পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ডিওয়াইএফ এবং এসএফআই-এ র। —নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দরজা টানা পাঁচ দিন আটকে রেখেও কাউন্সেলিং বা নিয়োগপত্র পাঠানো ঠেকাতে পারেনি। এর পরেরদিনই প্রশাসনের ডাকে বৈঠকে যোগ দিয়ে সংসদের দরজা থেকে সরে এসেছিলেন আন্দোলনকারীরা। ঠাঁই নিয়েছিলেন দরজার পাশে। এ বার বৃহস্পতিবার বিকেলে সংসদ চত্বর থেকেই সরে গেলেন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগ তোলা আন্দোলনকারীরা। তাঁদের পক্ষে আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা অজিত মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের কাছে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়টি জানিয়েছি। দু’-একটি ঘটনার উদাহরণও দিয়েছি। মন্ত্রী ও জেলাশাসক তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। এ দিন তাই সমস্ত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ ভবন থেকে অবস্থান-বিক্ষোভ সরিয়ে নেওয়া হল। কিন্তু আন্দোলন থামছে না। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলাশাসকের কাছে গিয়ে তদন্তের ফল জানতে চাইব।’’ তিনি জানান, সে দিন পুরুলিয়া শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে তাঁরা জমায়েতের ডাক দিয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ওবিসি বি ক্যাটাগরিতে ৭ শতাংশ ছেলেমেয়েকে নেওয়ার কথা থাকলেও একজনকেও ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ। তফসিলি জাতি, উপজাতিদেরও বঞ্চিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলে কিছু লোকজন গত শুক্রবার থেকে পুরুলিয়া প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিস চত্বরে বসে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে দেন অজিতবাবুরা। তৃণমূলের শিক্ষা সেলের কয়েকজন প্রথম দিনে সেখানে থাকলেও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বার্তা পেয়ে তাঁরা সরে যান। সে দিন রাতে একপ্রস্থ বৈঠক হলেও আন্দোলনকারীরা সরেননি। উল্টে দরজা আটকে লাগাতার অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন। অফিস চত্বরেই উনুনে রান্নাবান্না করে খাওয়া দাওয়া, সতরঞ্জী বিছিয়ে ঘুমানো চলতে থাকে। এ দিকে দিনের পর দিন সংসদের অফিসও বন্ধ থাকে। তখন শিক্ষা দফতরের অনুমতি নিয়ে কৌশলে পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ টেলিফোনে প্রার্থীদের সঙ্গে কাউন্সেলিং সেরে নিয়ে ই-মেলে তাঁদের নিয়োগপত্র পাঠিয়ে দেন। মঙ্গলবার সেই খবর ছড়ায়। বুধবার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর ডাক পেয়ে জেলাশাসকের অফিসে অজিতবাবুরা বৈঠক করেন। তারপরেই দরজা থেকে সরে যান তাঁরা। সে দিন দুপুরেই সংসদ অফিসে কর্মীরা ঢুকে কাজ শুরু করেন।
এ দিন কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন একই অভিযোগ নিয়ে পথে নামেন। সিপিএমের যুব সংগঠন ডিয়াইএফ এবং এসএফআই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতার দাবি তুলে পুরুলিয়া শহরে মিছিল করে। পরে তাঁরা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানান। ডিওয়াইএফ-এর জেলা সম্পাদক ত্রিদিব চৌধুরী অভিযোগ তোলেন, ‘‘নিয়োগে সংরক্ষণ বিধি মানা হয়নি। আমরাও এই অভিযোগের তদন্ত চাই।’’ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে ঢোকার মুখে পুলিশের সঙ্গে দুই সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের অল্প ধ্বস্তাধস্তিও হয়। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড় বলেন, ‘‘ওঁরা নিয়োগের বিষয়ে কিছু বললেও লিখিত কিছু দেননি। তাঁরা লিখিত কিছু জানালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেব।’’ নিয়োগে স্বচ্ছতার দাবিতে এ দিন এসইউসি পুরুলিয়া সদরের মহকুমা শাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়। অজিতবাবু বলেন, ‘‘এ দিন বিভিন্ন স্তরের মানুষ এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’ আন্দোলন মঞ্চে যোগ দেন বান্দোয়ানের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত বেসরা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সবার দাবিই এক। আমাদেরও দাবি, এসএমএসে নয়, নিয়োগপত্র সরাসরি পাঠাতে হবে। স্বচ্ছতা চাই।’’