বাক্যহারা: ছেলেকে হারিয়ে কান্না। (ইনসেট) পার্থ দাস। শনিবার শান্তিনিকেতনে। নিজস্ব চিত্র
বিশ্বভারতীর ছাত্রাবাসে নিজের ঘরেই গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র পার্থ দাসের (১৯) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। কেন এমন ঘটনা, তা নিয়ে ধন্দে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, পড়ুয়া থেকে শুরু করে পার্থর পরিবারের লোকজনেরা। তবে শনিবার বিকেল পর্যন্ত পুলিশে কোনও অভিযোগ হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, এটি আত্মহত্যা।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্থ শ্রীপল্লি ছাত্রাবাসের (নন্দ সদন) দোতলায় থাকতেন। শিক্ষাভবনের আর এক পড়ুয়াই ছিলেন একমাত্র রুমমেট। আবাসিকেরা পুলিশকে জানিয়েছেন, শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে হস্টেল থেকে একটু এগিয়ে খাবার খেতে গিয়েছিলেন ওই রুমমেট। টাকা দেওয়ার সময় দেখেন মানিব্যাগ নেই। দোকানে বসেই পার্থকে ফোন করেন তিনি। তখন প্রায় সকাল ন’টা। পার্থর সঙ্গে সেই শেষ কথা। ফিরে এসে ওই রুমমেট দেখেন ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। ডাকাডাকির পরেও দরজা না খুললে সন্দেহ হয়। ততক্ষণে বিষয়টি জেনে গিয়েছেন বাকি আবাসিকেরাও। এর পরেই ব্যালকনি থেকে ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান আবাসিকেরা। টোটো দেখে দ্রুত পিয়ার্সন মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে গেলে পার্থকে মৃত বলে জানানো হয়।
দুপুরের মধ্যেই রামপুরহাটের বাড়ি থেকে পার্থর বাড়ির লোকজন এসে পৌঁছন। বাবা মদন দাস জানান, শুক্রবার সকালে আজিমগঞ্জ-বর্ধমান প্যাসেঞ্জার ট্রেনে তুলে দিয়েছিলেন ছেলেকে। পার্থ বাবাকে বিশ্বভারতী ফিরে একটি আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তার পরে রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ পার্থর সঙ্গে কথা হয় পরিবারের। তখনও ছেলে স্বাভাবিক ছিলেন বলেই মদনবাবুর দাবি। ছেলের অপমৃত্যুর কথা জেনে ভেঙে পড়েছেন মা। শুধুই বলে যাচ্ছিলেন, ‘‘কেন যে ওকে আসতে দিলাম!’’
শনিবার দুপুরে ময়না-তদন্তের জন্য দেহ বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে সিআই অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এবং শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ আধিকারিক রুমমেটকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীপল্লি ছাত্রাবাসে যান। পার্থর ঘরে তল্লাশিও চালান। একটি মেয়ের সঙ্গে কিছু ছবি মেলে। পুলিশ সেগুলো নিয়ে গিয়েছে। আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে ছাত্রাবাসের ওই ঘরটি। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিথীকা ছাত্রীনিবাসে পাঠভবনের এক ছাত্রীর অপমৃত্যু হয়েছিল। আবাসিকদের কারও দাবি, ওই ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল পার্থর। কিন্তু, এত বছর আগের ঘটনার সঙ্গে পার্থর অপমৃত্যুর কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না সহপাঠীরাই। তাঁদের কথায়, ‘‘পার্থ একটু চাপা স্বভাবের ছিল ঠিকই। কিন্তু, কখনও ভেঙে পড়তে দেখিনি। বরং অন্যদের সামলাতো। ঠিক কী হয়েছে পুলিশের তদন্ত করা উচিত।’’
মদনবাবু জানিয়েছেন, কোনও দিন বাড়ি থেকে পার্থকে কোনও চাপ দেওয়া হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব সৌগত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনাটি সামনে আসার পরেই দ্রুত পুলিশকে জানানো হয়েছে।’’