অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে কলাভবনের গেট আটকে বিক্ষোভ ও তার প্রস্তুতি। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
আশঙ্কাই সত্যি হল! বিশ্বভারতীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের প্রথম সিমেস্টারের অফলাইন পরীক্ষা আটকে দিলেন আন্দোলনকারীরা। তবে, আন্দোলনের নামে পরীক্ষা না-দিতে দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন অনেক ছাত্রছাত্রীই।
শুক্রবার সকালে কলাভবনের বেশ কিছু বিভাগে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এ দিন সকালেই আন্দোলনকারীরা সেখানে জমায়েত করে পরীক্ষা বয়কটের ডাক দিয়ে মূল দরজার সামনেই অবস্থানে বসে পড়েন। স্বাভাবিক ভাবেই এ দিনের পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়।
এর পরেও দীর্ঘক্ষণ কলাভবনের সামনেই অবস্থান বিক্ষোভ চলে। আগামী দিনে যে সমস্ত বিভাগে পরীক্ষা রয়েছে, সেখানে একই কাণ্ড ঘটানো হবে বলেও জানা যাচ্ছে। তাঁদের সব দাবি মেনে না-নেওয়া পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ঘটনাচক্রে এ দিনই সামাজিক মাধ্যমে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর একাধিক ভিডিয়ো ক্লিপ ছড়িয়েছে। এমনই একটি ক্লিপে উপাচার্যকে বলতে শোনা গিয়েছে, আন্দোলনকারীরা যদি বড় সংখ্যায় সমবেত হয়ে পরীক্ষা বন্ধ করতে চায়, তা হলে অনুরোধ করা যেতে পারে। কিন্তু সংঘাতে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। উপাচার্য জানিয়েছেন, পড়ুয়ারা যদি পরীক্ষা বয়কট করে, কর্তৃপক্ষ সেক্ষেত্রে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে। ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার পত্রিকা যাচাই করেনি।
পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীদের একাংশও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র বলেন, “এ ভাবে পরীক্ষা আটকানোর কোনও মানে হয় না। আমরা অনেকেই পরীক্ষা দিতে চাই। হস্টেল খোলার দাবিতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকলেও ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের আটকানোর কোনও কারণ থাকতে পারে না।” বিশ্বভারতীর এক আধিকারিকও বলেন, “অনলাইনে পরীক্ষার দাবি মেনে নেওয়া যায় না। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাও তো অনলাইনে পড়াশোনা করে অফলাইনে পরীক্ষা দিচ্ছে। অথচ হস্টেলের দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলনকে অন্য পথে নিয়ে যাচ্ছে পড়ুয়ারা।”
যদিও আন্দোলনকারী পড়ুয়া দেবদ্রত নাথের দাবি বলেন, “পড়ুয়াদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। আমরা পরীক্ষার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু, অনেক পড়ুয়া যেখানে ক্যাম্পাসেই পৌঁছতে পারেনি, সেখানে তাঁদের বাদ দিয়ে পরীক্ষা আয়োজন করে পড়ুয়াদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে কর্তৃপক্ষ।
এমনকি এই পরীক্ষায় পড়ুয়াদের কোনও অ্যাডমিট কার্ডও দেওয়া হয়নি। এ ভাবে একটা সিমেস্টার পরীক্ষা আয়োজন করা যায় না। আমরা বৃহত্তর ছাত্র স্বার্থেই পরীক্ষা বয়কটের ডাক দিয়েছি।” আন্দোলনকারীদের একাংশের আরও দাবি, হস্টেল না-খুলেই পরীক্ষা নিয়ে আদালতের নির্দেশকেও অবমাননা করছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
পড়ুয়াদের আন্দোলনে বহিরাগতদের সমর্থনের অভিযোগ বৃহস্পতিবার তুলেছেন উপাচার্য। সেই অভিযোগের বিরুদ্ধে সরব হয়ে এ দিন কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের সামনে উপস্থিত হয়ে চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থনের বার্তা দেন প্রাক্তনী, আশ্রমিক সহ গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি এবং কবিগুরু হস্তশিল্প উন্নয়ন সমিতির বেশ কয়েক জন সদস্য।