সুরাহা: এই রেলসেতু দিয়েই আসবে জলের পাইপ। নিজস্ব চিত্র
রেলসেতুর উপর দিয়ে পাইপলাইন পার করাই দুবরাজপুরে জলপ্রকল্পের কাজ শেষ করার পথে অন্যতম বাধা ছিল। সেই বাধাই কাটতে চলছে।
দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে জানিয়েছেন, রেলসেতুর উপর দিয়ে পাইপলাইন নিয়ে যাওয়ার দরুণ রেলকে ১০ লক্ষ ৩৭ হাজার ৯৮৬ টাকা পুরসভা দেবে। সম্প্রতি এমনই একটি চুক্তি হয়েছে। পুজোর ছুটি চলায় রেলের তরফে চিঠি এখনও আসেনি। চিঠি এলেই টাকা জমা দেওয়া হবে। পুরপ্রধানের আক্ষেপ, ‘‘অনুমতির জন্য বহু দিন থেকেই চেষ্টা করা হচ্ছিল। রেলের অসহযোগিতার জন্যই বছরখানেক বিলম্ব হল।’’ পুরপ্রধানের আশ্বাস, রেলপর্ব মিটলে খুব বেশি হলে জলপ্রকল্প শেষ হতে মাস তিনেক লাগবে। অর্থাৎ, সামনের বছরের গোড়াতেই শহরের জল সমস্যা মিটতে চলেছে। একই বক্তব্য পুর কারিগর দফতরের তরফেও।
সামনের বছরের গোড়ায় জলপ্রকল্পের কাজ শেষ করার অবশ্য বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কারণ, ২০১৮ সালেই পুরসভার ভোট। তবে রেলের সঙ্গে সমস্যা মিটেছে কিনা, তা নিয়ে অবশ্য রেলের তরফে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। পূর্বরেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক রূপয়ান মিত্র বলেন, ‘‘বিষয়টি ঠিক কী অবস্থায় খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’’
পুরসভার বয়স চল্লিশ পেরোলেও অথচ এখনও শহরের সব অংশের মানুষকে পানীয় জল খাওয়াতে ব্যর্থ দুবরাজপুর পুরসভা! ২০০৩ সালে অজয় নদের গর্ভ থেকে জল তুলে বাড়ি বড়ি পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করার জন্য একটি জলপ্রকল্প চালু হয়। তবে সেই প্রকল্পে দুবরাজপুর পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের সব ক’টিতে পানীয় জল পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। সেই বদনাম ঘোচাতেই দ্বিতীয় জল প্রকল্প। জলপ্রকল্পের জন্য ২০১৩ সালের শেষে কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘শহর পরিকাঠামো উন্নয়ন’ থেকে অর্থ সাহায্যে মেলে। বরাদ্দ অঙ্ক মোট ২৩ কোটি ১৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। ‘শহর পরিকাঠামো উন্নয়ন’য়ের সেই টাকা ‘আর্বান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট স্কিম ফর স্মল অ্যান্ড মিডিয়ম টাউনস’-এর জন্য পুরসভার হাতে পৌঁছে যাওয়ার পরই ‘মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টেরট’-এর (এমইডি) পুর কারিগরি দফতরের তত্ত্বাবধানে সেই কাজে হাত পড়ে ২০১৪ সালে।
প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, গভীর নলকূপের সাহায্যে অজয় নদ থেকে জল তুলে ১২.৭ কিমি দুরত্বের দুবরাজপুর শহরে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে পরিস্রুত পানীয় জল। সেই জন্য অজয় নদের পাড়ে রতনপুর মৌজায় তৈরি হবে পাম্প হাউস ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। পাইপলাইনের মাধ্যমে আসা সেই পরিস্রুত জল জমা করার জন্য একটি বড় ও একটি ছোট, মোট দুটি জলাধার তৈরি হওয়ার কথা দুবরাজপুর শহরে। ১১ লক্ষ ৯০ হাজার লিটার জল ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন জলাধারটি তৈরি হবে পাহাড়েশ্বরের কাছে। অন্যটির ধারন ক্ষমতা ১ লক্ষ ৫০ হাজার লিটার। সেটি শহরের সিনেমা হলের কাছে নির্মাণ হবে।
এই দুটি জলাধার থেকে প্রায় ৫৬ কিমি ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইনের মাধ্যমে শহরের মোট ৮৩১১টি বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার কথা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সামান্য অংশের ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন ও দ্বিতীয় জলাধার থেকে সংযোগকারী পাইপলাইন পাতার কিছুটা অংশের কাজ ছাড়া আর সবই সমাপ্ত হয়েছে। মূল সমস্যা ছিল,
দুবরাজপুরের অন্য ওয়ার্ডের সঙ্গে ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে থাকা পূর্বরেলের অণ্ডাল-সাঁইথিয়া শাখায় দুবরাজপুর স্টেশনের কিছুটা আগের ওই রেলসেতু।