বিধায়ককে চিঠি খুদে পড়ুয়াদের

‘জু়তো-সাইকেল নয়, রাস্তা চাই’

স্কুলে যাওয়ার সাইকেল মিলেছে। পায়ে উঠেছে জুতোও। কিন্তু সাইকেল চালানোর মতো রাস্তা কই? কাদামাখা পথে জুতোই বা পড়ব কী করে? সেই প্রশ্ন তুলে রাস্তা তৈরির দাবি জানিয়ে স্থানীয় বিধায়ককে চিঠি দিল ময়ূরেশ্বরের বাঁধ গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:১১
Share:

এ ভাবেই কাদা ডিঙিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া। ময়ূরেশ্বরের বাঁধগ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

স্কুলে যাওয়ার সাইকেল মিলেছে। পায়ে উঠেছে জুতোও। কিন্তু সাইকেল চালানোর মতো রাস্তা কই? কাদামাখা পথে জুতোই বা পড়ব কী করে? সেই প্রশ্ন তুলে রাস্তা তৈরির দাবি জানিয়ে স্থানীয় বিধায়ককে চিঠি দিল ময়ূরেশ্বরের বাঁধ গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা।

Advertisement

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, গ্রাম থেকে বাইরে যাওয়ার রাস্তা বলতে সম্বল শুধু আলপথ। ৩-৪ কিলোমিটার সে পথ পেরিয়ে সেচখাল পাড়ে পৌঁছোনোর পরে চলাচলের রাস্তা পান গ্রামের মানুষ। গ্রামের ভিতরের অবস্থাও তথৈবচ। অধিকাংশ রাস্তাই এঁটেল মাটির। ফি বর্ষায় তা হাঁটু সমান কাদায় ঢেকে যায়। বহু পরিবারকে ওই কাদা ঠেলেই যাওয়া-আসা করতে হয়। বর্ষার পরেও কাদা শুকিয়ে রাস্তা চলাচল যোগ্য হতে লেগে যায় কয়েক মাস। গ্রাম থেকে বাইরে যাওয়ার বিকল্প যে রাস্তাটি রয়েছে সেটি লাগোয়া কলেশ্বর পঞ্চায়েত এলাকার। নিজেদের পঞ্চায়েত এলাকার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রক্ষাকারী রাস্তা না থাকায় গ্রামের বাসিন্দাদের অনর্থক ১০-১২ কিলোমিটার ঘুরপথে স্কুল-কলেজ, বাজার-হাট, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছতে হয়। বিধায়ককে চিঠিতে সে সব খুলে বলেছে ছাত্রছাত্রীরা। দাবি তুলেছে প্রতিকারের।

লোকপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির সৌরভ দে, একাদশ শ্রেণির লিপিকা দাস, রিনা দাসেরা জানাল, তারা স্কুল থেকে সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল পেয়েছে। কিন্তু বর্ষায় তো বটেই, শুধু মাত্র রাস্তা না থাকার জন্যে অন্য সময়েও তারা সাইকেল ব্যবহার করতে পারে না। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কাবেরি দাস, চতুর্থ শ্রেণির রিয়া দাসদেপ কথায়, ‘‘বাড়ি থেকে বেরোলেই কাদা। তাই বেশির ভাগ দিনই জুতো পড়ে স্কুল যাওয়া সম্ভব হয় না। জুতো তোলাই থাকে। আত্মীয়ের বাড়ি গেলে পড়ে যাই।’’

Advertisement

নিমাই দাস, অতুলকুমার দে জানান, শুধু ছোটরা নয়, তাঁরাও বহুবার প্রশাসনের সকল স্তরে রাস্তার জন্যে আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। নিমাইয়ের কথায়, ‘‘এখন দেখা যাক ছোটদের কথায় কাজের কাজ হয় কি না!’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, বাঁধ গ্রামে শতাধিক পরিবারের বাস। গ্রামের ৪০ জন ছাত্রছাত্রী উচ্চ বিদ্যালয় ও ৩০ জন ছাত্রছাত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। গ্রামেই রয়েছে প্রাথমিক স্কুল। কিন্তু প্রাথমিকের পাঠ চুকলে পড়ুয়াদের যেতে হয় প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে লোকপাড়া কিংবা ৭ কিলোমিটার দূরের দাসপলসা উচ্চ বিদ্যালয়ে।

রাস্তা নেই কেন?

ঢেকা পঞ্চায়েতের প্রধান মিঠু গড়াইয়ের জবাব, ‘‘ওই গ্রামে রাস্তা নির্মাণ খুব জরুরি। কিন্তু জায়গার অভাবে রাস্তা গড়া যায়নি।’’

আজ এই সময়ে দাঁড়িয়েও নিজের বিধানসভা এলাকার এক গ্রামে রাস্তা নেই জেনে বিস্মিত স্থানীয় বিধায়ক অভিজিৎ রায়। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সত্যিই, এটা ভাবতেই অবাক লাগছে।’’ বিধায়ক পড়ুয়াদের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জায়গা জোগাড়ের পরে দ্রুত রাস্তা তৈরির ব্যবস্থা করবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement