওয়ার খবর পাওয়ার পরে টেলিফোনের অপরপ্রান্তে চুপ থেকেছেন কেউ কেউ। জয়দেব থেকে তারক দাসবাউল বলছিলেন, ‘‘কী বলি বলুন তো! জয়দেবে কালিকার সঙ্গে কত স্মৃতি! ওঁর চলে যাওয়া মনে পড়িয়ে দিচ্ছে গৌড়দার মুত্যু। বছর কয়েক আগে শান্তিনিকেতন ফেরার পথে চৌপাহাড়ির জঙ্গলে একই রকম পথ-দুর্ঘটনায় হারিয়েছিলাম ওঁকে। আজ কালিকার মতো শিল্পীকে হারালাম আমরা!’’
আরও পড়ুন: গর্ব করে বলত, আমি সিলেটি
দেখা হল না!
সিউড়ির সোনাতোড় পাড়ার বাসিন্দা রতন কালিকাপ্রসাদের মৃত্যুর খবর শুনে বলেন, ‘‘শুনলাম অমন বড় মাপের শিল্পী আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। হয়তো দেখা হতো। কিন্তু তার আগেই সব শেষ! সারা জীবন ধরে আমার এই আফশোস থেকে যাবে। কোনও দিন আর দেখা হবে না!’’
বিদ্যাসাগর কলেজের অধক্ষ্য তপনকুমার পরিচ্ছা বলছেন, “এই অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ। বড় ক্ষতি হয়ে গেল। তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাই। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলেজের সমস্ত রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।”