কিশোরীকে যৌনপল্লিতে বিক্রি, ধৃত

নাবালিকার পরিবারের অভিযোগ, রানিবাঁধ থানার পুলিশ এই ঘটনার অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে। থানায় অভিযোগ না করতে পেরে শেষ পর্যন্ত বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের দ্বারস্থ হন নাবালিকার পরিজনেরা। চাইল্ড লাইনের হস্তক্ষেপে শেষে মঙ্গলবার অভিযোগ গ্রহণ করে রানিবাঁধ থানা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানিবাঁধ শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০২:৪৩
Share:

কাজের টোপ দিয়ে ভিন্‌ রাজ্যে নিয়ে গিয়ে এক কিশোরীকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল পড়শি এক মহিলা ও এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। যদিও উত্তরপ্রদেশের যৌন পল্লি থেকে সেই কিশোরীকে উদ্ধার করে আনা যায়নি।

Advertisement

নাবালিকার পরিবারের অভিযোগ, রানিবাঁধ থানার পুলিশ এই ঘটনার অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে। থানায় অভিযোগ না করতে পেরে শেষ পর্যন্ত বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের দ্বারস্থ হন নাবালিকার পরিজনেরা। চাইল্ড লাইনের হস্তক্ষেপে শেষে মঙ্গলবার অভিযোগ গ্রহণ করে রানিবাঁধ থানা। যদিও থানার বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ মানতে চাননি জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা। তবে ঘটনাটি জানতে পেরেই জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু পুলিশ সুপারকে দ্রুত কিশোরীকে ফিরিয়ে আনতে বলেছেন।

দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী রানিবাঁধ থানা এলাকার বাসিন্দা। তার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগেই ওই নাবালিকার বাবা মারা যান। তার মা দিন মজুরি করে সংসার চালান। পড়াশোনার জন্য ওই নাবালিকাকে বর্ধমানে মাসির বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তার মা। মাসখানেক আগে সে রানিবাঁধে মায়ের কাছে ফেরে। কিন্তু গত ২৩ জুলাই রানিবাঁধ থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় ওই নাবালিকা।

Advertisement

এর প্রায় এক মাসের মাথায় গত ২২ অগস্ট ওই নাবালিকার ভাই, মাসতুতো দিদি ও মেসোমশাইয়ের ফোনে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ওই নাবালিকা ফোন করে জানায়, রানিবাঁধে তাঁদের পড়শি গ্রামের বাসিন্দা কাঞ্চনা টুডু ও অপূর্ব টুডু তাকে কাজ দেওয়ার নাম করে উত্তরপ্রদেশে নিয়ে গিয়ে একটি যৌনপল্লিতে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। বর্তমানে সে ওই যৌনপল্লিতে চরম নির্যাতনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। দ্রুত পুলিশ নিয়ে গিয়ে তাকে উদ্ধারের আর্তি জানায় ওই কিশোরী।

ওই নাবালিকার মাসতুতো দিদি বলেন, ‘‘ওরা মনে হয় কাজের টোপ দিয়ে মগজ ধোলাই করে বোনকে নিয়ে গিয়েছিল। না হলে বোন যাওয়ার আগে বাড়িতে নিশ্চয় আলোচনা করত। ওর ফোন পাওয়ার পর থেকেই খুব উদ্বেগে রয়েছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ফোনে বোন জানিয়েছে, প্রতিদিনই নানা লোকজনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সে। এমনকী তাকে খুনেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পরে আমরা ঘটনাটি জানতে পেরে রানিবাঁধ থানায় তিন-চার বার গিয়ে পুলিশের কাছে সাহায্য চাই। লিখিত অভিযোগও দিতে যাই। কিন্তু কখনও পুলিশ বলেছে অভিযোগপত্র ঠিক লেখা হয়নি, কখনও বা বলেছে, মেয়েটি বর্ধমানে থাকত, তাই সেখানেই অভিযোগ দিতে হবে।’’ এর পরে মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় গিয়ে ওই তরুণী চাইল্ড লাইনের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানান।

মঙ্গলবার বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল রানিবাঁধে গিয়ে ওই নাবালিকার পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত রানিবাঁধ থানার পুলিশ ওই নাবালিকার মাসতুতো দিদির অভিযোগ গ্রহণ করে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত অপূর্বকে বুধবার গ্রেফতার করে পুলিশ।

প্রশ্ন উঠছে, কেন ওই কিশোরী নিখোঁজ হওয়ার পরেই থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেননি তার পরিবার? অভিযোগকারিণীর দাবি, ‘‘মাসি (নিখোঁজ কিশোরীর মা) শারীরিক ভাবে অসুস্থ ও নিরক্ষর। তাই থানা-পুলিশ করার সাহস পাননি। ঘটনাটি জানাতে পেরেই থানায় যাই।’’ যদিও রানিবাঁধ থানা অভিযোগপত্র নেওয়ার ব্যাপারে গড়িমসির অভিযোগ মানতে চায়নি। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারও দাবি করেছেন, ‘‘ওই কিশোরীর পরিবার থানাতেই যাননি।’’ কিশোরীকে উদ্ধার করে আনার ব্যাপারে কী হচ্ছে? তাঁর জবাব, ‘‘অভিযুক্তদের এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’

জেলাশাসক বলেন, ‘‘চাইল্ড লাইনের কাছে জমা দেওয়া ওই কিশোরীর পরিবারের অভিযোগপত্র পুলিশ সুপারকে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাঁকে বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে আনতে হবে। দোষীরা যেন ছাড়া না পায়।’’

কিশোরীর পরিবারেরও আর্জি, ‘‘পুলিশ প্রথমে অভিযোগ না নেওয়ায় এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে পুলিশের উচিত সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement